যুক্তরাজ্যের সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি ফ্যাসিলিটিজ কাউন্সিলের প্রধান নির্বাহী জন ওমার্সলি জানিয়েছেন, হিগস বোসনের অনুরূপ একটি কণার খোঁজ আমরা পেয়েছি। এই আবিষ্কার পৃথিবীর জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বিজ্ঞানের ইতিহাসে আজ একটা স্মরণীয় দিন।’
নতুন এ কণা গত চার দশকের মধ্যে অন্যতম বড় আবিষ্কার বলেই মনে করছেন সার্নের মুখপাত্র জো ইনকানডেলা।
পদার্থবিদ্যার যে তত্ত্বটির সাহায্যে কোনও বস্তুর ভরের ব্যাখ্যা দাঁড় করানো যায় তাকে ‘স্ট্যান্ডার্ড মডেল’ বলে। এই স্ট্যান্ডার্ড মডেলটিকে অস্তিত্বশীল হতে হলে প্রয়োজন পড়ে হিগস-বোসন কণার, যার আরেক নাম ‘গড পার্টিকেল’ বা ঈশ্বর কণা। পদার্থবিদ্যার এই স্ট্যান্ডার্ড মডেল অনুসারে, মহাবিশ্বে প্রতিটি বস্তুর ভর সৃষ্টির প্রাথমিক ভিত্তি হচ্ছে একটি অদৃশ্য কণা। বস্তুর ভরের মধ্যে ভিন্নতার কারণও এই অদৃশ্য কণাটিই। পদার্থবিজ্ঞানী পিটার হিগস ১৯৬৪ সালে তাত্ত্বিকভাবে এমন একটি কণার ধারণা দেন, যা বস্তুর ভর সৃষ্টি করে। তাঁর মতে এর ফলেই এ মহাবিশ্ব সৃষ্টি সম্ভব হয়েছে। এ কণাটিই ‘ঈশ্বর কণা’ নামে পরিচিতি পায়। হিগসের এই কণার বৈশিষ্ট্য ও স্বরূপ জানিয়েছিলেন বাঙালি বিজ্ঞানী সত্যেন্দ্রনাথ বসু। দুই বিজ্ঞানীর নামে কণাটির নাম দেওয়া হয় হিগস-বোসন। এতদিন গাণিতিক মডেল হিসেবে থাকা এই কণার অস্তিত্ব হন্যে হয়ে খুঁজছিলেন গবেষকেরা।
গত ৫ দশকে বহুবার ঈশ্বর কণার অস্তিত্ব সন্ধান করে ব্যর্থ হয়েছেন বিজ্ঞানীরা। ঈশ্বর কণার খোঁজে ইউরোপিয়ান অর্গানাইজেশন ফর নিউক্লিয়ার রিসার্চ (সার্ন) বিশাল একটি প্রকল্প শুরু করে । ফ্রান্স-সুইজারল্যান্ড সীমান্তে মাটির একশো মিটার নীচে ষোলো মাইল লম্বা এক সুড়ঙ্গে বসানো হয় লার্জ হ্যাড্রন কোলাইডার। এখানে দুটি বিপরীতমুখী অতি-পারমাণবিক কণার (প্রোটন) মধ্যে সংঘর্ষ ঘটিয়ে কৃত্রিমভাবে বিগ ব্যাং বা মহাজাগতিক বিস্ফোরণের পরবর্তী অবস্থা সৃষ্টি করা হয়। ২০১১ সালের ডিসেম্বর মাসে লার্জ হ্যাড্রন কোলাইডারে (এলএইচসি) গবেষকেরা হিগস বোসন কণা ধরতে পেরেছেন বলে প্রথম তথ্য প্রকাশ করেন। তখন থেকেই তাঁরা অসংখ্য তথ্য বিশ্লেষণ করতে শুরু করেন এবং পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে সঠিক তথ্য পাওয়ার জন্য অপেক্ষা করতে থাকেন। গবেষকেরা এসময় নতুন কণার সন্ধান পাওয়ার তথ্য পেয়েছিলেন ক্ষণিকের জন্য। কারণ হিগস বোসন কণা সৃষ্টির পর বেশিক্ষণ তা স্থায়ী হয় না। এক পর্যায়ে দুইটি প্রোটনের সংঘর্ষে একটি নতুন ও অপরিচিত কণার অস্তিত্ব টের পান তাঁরা। সংঘর্ষের ফলে সৃষ্ট এ কণার স্থায়িত্ব ছিল এক সেকেন্ডের এক লক্ষ ভাগের এক ভাগ সময়। বিজ্ঞানীরা তখনই একে ঈশ্বর কণা বলতে চাননি। আরও নিশ্চিত হতে পরীক্ষা চালিয়ে যান তাঁরা। ঈশ্বর কণার অস্তিত্ত্ব প্রমাণ হওয়ায় এবার পদার্থবিদ্যার স্ট্যান্ডার্ড মডেলের বৈজ্ঞানিক প্রমাণ হাতে পান তাঁরা। গবেষকেরা অবশ্য নতুন কণা নিয়ে আরও পরীক্ষা নিরীক্ষা চালাতে চাইছেন। তাঁরা নতুন কণাকে ঈশ্বর কণার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ কণা বলছেন বটে কিন্তু এখনই একে ঈশ্বর কণা হিসেবে বলতে চাইছেন না। তবে চার দশকের এ অধরাকে ধরতে পেরে দারুণ উল্লসিত পদার্থবিজ্ঞানীসহ তাবত্ বিশ্বের বিজ্ঞানীরা।
0 comments:
Post a Comment