৩০তম বিসিএস পরীক্ষার ফলাফলের জন্য আমরা সবাই অধীর আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করছিলাম। অবশেষে বের হলো সেই কাঙ্ক্ষিত ফলাফল। সেদিন ছিল আমার জন্মদিন। কী অদ্ভুত, তাই না? আনন্দে আমার চোখে পানি এসে গিয়েছিল। জীবনে সবচেয়ে বড় ‘বার্থ ডে গিফট’ পেলাম! আমরা অনেকেই জানি, আমাদের সীমাবদ্ধতাগুলো কোথায়। অথচ আমার মনে হয়, আমাদের মধ্যে বেশির ভাগ মানুষই আমাদের শক্তির জায়গাগুলোকে চিনতে ভুল করি। তাই আমরা সাহস করে বড় কিছু চাইতে পারি না। ব্যাপারটা যে একেবারেই সহজ, তা বলছি না।
বিসিএসের ব্যাপারে আমার এই প্যাশন কিন্তু খুব বেশি দিনের নয়। বরং অনেকের তুলনায় আমাকে অনেক কম সময় অপেক্ষা করতে হয়েছে সাফল্যের জন্য। বিসিএস পরীক্ষা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য আমি সময় নিয়েছি মাত্র এক বছর। বিসিএস পরীক্ষার জন্য আমি আমার চিন্তাভাবনা, কাজ—সবকিছুকেই এককেন্দ্রিক করে ফেলেছিলাম। মাঝেমধ্যে নিজের মনটা বিদ্রোহ ঘোষণা করত, বেঁকে বসত; তবু নিজের সঙ্গে যুদ্ধ করেছি সব সময়।
৩০তম বিসিএস ছিল আমার প্রথম বিসিএস পরীক্ষা—প্রথম প্রিলিমিনারি, প্রথম লিখিত, প্রথম ভাইভা। শুধু তাই নয়, এ চাকরিটা আমার জীবনের প্রথম চাকরি। ৩০তম বিসিএসের ভাইভা ছিল আমার জীবনের প্রথম জব ইন্টারভিউ। তাই সবকিছু মিলিয়ে আমি একটু বেশিই এক্সাইটেড! আমি সব সময় আমার স্বপ্নপূরণের জন্য সিনসিয়ার থেকেছি। তাই বোধ হয় সাফল্য এত সহজে আমার কাছে ধরা দিয়েছে।
যখন আমি চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (কুয়েট) থেকে কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিষয়ে আমার স্নাতক
শেষ করলাম, আমি তখন বুঝতে পারছিলাম না, সামনের দিনগুলোয় আমি কী করব। আমি ব্যবসা শুরু করেছিলাম। ব্যবসা, বই পড়া, বিভিন্ন সামাজিক নেটওয়ার্কে বন্ধুদের সঙ্গে অনুভূতি বিনিময় করা, ছবি দেখা, গান শোনা—এসব নিয়েই বেশ ছিলাম। এরই মধ্যে হঠাৎ মাথায় পুরোনো ভূতটা নতুন করে চাপল—লেখক হতেই হবে। ৩০তম বিসিএস পরীক্ষার বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের কদিন আগে আমার দুই বন্ধু সত্যজিৎ ও পলাশের কাছ থেকে বিসিএস সম্পর্কে জানলাম। সত্যি বলতে কি, সেদিনই বিসিএসে আমার প্রথম হাতেখড়ি। তখন আমার মনে হচ্ছিল, আমার স্বপ্নের পালাবদল হওয়ার সময় এসেছে। মনে হলো বিসিএস তথা সিভিল সার্ভিসে যোগ দিলে লেখক হওয়াটা সহজ হবে। আমার নতুন স্বপ্নযাত্রা শুরু হলো সেদিন থেকেই। আমার জীবনের কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় আমার মা-বাবা ও ছোট ভাইয়ের সমর্থন পেয়েছি সব সময়। পরিবার পাশে থাকলে মনের জোর অনেকটাই বেড়ে যায়।
আপনাদের মনে হতেই পারে, কীভাবে বিসিএসের মতো এত প্রতিযোগিতামূলক একটা পরীক্ষার বাধা পার হব! এটাই স্বাভাবিক। আমারও মনে হতো। আমার ভাবনাগুলো সব সময়ই আমার স্বতন্ত্র ছিল। আমি বিশ্বাস করি না যে অন্য দশজনের সঙ্গে আমার ভাবনাগুলো না মিললেই সেগুলো ভুল হয়ে যায়।
আমি একজন কম্পিউটার প্রকৌশলী। এখন এমবিএ পড়ছি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইবিএতে। আমি সব সময়ই শুনে এসেছি, বিসিএস নিয়ে ভাবনা আমার জন্য স্রেফ পাগলামি ছাড়া আর কিছু নয়। শুনে আমার বেশ ভালো লাগত। জেদও চেপে যেত। কারণ, আমি বিশ্বাস করি, আমার পাগলামি আমার জন্য অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। আপনার স্বপ্নপূরণে পাগল হতে শিখুন। ওয়ার্ক হার্ড—শুধু এই পুরোনো স্লোগান নিয়ে বসে থাকার দিন শেষ। এর সঙ্গে এখন যুক্ত হয়েছে ওয়ার্ক স্মার্টলি। হ্যাঁ, আপনাকে স্মার্টলি পরিশ্রম করতে হবে।
স্টিভ জবস এর একটা চমৎকার পরামর্শ দিয়েছিলেন—স্টে ফুলিশ, স্টে হাংগ্রি। আমিও বলছি, সাফল্য লাভ করার আগ মুহূর্ত পর্যন্ত বোকা থাকুন, বিসিএসের জন্য ক্ষুধার্ত থাকুন, পড়াশোনা করুন, চোখ-কান খোলা রাখুন, মুখ নয়। প্রথম আলো
0 comments:
Post a Comment