ধূমপানে বিশ্বে প্রতি ছয় সেকেন্ডে মারা যাচ্ছে এক জন এবং শুধু ২০১১ সালেই ধূমপানজনিত রোগে মৃত্যুর সংখ্যা প্রায় ৬০ লাখ বলে জানিয়েছে আমেরিকান ক্যান্সার সোসাইটি ও বিশ্ব ফুসফুস ফাউন্ডেশন।
‘তামাক মানচিত্র’ বা ‘টোব্যাকো এটলাস’ শীর্ষক বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার মুখপত্রের চতুর্থ সংস্করণে এই তথ্য স্থান পেয়েছে। সিঙ্গাপুরে বুধবার তামাক ও স্বাস্থ্য বিষয়ক পঞ্চদশ বিশ্ব সম্মেলনের দ্বিতীয় দিনে এর মোড়ক উন্মোচন হয়।
এতে বলা হয়েছে, ধূমপানের এই ধারা অব্যাহত থাকলে চলতি শতকে শুধু তামাকজনিত রোগে ১০০ কোটি মানুষের মৃত্যুর আশঙ্কা রয়েছে।
২০০৪ সালে তামাকজনিত রোগে বাংলাদেশে মৃত্যুর পরিসংখ্যান তুলে ধরে এটলাসে বলা হয়, ওই বছর মোট মৃত্যুর ২৪ শতাংশ পুরুষ এবং ১২ শতাংশ নারী মারা গেছে তামাকজনিত রোগে।
ওই সংস্করণে তথ্যসূত্র উল্লেখ না থাকলেও গবেষকের দাবি, তারা জাতিসংঘের পরিসংখ্যান থেকে যাবতীয় তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করেছেন।
মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে আমেরিকান ক্যান্সার সোসাইটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা জন আর সেফরিন বলেন, “তামাকের কারণে স্বাস্থ্যগত ও অর্থনৈতিক ক্ষতি যেমন অস্বীকার করতে পারব না, তেমনি এ ক্ষতি মেনেও নিতে পারি না।”
টোব্যাকো অ্যাটলাসে বলা হয়, ধূমপানের কারণে সরাসরি মৃত্যুর ক্ষতি তো রয়েছেই। তার সঙ্গে অসুস্থতার কারণে চিকিৎসা ব্যয় বৃদ্ধি, উৎপাদনশীলতা হ্রাস পাওয়ার বিষয়গুলোও জড়িত।
সেফরিন বলেন, “এতে (অ্যাটলাস) থাকা যাবতীয় তথ্য-উপাত্ত থেকে দিয়ে খুব সহজেই বোঝানো যাবে, তামাক শিল্প কীভাবে পরিকল্পিতভাবে আমাদের অর্থনীতিতে ক্ষয় ধরাচ্ছে, কেড়ে নিচ্ছে কোটি মানুষের প্রাণ।”
এটলাসে ২০১০ সালের একটি পরিসংখ্যান তুলে ধরে দেখানো হয়, একজন ধূমপায়ীর মৃত্যুর বিপরীতে একটি তামাক উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের আয় হয় প্রায় ছয় হাজার মার্কিন ডলার।
বিশ্ব ফুসফুস ফাউন্ডেশনের প্রধান নির্বাহী পিটার এ বালদিনি বলেন, “তামাকজাত পণ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো এর ক্ষতির দিকগুলো গোপন করছে। শুধু তাই নয়, ভুল তথ্য দিয়ে স্বাস্থ্যনীতিকে দুর্বল করে দিয়েছে। অথচ সঠিক কাজটি হলে লাখো প্রাণ অকালে ঝরে পড়া থেকে রক্ষা পেত।”
পরিসংখ্যান বলছে, ২০১০ সালে প্রথম সারির ছয়টি তামাকজাত পণ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান মুনাফা করেছে ৫১০ কোটি মার্কিন ডলার, যা কোকা-কোলা, মাইক্রোসফট ও ম্যাকডোনাল্ডের মতো প্রতিষ্ঠানের মোট মুনাফার সমান।
এটলাসের তালিকা অনুযায়ী তামাকজনিত রোগে সবচেয়ে বেশি মৃত্যু হয় চীনে। যেখানে প্রতিবছর ১২ লাখের মতো মানুষ মারা যান শুধু তামাকজনিত রোগে। অথচ এই দেশটিতে তামাকজাত পণ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো রাষ্ট্রায়ত্ত।
ধূমপানে আগ্রহ সৃষ্টির জন্য তামাকজাত পণ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর নানা কলা-কৌশলের বিষদ বর্ণনা উঠে এসেছে এটলাসে। এতে বলা হয়, ২০০২ সাল থেকে গত ১০ বছরে প্রায় ৪৩ লাখ কোটি সিগারেট পান করা হয়েছে।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
0 comments:
Post a Comment