সূর্য থেকে আকারে বহুগুণ ছোট হলেও সূর্য-গ্রহণের সময় চাঁদ কিভাবে সূর্যকে পুরোপুরি ঢেকে ফেলে?
চাঁদ সূর্য থেকে অনেক ছোট, এটা সবারই জানা। কিন্তু দেখা যায় যে, সূর্য-গ্রহণের সময় এ ছোট চাঁদই সূর্যকে পুরোপুরি ঢেকে ফেলে। সূর্য থেকে আকারে ছোট হয়েও এটা কিভাবে সম্ভব?তাহলে কি ধরে নিতে হবে সূর্য চাঁদের চেয়ে অনেক বড় হলেও আকাশে দেখতে চাঁদ ও সূর্য উভয়ই একই আকারের হয়ে যায়। হ্যাঁ, প্রকৃতপক্ষে ব্যাপারটা ঐ রকমই এবং নিতান্তই একটি আকস্মিক ঘটনা।
বাস্তবে, সূর্যের ব্যাস চাঁদের চেয়ে ৩৭৫ গুণ বড় কিন্তু পৃথিবী থেকে সূর্যের দূরত্বও চাঁদের চেয়ে প্রায় ৩৭৫ গুণ বেশি। যার ফলে, পৃথিবী থেকে দেখলে চাঁদ এবং সূর্যের কৌণিক দূরত্ব ও ব্যাস সমান দেখায়। তাই, পৃথিবী থেকে এই দুই মহাজাগতিক বস্তুর আকার প্রায় সমান দেখায়, যা একেবারেই কাকতালীয়।
চাঁদে মানুষ থাকলে তারা কি আমাদের মতোই সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত দেখতে পেত?
আমরা জানি, পৃথিবী সূর্যের চারদিকে ঘোরে। পৃথিবীর এ ঘূর্ণনের ফলেই আমরা পৃথিবী থেকে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত দেখতে পাই।অপর দিকে, চাঁদ কিন্তু মূলত পৃথিবীর চারদিকে ঘোরে। চাঁদের ষোলকলা পূর্ণ করে এক অমাবশ্যা থেকে আরেক অমাবশ্যায় পৌঁছাতে সময় লাগে সাড়ে ২৯ দিন। অর্থাৎ চাঁদ সাড়ে ২৯ দিনে পৃথিবীকে একবার প্রদক্ষিন করে। সুতরাং চাঁদে কোনও মানুষ থাকলে সে দেখতো সূর্য ওঠার পর ধীরে ধীরে সাড়ে ২৯ দিনে অস্ত যায়।
আমরা চাঁদকে কেমন দেখি? চাঁদ থেকেই বা পৃথিবী কেমন দেখা যায়?
এটা আবার কেমন প্রশ্ন, আমরা তো চাঁদকে স্পষ্টই দেখি- কখনও গোল, কখনও অর্ধেক অথবা মাঝেমাঝে পৃথিবীর ছায়ার কারণে অদৃশ্য। এতো রূপের কারনও তো আমরা ভালোমতোই জানি। নতুন আবার কোন রূপ সৃষ্টি হলো?না, না, নতুন কোনও রূপ সৃষ্টি হয়নি। বরংচ আপনি বরাবরই চাঁদের অর্ধেক রূপ দেখেছেন, দেখছেন এবং দেখবেন। বাকি অর্ধেক কখনই না। মানে?
চাঁদের ঘূর্ণনটি সঙ্কালিক অর্থাৎ ঘূর্ণনের সময় সবসময় চাঁদের একটি পৃষ্ঠই পৃথিবীর দিকে মুখ করা থাকে। চাঁদের যে পৃষ্ঠটি পৃথিবীর দিকে মুখ করে থাকে তাকে নিকট পার্শ্ব বলা হয় এবং এর বিপরীত পৃষ্ঠটিকে বলা হয় দূর পার্শ্ব।
চাঁদের যে পিঠটি আমরা দেখি তার ঠিক মধ্যবিন্দুতে কেউ অবস্থান করলে দেখবে, পৃথিবী ঠিক তার মাথার উপর। আর সে যদি চাঁদের প্রান্তবিন্দুতে অবস্থান করে তাহলে সে দেখবে, পৃথিবী যেন দিগন্তরেখায় ঝুলে রয়েছে। যা মাঝেমাঝে অস্ত যায় আবার মাঝেমাঝে উঁকি মারে। এরকম হওয়ার কারন হলো, চাঁদ তার কক্ষপথে ঘোরার সময় সামান্য এপাশ-ওপাশ দুলে ঘোরে। এ কারনেই পৃথিবীকে ওঠা-নামা করতে দেখা যাবে।
চাঁদে মানুষ থাকলে কি পৃথিবীর মানুষের চেয়ে লম্বা হতো?
ধরা যাক, কোনও শিশু ভুমিষ্ঠ হওয়ার সাথে সাথে তাকে চাঁদে নিয়ে রাখা হলো এবং সেখানে তাকে বড় করা হলো। এখন প্রশ্ন হলো, ঐ শিশুটি কি পৃথিবীর মানুষের তুলনায় আকারে লম্বা হবে?এরকম অদ্ভুত প্রশ্ন জাগার কারন হলো চাঁদের মাধ্যাকর্ষণ শক্তির তুলনায় অনেক কম, মাত্র ছয় ভাগের এক ভাগ। অর্থাৎ কারো ওজন পৃথিবীতে ৬০ কেজি হলে চাঁদে তার ওজন হবে ১০ কেজি। সুতরাং প্রশ্ন জাগে যেহেতু চাঁদ মানুষকে বেশি জোরে টেনে ধরবে না বা আকর্ষণ করবে না, তাই সেখানে বাস্তবে মানুষ লম্বা হবে কিনা তা পরীক্ষা সাপেক্ষ ব্যাপার।
কিন্তু এটা মনে রাখা দরকার যে- মানুষের উচ্চতার উপর মাধ্যাকর্ষণ শক্তির প্রভাব নগণ্য। লম্বা হওয়ার বিষয়টি পুরোপুরি জেনেটিক কোড দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। হাঁড় ও পেশীর বৃদ্ধি ঘটে কোষ বিভাজনের মাধ্যমে। তাই এটা একটি জীনগত বৈশিষ্ট্য। যেমন- লম্বা বাবা-মায়ের ছেলে-মেয়েরা সাধারণত লম্বা হয়। পাশাপাশি প্রয়োজনীয় পুষ্টি ও খাদ্য শরীর গঠনে একান্ত অপরিহার্য।
তাই, চাঁদে মানুষ থাকলে তারা লম্বা হতো, এ ধারনাটি নিয়ে মাথা ঘামানোর কোনও দরকার নেই। আর যেহেতু অভিকর্ষজ শক্তির প্রভাব নগণ্য তাই নির্দ্বিধায় হাঁটা-চলা করুন, সারাদিন শুয়ে থেকে লম্বা হওয়ার চিন্তা বাদ দেয়াই ভালো।
Source
0 comments:
Post a Comment