বহুকাল ধরেই এখানে মাতৃতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থা চালু আছে। উত্তরাধিকার সূত্রে মায়ের সম্পত্তির মালিক হন মেয়েরা। এই সমাজব্যবস্থায় সম্পত্তিতে পুরুষের অধিকার নেই। এ কারণে উত্তরাধিকার সূত্রে বাবার সম্পত্তিতে ছেলের অধিকার নেই।
তবে এ ব্যবস্থা থেকে মুক্তি চান অনেক পুরুষ। নিজেদের অধিকার আদায়ে তাই তাঁরা সংগঠিত হচ্ছেন, গড়ে তুলেছেন পুরুষ অধিকারের আন্দোলন। অধিকার নিয়ে কাজ করছেন এমন সংগঠন সিংকং-রিমপেই-থিম্মাইয়ের সভাপতি কেইথ পারিয়াত বিবিসিকে বললেন, ‘আমরা নারীর অবস্থান নিচে নামাতে চাই না। নারী এখন যে অবস্থানে আছে, আমরা চাই তাঁদের পাশাপাশি পুরুষও সেখানে অবস্থান করে নেবে।’
পারিয়াত তাঁর নিজের জীবনে বহুকালের মাতৃতান্ত্রিক প্রথা ভেঙেছেন। মায়ের বদলে নিয়েছেন বাবার পদবি। তিনি মনে করেন, পুরুষদের অবদমিত করে রাখার কারণে তারা তাদের কর্মক্ষমতা হারিয়ে ফেলছে, সারা দিন মদ আর নেশায় মত্ত থাকে।
আদিবাসী খাসি সম্প্রদায়ের ছেলেদের করুণ অবস্থার বর্ণনা দিয়ে পারিয়াত বলেন, এখানে মেয়ের জন্ম কতটা কাম্য, সেটা হাসপাতালের লেবার ওয়ার্ডে গেলেই বোঝা যায়। মেয়ের জন্ম হলে পরিবারের সদস্যরা উল্লাসে ফেটে পড়েন। আর ছেলের জন্ম হলে তা তাদের কাছে নিয়ে আসে সান্ত্বনার বাণী—‘ঈশ্বর যা দিয়েছেন।’
বিশ্বের বেশির ভাগ স্থানে যখন বলবান ও উপকারী কোনো কিছুকে পুরুষের সঙ্গে তুলনা করা হয় এখানে সেটা ভিন্ন। পারিয়াতের মতে, ‘এখানে একটা গাছ প্রথমে পুরুষ থাকে। যখন কাঠ দেয় তখন সেটা নারী হয়ে যায়। এমন আরও অনেক কিছু আছে যেগুলো প্রথমে নারী লিঙ্গকে নির্দেশ করে, কার্যকর ও উপকারী হয়ে ওঠার পর পুরুষ লিঙ্গের হয়ে যায়।’ মাতৃতন্ত্র পুরুষের মধ্যে অসহায়ত্ব ও অক্ষমতা বোধ জাগিয়ে দেয়।
শিলংয়ের একটি দৈনিক পত্রিকার স্বনামধন্য সম্পাদক পেট্রিসিয়া মুককুম বলেন, তাঁর সমাজের মাতৃতান্ত্রিক ব্যবস্থাই তাঁকে আজকের অবস্থানে নিয়ে এসেছে। আর এমন প্রথার কারণেই রাজনীতিতে নারীর অংশগ্রহণও এখানে বেশ শক্তিশালী। তিনি মনে করেন, মাতৃতান্ত্রিক ব্যবস্থা এখানে নারীর জন্য নিরাপদ অভয়ারণ্য গড়ে তুলেছে।
পূর্ব খাসি পাহাড়ের এক প্রত্যন্ত গ্রামের বাসিন্দা মেরি। ৪২ বছর বয়সী মেরি জানালেন, ‘নারী অর্থ-সম্পদের দেখভালের জন্য পুরুষদের বিশ্বাস করে না। আর তাই সম্পত্তির অধিকার তাঁরা নিজের কাছে রাখে।’ মেরির এমন কথা শুনে তাঁর পাশেই বসে থাকা স্বামী আলফ্রেড কোনো প্রতিবাদ করলেন না, শুধু একটু হাসলেন।
মেরি মনে করেন, বাবাকে মাঠের কাজে সহযোগিতা করার জন্য ছেলেরা অল্প বয়সেই স্কুলে যাওয়া ছেড়ে দেয়। এ কারণেই তাঁরা শিক্ষিত হতে পারে না। স্ত্রীর এমন কথা শুনে আলফ্রেড মোনালিসার মতোই রহস্যময় হাসি মুখে লাগিয়ে রাখলেন, কিছু বললেন না।
মেরির কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল, তিনি পুরুষের অধিকার আদায়ে কোনো আন্দোলনের কথা শুনেছেন কি না। জবাবে মেরি ‘না’-সূচক উত্তর দেন। একই সঙ্গে মন্তব্য করেন, চলমান এই মাতৃতান্ত্রিক ব্যবস্থা কোনো দিনও বদলাবে না।
আলফ্রেডের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল, মাতৃতান্ত্রিক ব্যবস্থা নিয়ে তিনি কী ভাবছেন? দীর্ঘ সময় কেটে যাওয়ার পরও তাঁর কাছ থেকে কোনো উত্তর এল না। তবে পাইপ টানতে টানতে মেরি উত্তর দিলেন, ‘সে (আলফ্রেড) এটা পছন্দ করে।’ বিবিসি অবলম্বনে তপতী বর্মন prothom-alo
0 comments:
Post a Comment