পশ্চিমাদের চিরকালই উপেক্ষা করে এসেছিলেন মুয়াম্মার গাদ্দাফি, তাই তার মৃত্যুতে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন বারাক ওবামাসহ প্রায় সব পশ্চিমা নেতা। তবে মার্কিনবিরোধী হুগো শাভেজের চোখে গাদ্দাফি ছিলেন একজন দেশপ্রেমিক যোদ্ধা।
এ বছরের শুরুতেই আরব জাগরণের ঢেউয়ে টলমল হয়ে পড়ে কর্নেল গাদ্দাফির ৪২ বছরের শাসনের ভিত। এর ধারাবাহিকতায় গত অগাস্টে রাজধানী ত্রিপোলি দখল করে বিদ্রোহী বাহিনী ন্যাশনাল ট্রানজিশনাল কাউন্সিল (এনটিসি), যারা লিবিয়ার শাসক হিসেবে ইতোমধ্যে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পেয়েছে।
রাজধানীর দখল হারানোর পর গাদ্দাফি তার অনুগত বাহিনীকে নিয়ে আশ্রয় নিয়েছিলেন জন্মশহর সির্তে। ন্যাটো বাহিনীর সমর্থনে বুধবার সেই শহরেও ঢুকে পড়ে এনটিসি বাহিনী।
বৃহস্পতিবার একটি সুরঙ্গ থেকে আটকের পরপরই গুলিতে নিহত হন গাদ্দাফি, অনুগতদের কাছে যিনি 'আফ্রিকার সিংহ' হিসেবে পরিচিত ছিলেন। অন্তর্র্বতী সরকার বলছে, আটকের পর গাদ্দাফি বাহিনীর সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধের সময় নিহত হন ক্ষমতাচ্যুত শাসক।
গাদ্দাফির মৃত্যুর খবর অন্তর্র্বতী সরকার নিশ্চিত করার পরপরই বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রনায়কদের প্রতিক্রিয়া আসতে থাকে। সিএনএন ও গার্ডিয়ান সন্নিবেশিত হলো বিশ্বনেতাদের প্রতিক্রিয়া।
বারাক ওবামা, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট
বিশ্বের দীর্ঘতম সময় ধরে ক্ষমতায় থাকা একনায়কদের অন্যতম ব্যক্তিটি (গাদ্দাফি) আর নেই। দৌর্দণ্ডপ্রতাপশালী ওই শাসকের কালোছায়া অপসারিত হয়েছে। আমরা নিশ্চিতভাবে ঘোষণা করছি, গাদ্দাফি জমানার অবসান হয়েছে। কিন্তু সামনে কঠিন পথ পাড়ি দিতে হবে।
গাদ্দাফি প্রসঙ্গে এসব কথা বলার পাশাপাশি ওবামা মধ্যপ্রাচ্যের অন্যান্য একনায়কদের প্রতিও হুঁশিয়ারি জানান। বিশেষ করে সিরিয়া প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদকে সতর্ক করেন। ওবামার ভাষ্যে লিবিয়ার পর তার পরবর্তী লক্ষ্য সিরিয়া- এ বিষয়টিরই আভাস পাওয়া গেছে।
বান কি মুন, জাতিসংঘ মহাসচিব
আজ লিবিয়ায় গাদ্দাফির ৪২ বছরের শাসনের অবসান হলো। লিবিয়া এখন তার বেদনাদায়ক ও রক্তাক্ত অধ্যায়ের পরিসমাপ্তি ঘটিয়ে সাম্য, ন্যায়বিচার, মানবাধিকারের প্রতি শ্রদ্ধাশীল একটি জাতি হিসেবে নতুন করে যাত্রা শুরু করবে। এই ঐতিহাসিক মুহূর্তে আমি লিবিয়ার জনগণকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানাই। এখন সময় পুনর্গঠনের, কোনো প্রতিশোধের নয়।
অ্যান্ড্রেস ফগ রাসমুসেন, ন্যাটো মহাসচিব
৪২ বছর পর কর্নেল গাদ্দাফির ভয়াবহ শাসন থেকে মুক্ত হয়েছে লিবিয়া। দেশটির ইতিহাসে দীর্ঘ অন্ধকারের পর নতুন দিনের পৃষ্ঠা খোলা হয়েছে। এখন লিবিয়ার জনগণ সত্যিকার অর্থেই তাদের ভবিষ্যতের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে পারবে। আমি লিবিয়ার জনগণের প্রতি, সব ভেদাভেদ ভুলে একসাথে উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ গড়ার কাজে অংশ নেওয়ার আহ্বান জানাই। জাতীয় অন্তর্র্বতীকালীন পরিষদের প্রতি অনুরোধ, সাধারণ জনগণ যেন কোনো ধরনের নিপীড়নের শিকার না হয়। পাশাপাশি গাদ্দাফি অনুগত বাহিনীর প্রতিও সহিষ্ণুতা প্রদর্শন করুন।
ডেভিড ক্যামেরন, যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী
গাদ্দাফি যাদের হত্যা করেছিলেন, সেইসব মানুষগুলোকে স্মরণ করার দিন আজ। লকারবি বিমান দুর্ঘটনায় যারা নিহত হয়েছেন তাদের স্মরণ করছি। লিবিয়ার অনেক মানুষ গাদ্দাফির নির্মম শাসনে প্রাণ হারিয়েছেন, আমি তাদেরও স্মরণ করছি।
আঙ্গেলা ম্যার্কেল, জার্মান চ্যান্সেলর
লিবিয়ার জনগণের জন্য এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ দিন। যে রক্তাক্ত যুদ্ধ গাদ্দাফি নিজেই তার জনগণের ওপর চাপিয়ে দিয়েছিলেন তার অবসান হলো। এখন দেশটিতে নতুন শান্তিপূর্ণ রাজনৈতিক সূচনার পথ সুগম হলো।
নিকোলা সারকোজি, ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট
গত আট মাস লিবিয়ার জনগণ যে অবর্ণনীয় দুর্দশার ভেতর দিয়ে অতিবাহিত করেছে, গাদ্দাফির মৃত্যু সেই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। ৪০ বছরেরও বেশি সময় ধরে একনায়কতন্ত্রের কবলে থাকা দেশটির জনগণ নিজেদের মুক্ত করতে সক্ষম হলো।
জুলিয়া গিলার্ড, অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী
মুয়াম্মার গাদ্দাফির মৃত্যুর এই ঘটনা লিবিয়ার জনগণের জন্য এক ঐতিহাসিক মুহূর্ত। এর মধ্যদিয়ে এক নির্দয় শাসকের ৪২ বছরের নির্মম রক্তাক্ত শাসনের অবসান ঘটলো, যিনি লিবিয়ার জনগণের বৈধ অধিকার ও চাওয়ার প্রতি নজর দিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিলেন।
হুগো শ্যাভেজ, ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট
আমি কিউবার নেতা রাউল কাস্ত্রোর সাথে কথা বলেছিলাম। তিনি জানিয়েছিলেন, গাদ্দাফি নিশ্চিতভাবেই নিহত হতে যাচ্ছেন। এখন গাদ্দাফি সত্যিই নিহত হয়েছেন। তাকে হত্যা করা হয়েছে। আমি কী বলতে পারি? সারা জীবন আমি গাদ্দাফিকে একজন মহান যোদ্ধা, বিপ্লবী এবং দেশপ্রেমিক হিসেবে স্মরণ করে যাবো।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম/
0 comments:
Post a Comment