মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে পাকিস্তানের এদেশীয় দোসর আলবদরের সদস্যরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস ও বিভিন্ন স্থান থেকে শিক্ষক, সাংবাদিক, চিকিৎসক, সংস্কৃতিকর্মীসহ বিভিন্ন পেশার বরেণ্য ব্যক্তিদের অপহরণ করে নিয়ে যায়। পরে নিদারুণ যন্ত্রণা দিয়ে রায়েরবাজার ও মিরপুরে তাঁদের হত্যা করে। এই দুটি স্থান এখন বধ্যভূমি হিসেবে সংরক্ষিত। এ ছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষককে স্বাধীনতার পর বিশ্ববিদ্যালয়ের মসজিদ প্রাঙ্গণে দাফন করা হয়।
এ ছাড়া মুক্তিযুদ্ধের শেষলগ্নে, ১০ থেকে ১৪ ডিসেম্বরের মধ্যে আলবদর বাহিনী আরও অনেক বুদ্ধিজীবীকে ধরে নিয়ে মোহাম্মদপুর ফিজিক্যাল ট্রেনিং ইনস্টিটিউটে স্থাপিত আলবদর ঘাঁটিতে নির্যাতনের পর রায়েরবাজার বধ্যভূমি ও মিরপুর কবরস্থানে নিয়ে হত্যা করে। এই ১৪ ডিসেম্বরে ঘাতকেরা ধরে নিয়ে যায় শহীদুল্লা কায়সার, মুনীর চৌধুরীসহ আমাদের সামাজিক-সাংস্কৃতিক অঙ্গনের অনেক দিকপালকে।
একাত্তরের ৩০ লাখ শহীদের মধ্যে শহীদ বুদ্ধিজীবীরা একটি আলাদা দলভুক্ত। তাঁরা শহীদ হন এক দূরপ্রসারী পরিকল্পনার অংশ হিসেবে। হানাদার পাকিস্তানি বাহিনী যখন দেখল তাদের চরম বিপর্যয় আসন্ন, তারা দাঁড়িয়ে আছে পরাজয়ের কিনারে, তখনই তারা সেই পরিকল্পনা কার্যকর করে। তালিকাভুক্ত ব্যক্তিদের ধরে নিয়ে যায় চোখ বেঁধে, সবাইকে হত্যা করে তারা স্বাধীন বাংলাদেশের ভবিষ্যৎকে হত্যা করার পাশবিক আনন্দ লাভ করে।
শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলসহ নানা পেশাজীবী, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন দিনব্যাপী বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করবে। এসব কর্মসূচির মধ্যে আছে সকালে মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ ও রায়েরবাজার বধ্যভূমিতে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন। এ ছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মসজিদ প্রাঙ্গণ ও জগন্নাথ হলের গণকবরে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো হবে। দিনব্যাপী বিভিন্ন সংগঠন শহীদদের স্মরণে আলোচনা সভা, শোকযাত্রার কর্মসূচিও পালন করবে।
দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়া পৃথক বিবৃতি দিয়েছেন।
রাষ্ট্রপতি বাণীতে বলেন, ‘শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উজ্জীবিত হয়ে নতুন প্রজন্ম একটি জ্ঞানভিত্তিক সমাজ বিনির্মাণে এগিয়ে আসবে বলে মনে করি।’
প্রধানমন্ত্রী বাণীতে বলেন, শহীদ বুদ্ধিজীবীরা তাঁদের কর্ম, আদর্শ ও দেশপ্রেমের মাধ্যমে জাতির জীবনে চিরদিন অম্লান হয়ে বেঁচে থাকবেন। তাঁদের আত্মত্যাগ জাতি কখনোই বিস্মৃত হবে না।’
বিরোধীদলীয় নেতা বলেন, শহীদদের আদর্শে জাতিকে উদ্বুদ্ধ হতে হবে।
কর্মসূচি: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভোর ছয়টা ৩৫ মিনিটে বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন। এরপর আওয়ামী লীগ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানাবে। প্রধানমন্ত্রীর প্রস্থানের পর সকাল সাতটায় স্মৃতিসৌধ সবার জন্য উন্মুক্ত করা হবে। এ ছাড়া আওয়ামী লীগ বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ ও আলোচনা সভার আয়োজন করেছে।
বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া সকালে বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে ফুল দিয়ে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাবেন। এ ছাড়া দিবসটি উপলক্ষে বিএনপি ও অঙ্গসহযোগী সংগঠনগুলো দিনব্যাপী কর্মসূচি পালন করবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সকাল সাতটায় বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় বুদ্ধিজীবীদের কবর ও স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবে। এ ছাড়া কেন্দ্রীয় ও হল মসজিদে দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে।
সেক্টর কমান্ডারস ফোরাম দিনটি উপলক্ষে রায়েরবাজার বধ্যভূমি স্মৃতিসৌধের সামনে বিকেল চারটায় মানববন্ধন করবে। বিভিন্ন বিভাগীয় ও জেলা শহরে একই কর্মসূচি পালিত হবে। prothom-alo
0 comments:
Post a Comment