অ্যাঞ্জেলিনা জোলি বা কারিনা কাপুরের মতো কৃশকায় নারীদের যখন বারবার পর্দায় উপস্থাপন করা হয় সৌন্দর্যের প্রতীক হিসেবে, তখন সচেতন বা অবচেতন মনে অনেক সাধারণ নারীও তাঁদের মতো করে ভাবতে থাকেন নিজেদের। তাঁদের মনেও বাসনা জাগে আদর্শ সুন্দরী হওয়ার। কিন্তু কৃশকায় হলেই একজন নারী সুন্দরী হয় না। ইসরায়েলের পার্লামেন্টে পাস হওয়া একটি বিল অন্তত সে কথাই বলছে।
বিলটি তৈরিতে অবদান রাখা রাচেল আদাতোর ভাষায়, কম ওজন ও কৃশকায় অবস্থা সৌন্দর্যের মাপকাঠি হতে পারে না। হালের টিভি অনুষ্ঠান, চলচ্চিত্র ও ম্যাগাজিনগুলো হালকা-পাতলা গড়নের জন্য কলার বোন বের হয়ে যাওয়া নারীকে সুন্দরী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে চাইছে। অতিশয় কৃশকায় ও ছিপছিপে গড়নের নারীদের এভাবে মহিমান্বিত করার চেষ্টা বন্ধ করা উচিত। আর সেই বিষয়টি মাথায় রেখেই তাঁরা বিলটি পাস করেন।
ওই বিল অনুযায়ী, মাংসল ও পেশিবহুল দেহের সূচকে নারীর কমপক্ষে ১৮.৫ পয়েন্ট থাকতে হবে। নইলে সেই নারীকে বিজ্ঞাপন বা ফ্যাশন শোতে উপস্থাপন করা যাবে না।
মানুষের মধ্যে স্বাভাবিক ওজনধারী হওয়ার সচেতনতা তৈরিতে ইসরায়েলের ন্যাশনাল ইটিং ডিসঅর্ডারস অ্যাসোসিয়েশনের সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করছে প্রাউডটুবিমি নামের একটি ওয়েবসাইট। ওই ওয়েবসাইট প্রতিষ্ঠানের পরিচালক ক্লেরি মিসকো বলেন, সুন্দর নারী হিসেবে ক্রমাগত কৃশকায় নারীদের উপস্থাপন করার বেশ কিছু খারাপ দিক আছে। পর্দায় দেখা সব নারীই এখন একই গড়নের। তাঁদের মধ্যে তেমন কোনো বৈচিত্র্য নেই। আর এই বিষয়টিকেই সবচেয়ে খারাপ দিক হিসেবে দেখছেন তিনি। তাঁর ভাষায়, সাধারণ মানুষ পর্দায় তাঁদের মতো কাউকে দেখতে পায় না। তাঁদের মতো গড়নের নারী বা পুরুষ পর্দায় একেবারেই অনুপস্থিত।
কৃশকায় নারীকে বারবার আদর্শ নারী হিসেবে উপস্থাপনের জন্য গণমাধ্যমের বিরুদ্ধে প্রাউডটুবিমির অভিযোগ নিয়ে প্রতিবেদন তৈরি করেছে বিবিসি অনলাইন। অনেক ম্যাগাজিনের সম্পাদক, মডেলিংয়ের এজেন্ট ও কলা-কুশলীদের পোশাক ডিজাইনার বলেছেন, তাঁরা বিভিন্ন গড়নের নারীকে মডেল হিসেবে উপস্থাপন করতে চাইলেও তা পারছেন না। কারণ, এই শিল্প-সংশ্লিষ্টরা নারীকে এভাবেই দেখতে আগ্রহী।
‘প্রাইসিং বিউটি: দ্য মেকিং অব এ ফ্যাশন মডেল’ বইয়ের লেখক আমান্ডা মিয়ার্স বলেন, বাস্তব জগতে যে গড়নের নারীর উপস্থিতি নেই, সেভাবে নিজেদের গড়ে তোলার ফাঁদে পড়ে এই মডেলরা। তবে তিনি মনে করেন, দেহের মাংসল সূচক অনুযায়ী একটি গোষ্ঠীর উচ্চতা-ওজনের একটি অনুপাত করা যায়, তবে এই সূচক ব্যবহার করে কোনো একক ব্যক্তির স্বাস্থ্যের পরিমাপ করা উচিত নয়। এই সূচকের ব্যাপাটিকে তিনি অযৌক্তিক বলে মন্তব্য করেন।
কানাডায় গণমাধ্যম শিক্ষাবিষয়ক প্রকল্প মিডিয়া অ্যাওয়ার্নেস নেটওয়ার্কের পরিচালক ম্যাথু জনসন বলেন, এ ধরনের উদ্যোগের কারণে গণমাধ্যমে বিভিন্ন গড়নের নারীর উপস্থিতি বাড়বে। এতে করে অতি কৃশকায় হওয়ার বিষয়টি প্রত্যাখ্যাত হবে বলে তিনি মন্তব্য করেন।
দ্য বডি মিথ বইয়ের লেখক ড. মেইন বলেন, শরীরের আকার কমাতে আমরা নারীদের বাধ্য করছি। কেউ হয়তো জন্মগতভাবে, আবার কেউ হয়তো খাবারজনিত সমস্যা ও অরুচির কারণে হালকা-পাতলা গড়নের হয়ে থাকেন। কিন্তু এই নারীদের ভিত্তি করে অন্যদেরও তাদের মতো করে গড়ে তোলার একটা উদ্যোগ সব সময় থাকে।
তবে সময় একটু একটু করে বদলাচ্ছে। কৃশকায় গড়নের অনেকেই এখন সমালোচনার মুখে পড়ছেন। এ তালিকায় প্রথম দিকে আছেন প্রিন্স চার্লস ও প্রিন্সেস ডায়ানার ছেলে প্রিন্স উইলিয়ামের স্ত্রী কেট মিডলটন। অনেকেই মিডলটনের লম্বার তুলনায় পাতলা গড়ন নিয়ে নানা মন্তব্য করেন। সম্প্রতি অস্কার অনুষ্ঠানের পর অ্যাঞ্জেলিনা জোলিকে নিয়েও টুইটারে বেশ সমালোচনা চলেছে।
আর এ বিষয়টিকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন শারীরিক সৌন্দর্য-বিষয়ক পরামর্শক রেগান চাস্টেন। তিনি মনে করেন, অবাস্তব দৈহিক আকৃতি ধারণ করার যে অসুস্থ প্রতিযোগিতা এই চলচ্চিত্র থেকে শুরু করে বিজ্ঞাপন জগতে চলছে, তার বিপরীতে এ ধরনের সমালোচনা একটু হলেও স্বস্তির বাতাস বইয়ে দেবে। prothom-alo
0 comments:
Post a Comment