
আন্তর্জাতিক বাজারে চাহিদা বাড়ায় গত বছর বাংলাদেশ থেকে কাঁকড়ার রপ্তানি বেড়েছে।
গত অর্থবছরে বাংলাদেশ ৩৭৬ কোটি টাকায় ৫ হাজার ৩৪৮ মেট্রিক টন কাঁকড়া রপ্তানি করেছে। এতে আগের বছরের চেয়ে আয় বেড়েছে প্রায় ১০০ কোটি টাকা।
কাঁকড়া রপ্তানির বাজারের ব্যাপ্তিও বেড়েছে। ভারত, চীন ও থাইল্যান্ডসহ এশিয়ার দেশগুলোর বাইরে এখন ইউরোপ ও আমেরিকায়ও কাঁকড়া রপ্তানি হচ্ছে।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় এবং মৎস্য অধিদপ্তরের নথিতে এই তথ্য পাওয়া গেছে।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী আব্দুল লতিফ বিশ্বাস বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমাদের দেশে কাঁকড়ার চাহিদা একেবারেই কম। তাই এটি রপ্তানি করে বৈদেশিক মুদ্রাও আয় হচ্ছে, যা দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে।”
সরকার কাঁকড়া চাষ এবং গবেষণার ওপর বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ইতোমধ্যে ক্ষুদ্র প্রকল্পের আকারে গবেষণা শুরু হয়েছে। কাঁকড়া মোটাতাজা করার ব্যাপারে গবেষণার পাশাপাশি চাষীদের পরামর্শও দেওয়া হচ্ছে।
মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, গত অর্থবছরে কাঁকড়ার উৎপাদন হয় প্রায় ৭ হাজার ৭০৮ মেট্রিক টন। দেশের চাহিদা পূরণ করে ৫ হাজার ৩৪৮ মেট্রিক টন কাঁকড়া রপ্তানি করে আয় হয় ৩৭৬ কোটি টাকা। আগের বছর উৎপাদনের পরিমাণ ছিল ৬ হাজার ৬৯২ মেট্রিক টন।
মৎস্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা জানান, সুন্দরবন সংলগ্ন উপকূলীয় এলাকায় ১১ প্রজাতির কাঁকড়া পাওয়া যায়। এছাড়া কাঁকড়া পাওয়া যায় খুলনা, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা, পটুয়াখালী, বরগুনা, ভোলা, বরিশাল, ঝালকাঠি, নোয়াখালী, হাতিয়া, মহেশখালী, কুতুবদিয়া, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার উপকূল এলাকায়।
গবেষকরা জানান, মাইলা ও সিলা জাতের কাঁকড়া সবচেয়ে উন্নতমানের, তাই বিদেশে এগুলোর চাহিদা বেশি।
চীন, মিয়ানমার, ভারত, জাপান, মালয়েশিয়া, শ্রীলঙ্কা, দক্ষিণ ও উত্তর কোরিয়া, সিঙ্গাপুর, তাইওয়ান ও হংকংসহ বিভিন্ন দেশে কাঁকড়ার ব্যাপক চাহিদা রয়েছে।
কর্মকর্তারা জানান, প্রাকৃতিকভাবে বড় হওয়া কাঁকড়ার ২০ থেকে ২৫ শতাংশ আহরণ করা সম্ভব হয়। বৃহত্তর খুলনা অঞ্চলের দেড় লাখেরও বেশি জেলে প্রাকৃতিক উৎস থেকে কাঁকড়া ধরে জীবনযাপন করছেন। শুধু সুন্দরবন এলাকাতেই এতে যুক্ত আছে ৫০ থেকে ৬০ হাজার জেলে।
খুলনার পাইকগাছা, দাকোপ, সাতক্ষীরার শ্যামনগর, তালা, বাগেরহাটের রামপাল ও মংলা এলাকায় ছোট ছোট পুকুরে কাঁকড়া মোটাতাজা করা হচ্ছে। এসব এলাকায় নয় শতাধিক কাঁকড়া মোটাতাজাকরণ খামার গড়ে উঠেছে। শুধু পাইকগাছা উপজেলায় রয়েছে ৩০০ খামার।
সাতক্ষীরায় বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বিএফআরআই) লোনা পানির গবেষণা কেন্দ্রেও গড়ে উঠেছে একটি মোটাতাজা করার গবেষণা ক্ষেত্র। এতে কাঁকড়া নিয়ে গবেষণার পাশাপাশি মোটাতাজা করার কাজও হচ্ছে। একইসঙ্গে এ প্রতিষ্ঠানের গবেষকরা কাঁকড়া চাষীদের পরামর্শও দিচ্ছেন বলে জানান বিএফআরআই’র সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা এস বি সাহা।
গবেষক ও চাষীদের মতে, মাত্র এক বিঘা আয়তনের পুকুরে কাঁকড়া চাষ করে বছরে দেড় থেকে দুই লাখ টাকা পর্যন্ত লাভ করা যায়।
খুলনার কাঁকড়া ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আনিসুজ্জামান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, মাত্র একশ’ শতাংশ জমিতে ৫ থেকে ৬ হাজার টাকা খাটিয়ে বছরে গড়ে ৩০০ কেজি কাঁকড়া উৎপাদন করা সম্ভব, এর বাজার মূল্য প্রায় দুই লাখ টাকা।
শুধু খুলনা অঞ্চল থেকেই প্রত্যেক বছর প্রায় ৭০ কোটি টাকা মূল্যের কাঁকড়া রপ্তানি হচ্ছে বলে জানান তিনি।
গত ২০ বছর ধরে কাঁকড়া রপ্তানি হলেও এখনও এটি দেশের অপ্রচলিত পণ্যের তালিকায় রয়েছে। একে প্রচলিত পণ্যের তালিকায় আনার দাবি জানান আনিস।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম/
0 comments:
Post a Comment