জ্বরে কাঁপছে রহিমা। কাঁপুনি থামাতে নানি স্বরূপজান নিজের বুকের সঙ্গে জোরে চেপে ধরে আছেন নাতনিকে। ‘১৩ দিন হলো রহিমার জ্বর। জ্বর নামার কোনো নাম নেই। অসুস্থ মেয়েটার জন্য কাজে যাওয়ারও কোনো সুযোগ নেই। কাজে না গেলেও তো চলে না।’—মলিন মুখে বলছিলেন স্বরূপজান।
রহিমার মা গেছেন কাজে। টাকার অভাবে রহিমাকে ওষুধ কিংবা চিকিত্সকও দেখাতে পারেননি। দিন বাড়তে থাকে, কিন্তু রহিমার জ্বর কমে না। নিজে আর সামাল দিতে পারবেন না ভেবে যশোরে বাবা আমজাদ হোসেনকে খবর দেন স্বরূপজান। মেয়ের সমস্যার কথা শুনেই আর দেরি না করে যশোর থেকে ঢাকার ওই ফুটপাতেই ছুটে আসেন বাবা। বাবাকে দেখে যেন একটু স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেন স্বরূপজান। নাতনি রহিমার চিকিত্সা করানোর কথাও এখন ভাবছেন তিনি।
১৫ বছর আগের কথা। স্বরূপজানকে ছেড়ে চলে যান তাঁর স্বামী। তারপর আর কোনো উপায় না পেয়ে মেয়েকে নিয়ে পাড়ি জমান ঢাকায়। ঘর-পরিবার সবকিছু ছেড়ে কারওয়ান বাজারের এই ফুটপাতেই এখন থিতু হয়েছেন তিনি ও তাঁর মেয়ে।
কারওয়ান বাজারের কাঁচাবাজারের সামনে ট্রাক থেকে যখন সবজি নামানো হয় তখন অনেক সবজিই নিচে পড়ে যায়। সেই সব সবজি কুড়িয়ে, পরে আবার বিক্রি করেন তাঁরা। ওই সবজি বেচে যা আয় হয়, তাই দিয়েই চলে সংসার। আর রাত হলেই ঘুমের জন্য তাঁদের একমাত্র আশ্রয় কারওয়ান বাজারের সামনের ফুটপাত। এখানেই ওঁদের আনন্দ, দুঃখ, শোক, এখানেই ওঁদের পুরো জীবন। ফুটপাতে খোলা আকাশের নিচে শুয়ে শুয়ে স্বরূপজানেরাও দেখেন আগামীর স্বপ্ন, করেন ভবিষ্যত্ নির্মাণের পরিকল্পনা।
prothom-alo
0 comments:
Post a Comment