বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম প্রতিবেদক
ঢাকা, অগাস্ট ০৫ (বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম)- ঘরে বসেই দেখা যাবে জাদুঘরে রক্ষিত ইতিহাসের বিভিন্ন নিদর্শন। এ লক্ষ্যে জাতীয় জাদুঘর সম্পূর্ণ ডিজিটাল ব্যবস্থা সমৃদ্ধ করে গড়ে তোলা হচ্ছে।
জাদুঘরের বিভিন্ন নিদর্শন এ বছরই দেখা যাবে ইন্টারনেটে।
জাতীয় জাদুঘর ও চারটি শাখা জাদুঘরের এক লাখ নিদর্শনের অবজেকটিভ আইডেন্টিফিকেশন সিস্টেম (অবজেক্ট আইডি) তৈরি করা হচ্ছে বাংলা ও ইংরেজি ভাষায়। সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীনে জাতীয় জাদুঘর কর্তৃপক্ষ গত বছরের নভেম্বর থেকে এ নিয়ে কাজ করছে।
২০১০ সালের ১৫ মার্চ জাদুঘর কর্তৃপক্ষ চাহিদা পাঠালে ওই বছরের নভেম্বরে 'বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর তথ্য যোগাযোগ ও ডিজিটালাইজেশন কার্যক্রম' শীর্ষক কর্মসূচি অনুমোদন দেয় সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়। কর্মসূচি বাস্তবায়নের সময় নির্ধারণ করা হয়েছে ২০১০ সালের নভেম্বর থেকে ২০১২ সালের জুন মাস পর্যন্ত।
কর্মসূচি পরিচালক ড. শিখা নূর মুনসী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, ইতোমধ্যে ১২ হাজার নিদর্শনের ডিজিটাল শনাক্তকরণ হয়েছে। সকল নিদর্শন শনাক্তকরণের পর সফটওয়্যারের মাধ্যমে চূড়ান্তভাবে তা ডাটাবেজে সংরক্ষণ করা হবে। জাতীয় জাদুঘরের নির্বাচিত একশ নিদর্শন চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যেই ইন্টারনেটে দেখা যাবে বলে জানান তিনি।
তিনি আরো বলেন, কর্মসূচি বাস্তবায়নে চলতি বছরের ৩ জানুয়ারি দুই কোটি ৭৪ লাখ ৯৪ হাজার টাকা ছাড় দিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়।
নিদর্শন ছাড়াও জাতীয় জাদুঘরের মানব সম্পদ, তথ্য ব্যবস্থাপনা, হিসাব ব্যবস্থাপনা, ডাইনামিক ওয়েবসাইট, গ্রন্থাগার ও আর্কাইভ ব্যবস্থাপনার সমন্বয়ে ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেম (এমআইএস) সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট করা হবে বলে জানান শিখা।
তিনি বলেন, এমআইএস সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট এবং সংস্থাপনের লক্ষ্যে লাইসেন্স সফটওয়্যার, কম্পিউটার সার্ভার, নেটওয়ার্কিং, ইন্টারনেট সংযোগ ইত্যাদি স্থাপনের মধ্য দিয়ে ডিজিটাল জাদুঘর গড়ে তোলা হচ্ছে।
যেভাবে তৈরি হচ্ছে ডাটাবেজ
কর্মসূচির পরিচালক শিখা জানান, ১৬ ডিজিটের অবজেক্ট আইডি নম্বরে জাতীয় জাদুঘরের ৮৬ হাজার এবং আহসান মঞ্জিল জাদুঘর, সিলেটের ওসমানী জাদুঘর, চট্টগ্রামের জিয়া স্মৃতি জাদুঘর এবং ময়মনসিংহের শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন সংগ্রহশালার আরো ১৪ হাজার নিদর্শনের বিস্তারিত বিবরণ অন্তর্ভূক্ত করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, এ জন্য প্রত্যেকটি নিদর্শনের ডিজিটাল ছবি তোলা হয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ নিদর্শনগুলোর ক্ষেত্রে চার কোনা থেকে তোলা পৃথক ছবি ওয়েবসাইটে দেখা যাবে।"
তিনি বলেন, ৩১টি শনাক্তকারী নির্ণায়কের মাধ্যমে নিদর্শন শনাক্তকরণ পত্র তৈরি করা হয়েছে। এতে নিদর্শনের নাম, ক্রমিক নম্বর, তৈরির সময়, নির্মানকারীর নাম, দাতার নাম, দেশ, নিদর্শন প্রাপ্তিস্থান, ঐতিহাসিক তাৎপর্যসমূহ উল্লেখ করা হচ্ছে।
এছাড়া প্রতিটি শনাক্তকারী নির্ণায়কের সঙ্গে একাধিক সংযুক্তি (লিঙ্ক) দেওয়া থাকবে। শনাক্তকরণের কাজ শেষ হলে তা সফটওয়্যারের মাধ্যমে ডাটাবেজে ডিজিটাল অটোমেশন করা হবে।
বাস্তবায়নের দু'ধাপ
প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী 'পরামর্শক সেবা' ও 'হার্ডওয়্যার' এই দুই ধাপে বাস্তবায়িত হচ্ছে পুরো কর্মসূচি। একজন প্রধান পরামর্শকের অধীনে পাঁচ জন জাদুঘর এবং প্রতœ বিশেষজ্ঞ সফটওয়্যার, অবজেকটিভ আইডি, গ্রাফিক ডিজাইন এবং ডাটাবেজ তৈরি করছেন। অন্য ধাপে সার্ভার, কম্পিউটার, প্রিন্টার, ডিজিটাল ক্যামেরাসহ অন্যান্য কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে।
ওয়েবসাইটেই জাদুঘর
২০১২ সালের জুনে আনুষ্ঠানিকভাবে 'ডায়নামিক' ওয়েবসাইট উদ্বোধনের কথা থাকলেও চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যেই নির্বাচিত একশ নিদর্শন দেখা যাবে জাতীয় জাদুঘরের ওয়েবসাইটে। এর ঠিকানা- http://bangladeshmuseum.gov.bd/site
কর্মসূচি পরিচালক শিখা জানান, জাদুঘর ব্যবস্থাপনার আন্তর্জাতিক নিয়ম মেনেই প্রাথমিকভাবে ওয়েবসাইটে নির্বাচিত একশটি গুরুত্বপূর্ণ নিদর্শন আপলোড করা হবে।
তিনি বলেন, সকল নিদর্শন ওয়েবসাইটে দিলে নিরপত্তা বিঘিœত হতে পারে। তাই পর্যায়ক্রমে নিদর্শন সংখ্যা বাড়ানো হবে। এছাড়া প্রদর্শিত নিদর্শনসমূহেও প্রতিনিয়ত পরিবর্তন আনা হবে।
তবে গবেষক, পর্যবেক্ষক বা দর্শনার্থীরা যথাযথ কারণ উল্লেখ করে আবেদন করলে তারা সকল নিদর্শন দেখার সুযোগ পাবেন বলে জানান তিনি।
বন্ধ হবে মূর্তি চুরি
জাতীয় জাদুঘরের নিদর্শনগুলো ডাটাবেজে অন্তর্ভূক্ত হওয়ার পর এসব নিদর্শন চুরি বন্ধ হয়ে যাবে বলে মনে করেন জাতীয় জাদুঘরের মহাপরিচালক প্রকাশ চন্দ্র দাস।
তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ডাটাবেজে নিদর্শনগুলো অন্তর্ভূক্ত হওয়ার পর জাদুঘরের ৪৪টি গ্যালারিতেই ক্লোজ সার্কিট (সিসি) ক্যামেরা লাগানো হবে। একটি নিয়ন্ত্রণ কক্ষ থেকে তা সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণ করা হবে।
এ ব্যাপারে কর্মসূচি পরিচালক শিখা বলেন, এর আগে জাতীয় জাদুঘর থেকে মূর্তি চুরির ঘটনা ঘটেছে। নিদর্শনগুলোর ডিজিটাল অটোমেশন হলে প্রত্যেকটি নিদর্শনের আলাদা শনাক্তকরন নম্বর থাকবে। ফলে কেউ গ্যালারি থেকে নিদর্শন সরালে সঙ্গে সঙ্গেই তা সনাক্ত করা যাবে।
দীর্ঘ ৯৭ বছরে জাদুঘরের নিদর্শনগুলোর 'যথাযথ' ডকুমেন্টেশন না থাকায় মূর্তি চুরির ঘটনা ঘটেছে বলে মনে করেন তিনি।
তিনি বলেন, এর আগে নিদর্শনের কোনো শনাক্তকরন নম্বর না থাকায় চুরি হওয়ায় পর বোঝা যায়নি কোনটি চুরি হয়েছে। সকল নিদর্শন ডাটাবেজে সংরক্ষিত হলে চুরি বন্ধ হয়ে যাবে।
আলোয় ফুঁটবে বাংলাদেশ
জাদুঘরের ডিজিটালাইজেশন শেষ হলে ৩৮ নম্বর গ্যালারিতে প্রতিদিন তিনটি বিশেষ প্রদর্শনী হবে। এজন্য ৩৭-৪০ নম্বর গ্যালারিকে 'মুক্তিযুদ্ধ গ্যালারি' নামে বিশেষভাবে সাজানো হয়েছে।
পলাশীর যুদ্ধ থেকে মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, মহান ভাষা আন্দোলন, বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণসহ বাঙালির ধারাবাহিক 'জীবন্ত' ইতিহাস প্রজেক্টরের মাধ্যমে তুলে ধরা হবে বর্ণিল আলোর সঙ্গে উচ্চ শব্দে।
একশ দর্শণার্থী একসঙ্গে বিশেষ এই প্রদর্শনী উপভোগ করতে পারবেন। এজন্য তাদেরকে অতিরিক্ত একটি টিকেট কাটতে হবে।
অনলাইনেই টিকেট
অনলাইনের মাধ্যমেই জাতীয় জাদুঘরের টিকেট সংগ্রহ করা যাবে বলে জানিয়েছেন জাদুঘরের মহাপরিচালক প্রকাশ চন্দ্র দাস।
তিনি বলেন, অনলাইনে কিভাবে টিকেট বিক্রি করা যায় সে বিষয়ে একটি মোবাইল ফোন কোম্পানীর সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। শিগগিরই এ ব্যাপারে চুক্তি করা হবে।
ঘরে বসেই যে কেউ টিকেট কাটতে পারবেন। ফলে টিকেটের জন্য কাউকেই আর লাইনে দাঁড়াতে হবে না, যোগ করেন প্রকাশ।
তিনি বলেন, নিদর্শনগুলো স্থায়ীভাবে সংরক্ষণের জন্য ডাটাবেজে অন্তর্ভূক্তির কোনো বিকল্প নেই। রূপকল্প-২০২১ এবং সরকারের ই-গভর্নেন্স বাস্তবায়নের লক্ষ্যেই এ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
এর ফলে বর্তমান এবং আগামী প্রজন্ম সহজেই জাতীয় জাদুঘর সম্পর্কে জানতে পারবে। জাদুঘরকে জনমুখী করতে একে ওয়েবসাইটে তুলে ধরার বিকল্প নেই।
খুব শিগগিরই 'স্যুভেনির উৎসব' এর আয়োজন করা হবে বলে জানান জাদুঘরের মহাপরিচালক। এই উৎসবে জাদুঘরের বিভিন্ন নিদর্শনের রেপ্লিকা, ভিউকার্ড, চাবির রিং প্রদর্শন ও বিক্রি করা হবে।
১৯১৩ সালের ২০ মার্চ প্রতিষ্ঠিত হয় জাতীয় জাদুঘর। ওই বছরের ৭ আগস্ট এর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয়। ১৯৮৩ সালের ১৭ নভেম্বর এটিকে জাতীয় জাদুঘরের মর্যাদা দেওয়া হয়। ২০১৩ সালের ৭ আগস্ট জাতীয় জাদুঘর শতবর্ষে পদার্পণ করবে।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
0 comments:
Post a Comment