অগ্নিঝরা মার্চের এই দিনটি বাঙালির জীবনে প্রত্যয় দীপ্ত, আনন্দে উদ্বেলিত এবং একই সঙ্গে বেদনায় বিষণ্ন। ইতিহাসের পৃষ্ঠা রক্তে রাঙিয়ে, আত্মত্যাগের অতুলনীয় দৃষ্টান্ত সৃষ্টি করে ১৯৭১-এর এই দিন যে সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল এ দেশের মানুষ, স্বাধীনতা অর্জন তার চূড়ান্ত পরিণতি।
জাতি আজ ব্যথাতুর চিত্তের বিনম্র শ্রদ্ধা ও গভীর কৃতজ্ঞতায় স্মরণ করবে স্বাধীনতার স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, প্রয়াত চার জাতীয় নেতা, মুক্তিযুদ্ধে আত্মোৎসর্গ করা দেশমাতৃকার অগণিত বীর সন্তান এবং যাঁরা সহায়-সম্পদ-সম্ভ্রম হারিয়েছেন, তাঁদের। একই সঙ্গে জোর দাবি উঠবে পাকিস্তানি হানাদারদের দোসর রাজাকার, আলবদর, আলশামসসহ সব যুদ্ধাপরাধীর বিচার দ্রুত শেষ করে তাদের দৃষ্টান্তমূলক সাজা কার্যকর করার।
ভোর থেকেই সর্বস্তরের মানুষ সাভারে যাবে জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণের মধ্য দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের শহীদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করতে। রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর পুষ্পস্তবক অর্পণের পর সাধারণ মানুষের নিবেদন করা শ্রদ্ধার ফুলে ফুলে ছেয়ে যাবে স্মৃতিসৌধের বেদি।
আজ সরকারি ছুটির দিন। সারা দেশে সরকারি এবং বেসরকারি পর্যায়ে অসংখ্য কর্মসূচির মধ্য দিয়ে উদ্যাপিত হবে স্বাধীনতা দিবস। এসব কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে আলোচনা সভা, মিলাদ ও দোয়া মাহফিল এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। দিবসটি উপলক্ষে জাতীয় দৈনিকগুলো প্রকাশ করছে বিশেষ সংখ্যা। টেলিভিশন ও বেতার কেন্দ্রগুলো সম্প্রচার করছে বিশেষ অনুষ্ঠান।
বাণী
স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. জিল্লুর রহমান দেশবাসী ও প্রবাসী বাঙালিদের শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়ে বলেছেন, ‘অনেক ত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত আমাদের স্বাধীনতার মূল লক্ষ্য ছিল একটি সুখী ও সমৃদ্ধ দেশ গড়া। স্বাধীনতার এই মূল লক্ষ্যে পৌঁছাতে আমাদের আরও অনেক দূর যেতে হবে। এ জন্য দল-মতনির্বিশেষে সবার ঐক্যবদ্ধ প্রয়াস প্রয়োজন। গণতন্ত্রের বিকাশ ও প্রাতিষ্ঠানিকীকরণ ছাড়া সামগ্রিক উন্নয়ন সম্ভব নয়।’ তিনি পরমত সহিষ্ণুতা, সংযম এবং পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধের পরিচয় দিয়ে জাতীয় সংসদকে সব আলোচনা ও সমস্যা সমাধানের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত করার প্রয়াসে সবাইকে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালনের আহ্বান জানিয়েছেন। বাণীতে তিনি স্বাধীনতার জন্য জীবন উৎসর্গকারী দেশের বীর সন্তান এবং মুক্তিসংগ্রামের মহানায়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবসহ সব নেতার প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর বাণীতে বলেন, ‘স্বাধীনতা আমাদের শ্রেষ্ঠ অর্জন। এই অর্জনকে অর্থপূর্ণ করতে হলে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সর্বস্তরে পৌঁছে দিতে হবে। এগিয়ে যেতে হবে দিনবদলের লক্ষ্যে। বর্তমান সরকার নির্বাচনী ইশতেহার অনুযায়ী গত তিন বছরে দেশের কৃষি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, আইনশৃঙ্খলা, তথ্যপ্রযুক্তি, বিদ্যুৎ, যোগাযোগব্যবস্থাসহ সর্বক্ষেত্রে ব্যাপক উন্নয়ন কর্মকাণ্ড বাস্তবায়ন করেছে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারপ্রক্রিয়া দ্রুত এগিয়ে নিচ্ছে। এ সময় স্বাধীনতাবিরোধী, সামপ্রদায়িক চিহ্নিত একটি প্রতিক্রিয়াশীল চক্র গণতন্ত্র ও উন্নয়ন কর্মকাণ্ডকে বানচাল করতে মারিয়া হয়ে উঠেছে।’ তিনি এই চক্রটির অপতৎপরতা নস্যাৎ করে দিতে দেশবাসীকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, চার নেতাসহ সব নেতা ও শহীদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন।
জাতীয় সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা ও বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া তাঁর বাণীতে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানসহ সব জাতীয় নেতা এবং স্বজাতির মুক্তির জন্য যাঁরা আত্মত্যাগ করেছেন, তাঁদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন। তিনি গণতন্ত্রের পতাকা সমুন্নত রাখতে সবাইকে সজাগ সতর্ক থাকতে এবং দৃঢ় ঐক্য গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়েছেন।
কর্মসূচি: স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে বিভিন্ন সংগঠন তাদের নিজ নিজ কর্মসূচি পালন করছে। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে: সকাল ছয়টায় ধানমন্ডির বঙ্গবন্ধু ভবন, কেন্দ্রীয় এবং দেশের সব কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন, জাতীয় স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা নিবেদন, সকাল সাতটায় বঙ্গবন্ধু ভবনে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদন ও বেলা ১১টায় টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধুর সমাধিতে শ্রদ্ধার্ঘ নিবেদন, মিলাদ ও দেওয়া মাহফিল।
স্বাধীনতা দিবসে সূর্যোদয়ের সময় পুরাতন বিমানবন্দর এলাকায় ৩১ বার তোপধ্বনির মধ্য দিয়ে সশস্ত্র বাহিনীর কর্মসূচি শুরু হবে। তিন বাহিনীর বাদক দল সংসদ ভবন, ফার্মগেট, মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়াম, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানসহ বিভিন্ন এলাকায় বেলা তিনটা থেকে পাঁচটা পর্যন্ত বাদন পরিবেশন করবে। ঢাকার সদরঘাট, নারায়ণগঞ্জের পাগলা, চট্টগ্রাম, খুলনা, মংলা ও বরিশালে নৌবাহিনীর কয়েকটি জাহাজ সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত রাখা হবে। prothom-alo
0 comments:
Post a Comment