"মানুষ সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ জীব"। আল্লাহ মানুষকে সর্বোত্তম ভাবে সৃষ্টি করেছেন। আল্লাহ মানুষকে চোখ দিয়েছেন, ভালো-মন্দ দেখার জন্য, নাক দিয়েছেন, সুগন্ধ-দূর্গন্ধ কে চেনার জন্য এবং শ্বাস প্রশ্বাস নেওয়ার জন্য, মুখ দিয়েছেন, খাবারের জন্য এবং কথা বলার জন্য। কান দিয়েছেন, কথা শুনার জন্য। মস্তিষ্ক দিয়েছেন চিন্তা করার জন্য এবং ভালো-মন্দ উপলব্ধি করার জন্য, অনুভূতি দিয়েছেন অনুভব করার জন্য। আবেগ দিয়েছেন সমব্যাথায় ব্যাথিত হওয়ার জন্য, মানুষকে ভালোবাসার জন্য। আল্লাহ আমাদেরকে "আস্রাফুল মুকলোকাত" হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য সব গুনে গুনান্বিত করে পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন।।
তারপরও আমরা কি সর্বদা সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ জীবের মত আচরণ করি? আমরা জানি পৃথিবীর সমস্ত ধর্মে অনেক বার বলা হয়েছে " মিথ্যা বলা মহাপাপ", তারপরও কি আমরা মিথ্যা বলা বন্ধ করতে পেরেছি? আমরা কারনে-অকারনে হরেক রকম মিথ্যা বলি। আমরা জানিও না যে এই মিথ্যা টা মহাপাপে পরিণত হচ্ছে। আমরা জেনে - না জেনে, কৌতুক বশত অনেক মিথ্যা বলি, যা আমাদের অগোচরে মহাপাপে পরিণত হয়।
প্রিয় পাঠক ভাবছেন, আমি আপনাদের ঞ্জান দিচ্ছি, না সেই রকম দু:সাহস আমার নেই। আমি এখানে চেষ্টা করছি, আমরা যে প্রতিনিয়ত না জেনে মহাপাপ করছি তার একটা তালিকা দেয়ার।কিছু ঘটনা উল্লেখ করে আমি দেখাতে চেষ্টা করবো আমরা কিভাবে পাপ কাজটা অনায়েসে করে যাচ্ছি। আমার এই লেখার পর যদি একজনও এর থেকে বিরত থাকার চেষ্টা করে, তাহলেই আমার লেখার স্বার্থকতা।
বর্তমান যুগ তথ্য প্রযুক্তির যুগ। আমরা নানা ধরনের প্রযুক্তি ব্যবহার করি, যা আমাদের জীবন করে তুলেছে অনেক সহজ এবং প্রানবন্ত। আমরা এই প্রযুক্তি ব্যবহার করতে গিয়ে প্রায়ই মিথ্যে বলে থাকি। যেমন:
মোবাইলে মিথ্যা বলা:
আমাদের দৈনন্দিন জীবনে মোবাইল একটা যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম। আমরা আধুনিক তথ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে অনায়াসে যে কোনো দূরত্বের মানুষের সাথে কথা বলতে, যোগাযোগ করতে পারি। এই যোগাযোগ স্থাপনের ক্ষেতে আমরা হরহামেসা মিথ্যা বলি। যা আমার অজানতেই মহাপাপে পরিণত হচ্ছে। আমরা বাসায় থেকে বলি রওনা হয়েগেছি, বা কোনো একটা জায়গায় যাওয়ার কথা ৫টায়, আমি ৫টায় বাসা থেকে বের হয়ে বলতেছি, রাস্তায় অনেক ট্রাফিক জ্যাম, এইরকম হাজার ধরনের অপ্রয়োজনীয় মিথ্যা আমরা বলি, যা আমাদের অগোচরে মহাপাপে পরিণত হচ্ছে, আমরা কি একটু সচেতন হলে পারি না এই পাপ কাজটি থেকে বিরত থাকতে?
মোবাইলের মাধ্যমে ছেলে-মেয়ে মিথ্যা বলে বাবা-মার সাথে, স্ত্রী বলে স্বামীর সাথে, স্বামী বলে স্ত্রীর সাথে, বন্ধু বলে বন্ধুর সাথে, অফিসে জুনিয়র সিনিয়রের সাথে, সিনিয়র জুনিয়রের সাথে, সর্বলা চলছে অপ্রয়োজনীয় মিথ্যার বলার মহাউত্সব। এই মিথ্যাটা যে আমাদের অজানতে মহাপাপে পরিণত হচ্ছে তা আমরা নির্দ্বিধায় ভুলে যাচ্ছি। আমরা কি পারি না এর থেকে নিজে কে বিরত রাখতে? এতে কি আমদের জীবনের অনেক ক্ষতি হবে?
কৌতুক করে মিথ্যা বলা:
আমরা অনেকে মজা করার জন্য অনেক সময় বানিয়ে মিথ্যা বলি। অন্যকে মজা দেয়ার জন্য নিজে কাল্পনিক গল্প বানাই, যা আমি জানি না , তা জানি বলে জাহির করতে গিয়ে অনেক সময় হাজারটা মিথ্যা বলি। এতে আমাদের জীবনের কোনো পরিবর্তন আসে না কিন্ত হিসাবের খাতায় মিথ্যায় ভরে যায়। এই মিথ্যাটা যে একটা মহাপাপ সেটা আমরা মনে রাখি না।
আড্ডায় মিথ্যা:
বন্ধুদের আড্ডায় আমরা হরহামেসা কারন ছাড়াই মিথ্যা বলি, নিজেকে বুদ্ধিমান জাহির করার জন্য মিথ্যা বলি। আমরা কোনো ঘটনা না দেখেও বলার সময় ক্রেডিট নেয়ার জন্য মিথ্যা বলি। কোনো কাজ না করেও আমরা নিজেকে চালাক বানানোর ব্যার্থ চেষ্টায় মিথ্যা বলি। মিথ্যা আমাদের আড্ডায় একটা প্রানবন্ত বস্তুতে পরিণত হয়। এটা যে একটা মহাপাপ তা আমরা বেমালুম ভুলে যাই। আমরা যেনো আড্ডা মারা সময়, গল্প করার সময় ভুলে না যাই যে, মিথ্যা বলা মহাপাপ।
অসুখের ভান করে মিথ্যা:
আমরা শিক্ষা জীবনে ও পরবর্তিতে চাকুরী ক্ষেত্রে অসুখের ভান করে অনেক মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে থাকি যা মহাপাপ। শরীর ভালো থাকা অবন্থায় আমরা অসুস্থ ভান করি, সাময়িক সুবিধার জন্য কতোবড় একটা অন্যায় করছি তা আমরা ভেবেও দেখিনা।
প্রেমিক -প্রেমিকাদের মিথ্যা:
প্রেম ভালোবাসা মানুষের জীবনের চিরন্তন একটা বেপার। আমরা নিজের ভবিষ্যত জীবনের সাথীকে খুজে পাওয়ার জন্য ভালোবাসায় জরিয়ে যাই। ভালোবাসার মূলভিত্তি হলো পারস্পারিক বিশ্বাস, আস্থা, সম্মান ও শ্রদ্ধাবোধ। এখানে মিথ্যার কোনো জায়গা নেই, অথচ সাময়িক সুবিধা নেয়ার জন্য আমরা কতোনা মিথ্যার আশ্রয় নেই। একটা ফোন কল রিসিভ করতে না পারার কারণটাও আমরা সাহস নিয়ে সত্য ভাবে বলতে পারিনা। একদিন কাজের জন্য দেখা করতে না পারলেও হাজার রকম টাল বাহানার কাহিনী তৈরী করি। ভালোবাসা কি মিথ্যার উপর টিকে থাকে না পারস্পারিক আস্থার উপর?
ণিজের ভুল স্বীকার না করে মিথ্যা বলা:
আমরা মানুষ, আর মানুষ মাত্রই ভুল করা স্বাভাবিক। আমরা অনেক সময় ছোটো ছোটো ভুল গুলা কে ঢাকার জন্য মিথ্যা বলি। হয়তো সত্য কথাটা বললেও কোনো ক্ষতি হতোনা, তারপরও আমরা মিথ্যা বলি। নিজের ভুলটা কে অস্বিকার করার জন্য হাজার রকম মিথ্যা বলে থাকি, আমরা ভুলে যাই একটা ভুল কে ঢাকার জন্য আর একটা মহাপাপ করছি।
প্রিয় বন্ধু ও পাঠকগণ, এইরকম হাজার উদাহরণ আছে আমদের জীবনে। আমরা শুধু শুধু বিনাকারনে মিথ্যা বলি। আমরা ভাবিও না যে এটা একটা মিথ্যা আর মিথ্যা বলা মহাপাপ। আমি জানি, আমরা সবাই সত্যের পুজারী, সত্য বলতে ভালোবাসি, সত্য আমাদের কাংক্ষিত, তারপরও আমরা মাঝে মাঝে কক্ষপথ থেকে বিচ্যতূ হই। ভুলে যাই মিথ্যা বলা মহাপাপ। যারা আমার এই লেখাটা পরবেন, আশা করি এখন থেকে চেষ্টা করবেন, মিথ্যা কে এড়িয়ে চলা। আমাদের জীবনটা সত্যে ভরে উঠুক সাবলীল ভাবে। সত্য হোক আমাদের জীবনের চলার পথের নিত্য সঙ্গী। আমরা নিজে নিজে মনে মনে সপথ নেই আর নয় মিথ্যা, নয় মিথ্যা কথা নিয়ে মজা, নয় মিথ্যা বলে নিজের ক্রেডিট বৃদ্ধির অপচেষ্টা। আমরা স্বাভাবিক চলবো, স্বাভাবিক ভাবে মজা করবো, যা সত্য তা বলার সাহস বুকে ধারন করবো, এই হোক আমাদের জীবনের অঙ্গীকার।
0 comments:
Post a Comment