পার্বত্য এলাকার বাগানমালিক ও কৃষিবিদদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আগে পার্বত্য চট্টগ্রামের আদিবাসীরা নিজেরা খাওয়ার জন্য বাড়ির আঙিনায় দু-একটি জাম্বুরা ফলের গাছ রোপণ করতেন। বাণিজ্যিক চাষ হতো না। কোথাও বীজ পড়লে প্রাকৃতিকভাবেই গজিয়ে উঠত চারা। এভাবেই দীর্ঘদিন চলছিল পার্বত্য চট্টগ্রামে জাম্বুরার ফলন।
চাষিরা জানান, ১০-১২ বছর ধরে ধীরে ধীরে সমতলের জেলাগুলোতে জাম্বুরার চাহিদা বাড়ছে। পার্বত্য চট্টগ্রামের তিন জেলা রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান থেকে এখন ট্রাক ভর্তি করে প্রতিদিন জাম্বুরা নিয়ে যাওয়া হচ্ছে সমতলের বিভিন্ন শহরে। সমতলের শহরগুলোর ফলের দোকানে ও ফুটপাতে এ ফলটি বিক্রি হয় প্রচুর। রাঙামাটি শহরে এখন আকারভেদে জাম্বুরা বিক্রি হচ্ছে ১০ থেকে ৩০ টাকা পর্যন্ত। বাজারজাতকরণের সুবিধা ও চাহিদার কারণেই পাহাড়ে অনেক জাম্বুরার বাগান গড়ে উঠেছে।
পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের কমলা ও মিশ্রফল চাষ প্রকল্পের পরিচালক কৃষিবিদ মো. শফিকুল ইসলাম জানান, অম্লীয় মাটিতে জাম্বুরার ফলন ভালো হয়। পার্বত্য এলাকার মাটি ও আবহাওয়া ফলটির উপযোগী।
জাম্বুরা সংগ্রহের সময় আগস্ট থেকে নভেম্বর পর্যন্ত। তবে কিছু কিছু গাছে সারা বছর ফলন হয় বলে বাগানমালিকেরা জানান। পাহাড়ে জাম্বুরার আকার ও রং বেশ ভালো হয়েছে। এক কেজি থেকে দুই কেজির পর্যন্ত ওজন হচ্ছে ফলের। পাকলে দৃষ্টিনন্দন হলুদ রং।
রাঙামাটি কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের সদ্য সাবেক উপপরিচালক কাজল তালুকদার জানান, জাম্বুরা পার্বত্য চট্টগ্রামে অর্থনৈতিক সম্ভাবনাময় একটি ফল। ভিটামিন ‘সি’ ও ওষধি গুণসম্পন্ন জাম্বুরা কমলা, আনারস বা অন্যান্য মৌসুমি ফলের মতো সহজে পচনশীল নয়। তাই পরিবহন সহজ। বাগান পরিচর্যায় খরচও কম। পাহাড়ের ঢালুতে শিলামাটিতে জাম্বুরার ফলন ভালো হয়। গাছ ৩০ থেকে ৩৫ বছর পর্যন্ত ভালো ফল দেয়।
রাঙামাটি কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, পার্বত্য চট্টগ্রামের আবহাওয়া জাম্বুরা চাষের উপযোগী। ২০১০-১১ অর্থবছর রাঙামাটি জেলায় ৫০০ একরের বেশি পাহাড়ে জাম্বুরার চাষ হয়েছে এবং এর পরিমাণ প্রতিবছর বাড়ছে বলে কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের তথ্যে জানা গেছে।
নানিয়ারচর উপজেলার সদর ইউনিয়নের হাতিমারা গ্রামের বাগানমালিক সত্য বিকাশ চাকমা জানান, এ বছর তাঁর বাগানের ৫০টি জাম্বুরা গাছের ফল বিক্রি করে পেয়েছেন প্রায় আড়াই লাখ টাকা। সত্য বিকাশ জানান, প্রতি একর পাহাড়ে চার শতাধিক জাম্বুরা গাছ রোপণ করা যায়। প্রাপ্ত বয়স্ক গাছে বছরে ৪০০ থেকে ৫০০টি ফল দেয়। এর মধ্যে ৩৫০ থেকে ৪০০টি ফল বিক্রির উপযোগী হয়।
রাঙামাটি সদর উপজেলার বন্দুভাঙ্গা ইউনিয়নের কুমুরো পাড়ার বাগানমালিক পদ্ম কুমার চাকমা জানান, তাঁর বাগানে প্রায় ১০০টি গাছে জাম্বুরা ধরেছে। রাঙামাটি শহরের বনরূপা বাজারে জাম্বুরা বিক্রি করতে আসা সদর উপজেলার কুতুকছড়ি ইউনিয়নের ধাজ্যেছড়ি গ্রামের কালাসোনা চাকমা, মাইচছড়ি গ্রামের কল্পনা চাকমা, বালুখালী ইউনিয়নের শঙ্খলাল চাকমা জানান, একসময় অবহেলিত জাম্বুরা ফল এখন তাঁদের পরিবারে সচ্ছলতা এনেছে। সমতলের অনেক মৌসুমি ফল ব্যবসায়ী জাম্বুরা কেনার জন্য বাগানমালিকদের আগাম টাকাও দিচ্ছেন।
0 comments:
Post a Comment