তাঁর উদ্যোগে ‘কনসার্ট ফর বাংলাদেশ’-এর গানে গানে, কথা ও কবিতায় বিশ্বের বিভিন্ন জাতি-ধর্ম-বর্ণের মানুষের কাছে উঠে এসেছিল বাংলার স্বাধীনতাকামী মানুষের ওপর পাকিস্তানিদের অবর্ণনীয় নির্যাতনের কথা। বলা চলে, কনসার্ট ফর বাংলাদেশের চাঁদোয়ার নিচে তাঁর একক উদ্যোগে বাংলাদেশের মানুষের পাশে এসে দাঁড়িয়েছিলেন বব ডিলান, এরিক ক্ল্যাপটন, বিলি প্রেস্টন, রিঙ্গো স্টার, লিওন রাসেল, ওস্তাদ আলী আকবর, ওস্তাদ আল্লা রাখার মতো প্রখ্যাত সব কবি, গায়ক, সুরস্রষ্টা।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের ম্যাডিসন স্কয়ার গার্ডেন চত্বরে আয়োজিত সেই সংগীতানুষ্ঠান ছিল অভূতপূর্ব। কারণ, অনুষ্ঠানটি আয়োজিত হয়েছিল নির্যাতনকারী শোষকদের বিরুদ্ধে; নিরস্ত্র একটি জাতির পক্ষে সমানুভূতি নিয়ে দাঁড়ানোর আহ্বানে, একটি দেশের অগণন নিরস্ত্র মানুষের স্বাধীনতার স্বপ্ন বাস্তবায়নে পাশে দাঁড়ানোর আমন্ত্রণে। সেদিন কনসার্টের একেবারে শুরুতে বাংলাদেশের সহমর্মী রবিশঙ্কর মঞ্চে দাঁড়িয়ে ম্যাডিসন স্কয়ারে সমবেত লাখো মানুষের উদ্দেশে জানিয়ে দিয়েছিলেন তাঁর কথা; স্পষ্ট ভাষায় বলেছিলেন, ‘আমরা শিল্পী; রাজনীতিবিদ নই।’ তিনি বলেছিলেন, ‘বাংলাদেশে অত্যন্ত দুঃখজনক ঘটনা ঘটছে।’ কনসার্ট শুরু করেছিলেন ওস্তাদ আলী আকবরের সঙ্গে যুগলবন্দীতে বাংলাদেশের লোকগীতি ও পল্লিগীতির সুর থেকে তাঁর সৃষ্ট নতুন সুর ‘বাংলা ধুন’ দিয়ে। রবিশঙ্করের সেই বাংলা ধুনে যে আবেগ আর ভালোবাসা ছিল, তাঁর সেই অকৃপণ ভালোবাসার মায়ায়, সুরের জাদুস্পর্শে সহমর্মী মানুষেরা পাশে দাঁড়িয়েছিলেন বাংলাদেশের। এ দেশের মানুষের পক্ষে বিশ্বজনমত গড়ে তুলতে যে বাংলা ধুন বাজিয়েছিলেন রবিশঙ্কর, ‘বাংলাদেশ’ নামের যে গান কণ্ঠে তুলে নিয়েছিলেন তাঁর বন্ধু জর্জ হ্যারিসন, একাত্তরের সেই দিনগুলোতে পৃথিবী বেষ্টন করেছিল সেই মানবতার সুর, আওয়াজ তুলেছিল বাংলাদেশের মানুষের পক্ষে বিশ্বজনমত তৈরিতে।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনের দীর্ঘ চল্লিশটি বছর পাশাপাশি থেকে অবশেষে চিরপ্রস্থানের পথে চলে গেলেন কনসার্ট ফর বাংলাদেশে ‘বাংলা ধুন’ বাজানো সেই অকৃত্রিম বন্ধুটি। প্রথম আলো
0 comments:
Post a Comment