শুক্রবার বিকালে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজে বসে 'জল্লাদখানা' বধ্যভূমিতে নিহতদের পরিবারের সদস্য ও প্রত্যক্ষদর্শীদের সাক্ষ্য গ্রহণ শেষে সাংবাদিকদের তিনি এ কথা বলেন।
সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের আদেশে গঠিত এই বিশেষজ্ঞ কমিটির সদস্যরা শুক্রবার বিকাল ৩টা থেকে সাড়ে ৫টা পর্যন্ত মোট ২১ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করেন। ইউনির্ভাসিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি চিটাগাং (ইউএসটিসি) প্রতিষ্ঠাতা জাতীয় অধ্যাপক নুরুল ইসলামও কমিটির কাছে লিখিত সাক্ষ্য দেন।
শাহরিয়ার কবির বলেন, শুধুমাত্র ইউএসটিসির প্রতিষ্ঠাতা নুরুল ইসলাম ছাড়া অন্য সবাই বলেছেন, বিশ্ববিদ্যালয়টি যেখানে ভবন নির্মাণ করছে সেখানে বধ্যভূমি ছিল।
"আর নুরুল ইসলাম বলেছেন, নির্মাণাধীন ভবনটির স্থানে বধ্যভূমি ছিল না। ছিল আশেপাশে।"
সাক্ষ্য দেওয়া শেষে উপস্থিত সাংবাদিকদের নুরুল ইসলাম বলেন, "আমি আইন অনুসারে জমি কিনেছি এবং বধ্যভূমির জন্য ১০ গণ্ডা জমি আগেই ছেড়ে দিয়েছি।"
পাহাড়তলি এলাকায় বধ্যভূমি হিসেবে পরিচিত জমিতে ২০০৭ সালে একটি ভবন নির্মাণের কাজ শুরু করে ইউএসটিসি কর্তৃপক্ষ। এর বিরুদ্ধে ২০১০ সালে একটি রিট আবেদনে ওই ভবন নির্মাণে স্থগিতাদেশ দেয় আদালত।
গত ৬ জুন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের আদেশে এ বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করা হয়। তদন্ত শেষে পাহাড়তলি বধ্যভূমির স্থান নির্ধারণ করে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য কমিটিকে ৯ অক্টোবর পর্যন্ত সময় দিয়েছে আদালত।
সাত সদস্যের এ বিশেষজ্ঞ কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন- সাবেক সেনাপ্রধান কে এম সফিউল্লাহ, গবেষক মুনতাসির মামুন, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপ সচিব ও কমিটির সদস্য সচিব সৈয়দ মুজিবুল হক, চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক ফয়েজ আহমদ, মুক্তিযুদ্ধ গবেষক ডা. মাহফুজুর রহমান ও ইউএসটিসির নিবন্ধক অধ্যাপক শামসুদ্দোহা।
শাহরিয়ার কবির বলেন, সাক্ষ্যদাতাদের বক্তব্য অনুসারে প্রায় পৌনে ২ একর এলাকা জুড়ে বধ্যভূমি ছিল। পুরো এলাকা জুড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে ছিল মানুষের মাথার খুলি, কঙ্কাল ও হাড়গোড়।
বিশেষজ্ঞ কমিটি শুক্রবার সকালে পাহাড়তলি বধ্যভূমি পরিদর্শনে যায়। সে সময় উপস্থিত নিহতদের স্বজনরা কমিটির সদস্যদের কাছে ১৯৭১ সালের ১০ নভেম্বর পাহাড়তলিতে সংঘটিত গণহত্যার বিবরণ দেয়।
শাহরিয়ার কবির বলেন, "সাক্ষ্যদাতারা বলেছেন, এ হত্যাকাণ্ডের কয়েক মাস পরেও সংলগ্ন খালে মাছ ধরতে গিয়ে জালে উঠে এসেছিল মানুষের কঙ্কাল। ১৯৭১ সালের এপ্রিল মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত এ স্থানে বাঙালিদের ধরে এনে হত্যা করেছে বিহারিরা।
মো. সোলায়মান নামের এক সাক্ষ্যদাতা স্বাধীনতার পর পত্রিকায় প্রকাশিত পাহড়তলি বধ্যভূমিতে ছড়িয়ে থাকা কঙ্কালের ছবি কমিটির সামনে উপস্থাপন করেন।
ছবি ও সাক্ষ্যদাতাদের বক্তব্যের বিষয়ে জানতে চাইলে শাহরিয়ার কবির বলেন, "প্রত্যক্ষদর্শীদের বক্তব্য অনুসারে এখানে প্রায় ১০ হাজার মানুষকে হত্যা করা হয়। এ ধারণা সত্যি হলে এটাই বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় বধ্যভূমি। দেশের সর্ববৃহৎ বধ্যভূমি হিসেবে এটিকে রক্ষায় সরকারের বিশেষ উদ্যোগ নেওয়া উচিত।"
তিনি বলেন, আদালত সারাদেশের সব বধ্যভূমি ১৯৭১ সালে যে অবস্থায় ছিল সে অবস্থায় সংরক্ষণের নির্দেশ দিয়েছে। এই নির্দেশ অনুসারে কোনো বধ্যভূমির জমি কোনো ব্যক্তির মালিকানাধীন থাকলে তা সরকারের অধীনে নিতে হবে। পাশাপাশি সব বধ্যভূমিতে একই আঙ্গিকের স্মৃতিসৌধ নির্মাণ করতে হবে।
সাইফুল করিম, উম্মে আতিয়া চৌধুরী, কাজী আমিনুল ইসলাম, মো. আব্দুল ওয়াদুদসহ কয়েকজন সাক্ষ্যদাতা সাংবাদিকদের বলেন, যেখানে ইউএসটিসি ভবন নির্মাণ করছে, সেখানেই ১৯৭১ সালের ১০ নভেম্বর হত্যাকাণ্ডের পর নিহতদের লাশ ফেলে রেখেছিল পাকিস্তানি বাহিনী।
বিশেষজ্ঞ কমিটির সদস্যরা শনিবার সকাল সাড়ে ৯টায় চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজে আরো প্রত্যক্ষদর্শী ও শহীদ পরিবারের সদস্যদের সাক্ষ্য গ্রহণ করবেন।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
0 comments:
Post a Comment