গত বৃহস্পতিবার চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে সফলভাবে তার লিঙ্গ নির্ধারণী অস্ত্রোপচারের প্রথম ধাপ শেষ হয়েছে। সুমেতা এখন ছেলেশিশুতে পরিণত হয়েছে। তার নাম পাল্টে নতুন নাম দেওয়া হয়েছে সুমেদ চাকমা।
চিকিৎসকেরা বলেছেন, কিছুদিন পর দ্বিতীয় দফা অস্ত্রোপচার করলে শিশুটি সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে উঠবে।
গত বুধবার থেকে গতকাল শনিবার পর্যন্ত চমেক হাসপাতালের শিশু-সার্জারি ওয়ার্ডে সুমেদের মতো লৈঙ্গিক সমস্যায় ভোগা ১০ জন শিশু-কিশোরের লিঙ্গ নির্ধারণী অস্ত্রোপচার হয়েছে। অস্ত্রোপচার ছাড়াও এ ধরনের আরও ৪০ জন শিশু-কিশোরকে বিভিন্ন ধরনের চিকিৎসা ও থেরাপি দেওয়া হয়। ‘লাইভ অপারেটিভ ওয়ার্কশপ অন ইন্টারসেক্স ডিস-অর্ডার’ শীর্ষক এক কর্মশালার অংশ হিসেবে এ ধরনের রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
অস্ট্রেলিয়ার রয়েল চিলড্রেনস হাসপাতালের অধ্যাপক জন এম হাটসন ও চমেক হাসপাতালের শিশু-সার্জারি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক তাহমিনা বানুর নেতৃত্বে এসব অস্ত্রোপচার করা ও চিকিৎসা দেওয়া হয়। বিভাগের অন্য চিকিৎসকেরা এতে সহযোগিতা করেন।
অধ্যাপক তাহমিনা বানু বলেন, ‘প্রতি ১৫ হাজারের মধ্যে একজন শিশু এ ধরনের ত্রুটি নিয়ে জন্মগ্রহণ করে থাকে। এর মূল কারণ হিসেবে জেনেটিক ত্রুটি অথবা গর্ভাবস্থায় মাত্রাতিরিক্ত কিংবা প্রয়োজনের চাইতে স্বল্প মাত্রায় পুরুষ হরমোনের উপস্থিতিকে দায়ী করা হয়। তবে এর চিকিৎসা রয়েছে। সামাজিক অবহেলার কথা মাথায় না নিয়ে অভিভাবকদের উচিত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া।’
জানা গেছে, এর আগে ২০০৮ সালে জন এম হাটসনের তত্ত্বাবধানে একই হাসপাতালে এ ধরনের ১২ জন শিশু-কিশোরের অস্ত্রোপচার করা হয়েছিল। এবার তাদের আবার শারীরিক পরীক্ষা করা হয়েছে। তারা সুস্থ ও স্বাভাবিক আছে বলে জানা গেছে।
চিকিৎসকেরা জানান, অনেক মেয়ে ছেলের মতো অথবা ছেলে মেয়ের মতো যৌনাঙ্গ নিয়ে জন্ম নিতে পারে। এমনকি একই শিশুর দেহে উভয় ধরনের লিঙ্গের উপস্থিতিও থাকতে পারে। এসব রোগীকে নিয়ে জন হাটসন কাজ করেন। এই বিষয়ের ওপর তাঁর লেখা একাধিক বই রয়েছে।
এ প্রসঙ্গে জন হাটসন গতকাল এই প্রতিবেদকের উপস্থিতিতে চিকিৎসক ও শিক্ষার্থীদের বলেন, ‘জন্মগত এই সমস্যাটি নিয়ে এখন অনেক উন্নতমানের চিকিৎসাপদ্ধতি রয়েছে। এতে ভয়ের কিছু নেই। খুব সহজ চিকিৎসা এটি।’
হাটসনের তত্ত্বাবধানে এবার যাদের অস্ত্রোপচার করা হয়েছে, সেই শিশুরা এখনো হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে। তাদের অভিভাবকদের চোখেমুখে ফুটেছে আনন্দের ঝিলিক।
হাটহাজারীর সাইফুল ইসলামের (৬) মা নার্গিস আক্তার ছেলের শয্যাপাশে বসে জানালেন, ছোটবেলা থেকেই উভয় লিঙ্গের বৈশিষ্ট্য ছিল সাইফুলের মধ্যে। আচরণে পুরুষ ও নারী উভয় লিঙ্গের অভিব্যক্তি থাকায় সবাই তাকে নিয়ে হাসি-ঠাট্টা করত। নার্গিস বলেন, চিকিৎসকেরা আশ্বস্ত করেছেন সাইফুল ভালো হয়ে যাবে। এখন তিনি স্বস্তিবোধ করছেন।
চিকিৎসকেরা বলেছেন, গত শুক্রবার অস্ত্রোপচার করে সাইফুলের শরীর থেকে স্ত্রী বৈশিষ্ট্যের চিহ্ন ওভারি কেটে ফেলে দেওয়া হয়। অন্যদিকে মিরসরাইয়ের রকিনাকে (১২) অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে পুরোপুরি মেয়েতে রূপান্তরিত করা হয়। চিকিৎসকদের মতে, যার মধ্যে যে লিঙ্গের বৈশিষ্ট্য বেশি মাত্রায় থাকে, তাকে ওই লিঙ্গে রূপান্তর করলে জটিলতা কম হয়। অস্ত্রোপচারের পর ধীরে ধীরে ওই শিশু-কিশোরের মধ্যে বিপরীত লিঙ্গের আচরণ প্রবণতা কমে যেতে থাকে।
চমেক হাসপাতালে এ ধরনের চিকিৎসা হয় জানিয়ে তাহমিনা বানু বলেন, ‘জটিল প্রকৃতির রোগীদের আমরা এবার ডেকেছি। যাতে উনি (এম হাটসন) নিজে তাদের চিকিৎসা দিতে পারেন।’
তাহমিনা বলেন, ‘হাটসন নিজ খরচে আমাদের শেখানোর জন্য বারবার এখানে আসেন।’ prothom-alo
0 comments:
Post a Comment