প্রশ্ন: কলকাতার বইমেলায় মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠান বাতিল হলেও বাংলাদেশের অমর একুশে গ্রন্থমেলায় কোনো ধরনের ঝামেলা ছাড়াই বইটি প্রকাশিত হয়েছে। বিষয়টি কেমন লাগছে?
উত্তর: আমার আত্মজীবনী নির্বাসনের সপ্তম খণ্ডের প্রকাশনা অনুষ্ঠান কলকাতায় বাতিল হয়েছে। কিন্তু এ ঘটনার পরের দিনই মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ বাংলাদেশে তা সফলভাবে প্রকাশিত হয়েছে। আমি খুবই আনন্দিত। ঢাকার বাংলা একাডেমীর চত্বরে লেখক সৈয়দ আবুল মকসুদ আমার বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করেছেন। ধর্মনিরপেক্ষ ও গণতান্ত্রিক ভারতের যা করা উচিত ছিল, বাংলাদেশ তা-ই করেছে।’
প্রশ্ন: তাহলে আপনি কি এখন বাংলাদেশে ফিরে আসার কথা ভাবছেন ?
উত্তর: না। দেশটিতে আমার বইয়ের প্রকাশনা অনুষ্ঠান বা প্রকাশের ব্যাপারে তারা (মৌলবাদীরা) ভ্রূক্ষেপ করে না। এটা কেবল একটা অনুষ্ঠান। তারা এখনই আমাকে বাংলাদেশে আসতে দেবে না। এটা কোনো উন্নতির লক্ষণ নয়। বাংলাদেশি মৌলবাদীরা আমার ব্যাপারে এখনো নমনীয় নয়। তারা এটাও জানে, সরকার আমার প্রতি রূঢ়। আমি অনুমান করি, মৌলবাদীরাও আশা করে না, সরকার আমাকে দেশে ফিরিয়ে আনুক। শেখ হাসিনা বা খালেদা জিয়া বা অন্তর্বর্তীকালীন সরকার আমার দেশে আসা অনুমোদন করবে না। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়াসহ বেশ কিছু ব্যাপারে শেখ হাসিনা বলিষ্ঠ পদক্ষেপ নিয়েছেন। কিন্তু আমার ব্যাপারে তিনি কিছুই করেননি। মৌলবাদীরা আমাকে ‘ইসলামবিরোধী’ বলে চিহ্নিত করেছে। একজন ইসলামবিরোধীকে দেশে আসতে দেওয়ার ব্যাপারে সরকার সম্ভবত ভীত। বাংলাদেশ আমাকে ১৮ বছর ধরে দেশের বাইরে রেখেছে। আর পশ্চিমবঙ্গের ঘটনা তো সাম্প্রতিক। একজন লেখকের প্রতি এটা চরম অবিচার। কিন্তু আমি স্বপ্ন দেখি কোনো একদিন কলকাতায় ফিরতে পারব।’
প্রশ্ন: ১৮ বছর পর বাংলাদেশে বই প্রকাশ হলো।
উত্তর: হ্যাঁ। ২০১১ সালের ডিসেম্বরে বাংলাদেশের আগামী প্রকাশনীর প্রকাশক ওসমান গনি আমার সঙ্গে দেখা করেছেন। বইয়ের সব স্বত্ব দিয়ে আমি তাঁর সঙ্গে একটি চুক্তি করেছি। তিনি ঢাকায় নির্বাসন প্রকাশের এই ঝুঁকি নিয়েছেন। বাংলাদেশ ছেড়ে আসার পর আমার বইয়ের প্রকাশকেরা লেখক সম্মানী হিসেবে আমাকে একটি টাকাও দেননি। বাংলাদেশে আমার বই প্রিন্ট ও বিক্রি হচ্ছে। বইয়ের কভারে আমার নাম ও ছবি যুক্ত করে সেখানে অনেকের বাজে লেখা বিক্রি হচ্ছে। কিন্তু আমার প্রকাশকেরা এ ব্যাপারে কোনো পদক্ষেপ নেয়নি বা আমার বইয়ের ওপর নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে কোনো প্রতিবাদও করেনি।
প্রশ্ন: নির্বাসিত জীবনে কী করে সময় কাটছে?
উত্তর: লেখালেখি, পড়া এবং আমার পোষা বিড়াল মিনুর সঙ্গে খেলা করে অধিকাংশ সময় পার করি। যখন ভারতে ছিলাম, তখন সেখানকার বন্ধুরা আমার সঙ্গে দেখা করতে আসত। আমি তাঁদের সঙ্গে আড্ডা দিতাম। সেই সব আড্ডা ভীষণ মিস করি। prothom-alo
0 comments:
Post a Comment