কালকিনি সৈয়দ আবুল হোসেন কলেজের ভূগোল বিভাগের সহকারী অধ্যাপক আফরোজা বেগম জানান, শামুক নিধনের ফলে প্রাকৃতিক ভারসাম্য ও খাদ্যশৃঙ্খলা নষ্ট হয় এবং জমির উর্বরতাশক্তি কমে যায়। সব মিলিয়ে এতে পরিবেশ ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার খাসেরহাট, স্নানঘাটা, শশীকর, ডাসার, নবগ্রাম, রাজদী, মিয়ারহাট, সমিতিরহাট, আলীপুর, শিকার মঙ্গল, কৃষ্ণনগর, কাশিমপুর, শাদিপুর, কাষ্টগড়, তালিমপুর, গোপালপুরসহ শতাধিক স্থানে শামুক বিক্রি করা হয়। প্রতিদিন একজন এক থেকে দেড় বস্তা শামুক কুড়াতে পারে। ব্যাপারীদের কাছে তাঁরা প্রতি বস্তা শামুক ৩০০-৪০০ টাকায় বিক্রি করেন। এ উপজেলা থেকে প্রতিদিন ৫০০-৬০০ বস্তা শামুক ট্রাকযোগে খুলনা ও বাগেরহাটে পাঠানো হয়। এর বাজারমূল্য দু-তিন লাখ টাকা।
বাঁশগাড়ী এলাকার স্নানঘাটা গ্রামের গিয়াস উদ্দিন বলেন, ‘এমনিতেই বর্ষা মৌসুমে কোনো কাজ নাই, তাই শামুক টোকাই। শামুক টোকানোর জন্য নৌকা লাগে, আর যাগো নৌকা নাই তারা পানিতে ভিইজ্যা শামুক টোকায়।’
নবগ্রাম এলাকার শশীকর গ্রামের হারাধনের ছেলে চতুর্থ শ্রেণীর ছাত্র শুভঙ্কর বলে, ‘স্কুল এহোন বন্ধ, তাই মার লগে হেই ভোরে হামুক টোহাইতে যাই। অর্ধেক বোস্তা হামুক টোহাই। মোর আব্বায়ও হামুক টোহায়।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শামুক ব্যবসায়ী বলেন, ‘আমরা আড়তদারের কাজ করি। বস্তাপ্রতি ৫০০-৬০০ টাকা দেওয়া হয়। শামুক চিংড়ির খাদ্য হিসেবে ব্যবহূত হয়। অনেকে আমাদের কাছ থেকে শামুক কুড়ানোর জন্য দাদন (আগাম টাকা) নেয়।’
পরিবেশবাদী সংগঠন ফ্রেন্ডস অব নেচারের পরিচালক রাজন মাহমুদ বলেন, ‘শামুক আমাদের পরিবেশ রক্ষার একটি উপাদান। কিন্তু আমাদের দেশের লোকজন অর্থের লোভে তা নিধন করে যাচ্ছে। শামুক নিধনের ঘটনা পরিবেশের জন্য হুমকি সৃষ্টি করছে।’
উপজেলার উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা বখতিয়ার শিকদার জানান, শামুক নিধনের কারণে মাটি, ফসল ও পরিবেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. শাহ রিয়াজ জানান, পরিবেশ ক্ষতিগ্রস্ত হবে এমন কোনো কাজ করা ঠিক নয়। এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
0 comments:
Post a Comment