গতকাল বুধবার জাতীয় সংসদে একাদশ অধিবেশনের শেষ দিনে সমাপনী বক্তব্যে এ কথা বলেন শেখ হাসিনা। স্পিকার আবদুল হামিদের সভাপতিত্বে তিনি প্রায় ৫০ মিনিট বক্তব্য দেন। প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য শেষে স্পিকার সংসদের একাদশ অধিবেশন সমাপ্ত ঘোষণা করেন।
প্রধানমন্ত্রী তাঁর দীর্ঘ বক্তব্যে শেয়ারবাজার ও বিরোধী দলের নেত্রীর কিছু বক্তব্যেরও জবাব দেন। ঢাকাকে ভাঙা হচ্ছে না উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘ঢাকাকে ভাঙছি না, বরং সম্প্রসারণ করা হচ্ছে। নাগরিক সেবা দেওয়ার জন্য ডিসিসিকে ভাগ করা হয়েছে, অন্য কোনো উদ্দেশ্যে নয়। কিন্তু কিছু লোক অন্য কোনো উদ্দেশ্যে এর বিরোধিতা করছে।’ তিনি বলেন, লন্ডনে দুটি, ম্যানিলায় ১২টি, সিডনি, মেলবোর্নসহ অনেক শহরেই একাধিক সিটি করপোরেশন করে সুফল পাওয়া গেছে।
বিরোধী দলকে ইঙ্গিত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকারের ভালো কাজকে জনগণের কাছে নেতিবাচকভাবে উপস্থাপন করতেই বিরোধিতা করা হচ্ছে।
শেখ হাসিনা বলেন, ঢাকা ক্রমশ সম্প্রসারিত হচ্ছে। একসময় ঢাকার অধিকাংশ এলাকা ছিল গ্রাম। সেগুলো এখন সিটিতে পরিণত হয়েছে। মূল ঢাকা দক্ষিণে, সম্প্রসারিত ঢাকা উত্তরে। ভেতরে ৪১টি থানা, অঞ্চল আটটি। জনসংখ্যা বাড়ছে। তাই এ বিশাল এলাকা এক সিটি করপোরেশনের পক্ষে সামাল দেওয়া কঠিন।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘সেদিন সকাল সাতটার দিকে রাস্তায় বের হয়ে দেখি রাস্তায় ময়লা-অবর্জনায় ভরা। অর্থা ৎ সিটি করপোরেশন নাগরিক সেবা দিতে পারছে না।’ তিনি বলেন, ‘আমরা ঢাকাকে ভাগ করছি না, সেবাকে বিকেন্দ্রীকরণ করে জনগণের কাছে পৌঁছে দিতে চাই।’
সংসদ নেত্রী বলেন, ‘কিছু মানুষ এ নিয়ে সমালোচনা করেই চলছেন। সমালোচনা করাই তাঁদের কাজ। সরকার যে কাজটাই করছে তাতে বাগড়া দিতে হবে, যাতে জনগণকে বোঝানো যায় যে, সরকার ভালো কাজ করছে না।’
জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাস দমনে সরকারের সফলতার তথ্য তুলে ধরে বিরোধী দলের উদ্দেশে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা যেই কাজটিই করি না কেন, তারা উল্টো বলে। তারা যেভাবে সমালোচনা করছে, মনে হয় এক দিন তারাই বলবে, দেশে বোমার আওয়াজ নেই কেন, জঙ্গিবাদ নেই কেন?’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বিরোধীদলীয় নেতা সংসদে নেই। তিনি সংসদ ছেড়ে সড়কে চলে গেছেন, রোডমার্চ করছেন। কিছুদিন আগেও বলেছেন দেশের রাস্তাঘাট খারাপ। প্রশ্ন হলো, তিনি এত খারাপ রাস্তায় কীভাবে রোডমার্চ করলেন? আশঙ্কা করেছিলাম অভিযোগ করবেন, তাও করেননি। তার মানে রাস্তাঘাটের উন্নতি হয়েছে।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘বিরোধীদলীয় নেতা টিপাইমুখ নিয়ে ভারতের প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি দিয়েছেন, জবাবও পেয়েছেন। দুটি চিঠিতে কী আছে তা জাতি জানল না। জনসম্মুখে চিঠি প্রকাশ করবেন আশা করি।’ তিনি বিরোধীদলীয় নেতাকে সংসদে এসে চিঠির জবাব জানানোর আহ্বান জানান।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা যথেষ্ট অধিকারসচেতন। এরই মধ্যে আমরা দুজন প্রতিনিধি (দিল্লি) পাঠিয়েছি। দেশের ক্ষতি হয় এমন কিছু মেনে নেব না, হতে দেব না। ক্ষতিকারক কোনো পদক্ষেপ মেনে নেওয়া সম্ভব নয়।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বিরোধীদলীয় নেত্রী জানেন না, পদের লোভে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা দল ছাড়েন না। আওয়ামী লীগ যারা করে তারা দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ। পয়সা দিয়ে আওয়ামী লীগের বড় নেতা তো নয়-ই, তৃণমূলের নেতাও নেওয়া সম্ভব নয়। আইয়ুব, জিয়া, এরশাদ চেষ্টা করেও পারেননি।’
বিএনপি প্রতিষ্ঠার সমালোচনা করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘বিএনপির জন্ম মিলিটারি ডিকটেটরের হাতে, ক্ষমতার উচ্ছিষ্ট টোকানো দলটির কাজ। তিনি (জিয়া) এ গাছের ছাল, ওই গাছের বাকল নিয়ে দল তৈরি করেছিলেন। যুদ্ধাপরাধী, আন্ডারগ্রাউন্ড, সর্বহারা, পচা কমিউনিস্ট নিয়ে দল করেছেন। ভালোগুলো আমাদের সঙ্গে আছেন। খারাপগুলো ওদিকে গেছেন।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বিরোধীদলীয় নেত্রী বলছেন আমি নাকি দেশ ছেড়ে চলে যাব। আমার জন্ম বাংলাদেশে টুঙ্গিপাড়ায়। তাঁর জন্ম ভারতের শিলিগুড়িতে। সুতরাং ভাগলে তিনিই ভাগবেন। আমি নই।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘শেয়ারবাজারে যে প্রণোদনা দেওয়া হয়েছে তাতে সমস্যা হওয়ার কথা নয়। তবে বিনিয়োগকারীদের বুঝতে হবে, এ ব্যবসায় ঝুঁকি আছে। শেয়ারবাজারে ঝুঁকি নিয়ে যেতে হবে। শুধু লাভ হবে, লোকসান হবে না—এমন ভাবা ঠিক নয়।’ তিনি পরামর্শ দিয়ে বলেন, ‘বাড়ি-জমি বিক্রি করে ও ব্যাংক ঋণ নিয়ে শেয়ারবাজারে যাবেন না। কারও তালে পড়ে, কানকথা শুনে শেয়ারবাজারে যাবেন না। বুঝে-শুনে সতর্কতার সঙ্গে শেয়ারবাজারে যাবেন।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘দেশের সামাজিক ও অর্থনৈতিক সূচক ভালো। যাদের জনমত নেই, ক্ষমতায় যাওয়ার খায়েশ আছে, তারা দেশ নিয়ে হতাশার কথা বলে। যারা যুদ্ধাপরাধীদের বাঁচাতে চায়, তারা বঙ্গবন্ধু হত্যাকারীদেরও বাঁচাতে চেয়েছিল। কিন্তু পারেনি। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার এ বাংলার মাটিতে হবেই। এ অভিশাপ থেকে দেশকে মুক্ত করতে পারলে দেশ হবে সমৃদ্ধ, উন্নত ও শান্তিপূর্ণ।’ prothom-alo
0 comments:
Post a Comment