এলাকাবাসী ও পরিবার সূত্রের ভাষ্যমতে, নাহার বানুর বাড়ি দিনাজপুরের পার্বতীপুর উপজেলার নতুন বাজার গ্রামে। তার বাবা শমসের আলী রংপুরের একটি চায়নিজ রেস্তোরাঁয় কাজ করেন। বাবার আর্থিক অসচ্ছলতার কারণে নাহার ঠাকুরগাঁও শহরের নিশ্চিন্তপুর গ্রামে মামা মাকসুদুল আলমের বাড়িতে থেকে লেখাপড়া করত। পড়ত ঠাকুরগাঁও সরকারি মহিলা কলেজের একাদশ শ্রেণীতে। গত মাস থেকে এলাকার কিছু লোক অপবাদ ছড়িয়ে দেয়, নাহার অবৈধ সম্পর্কের মাধ্যমে অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়ে এবং গর্ভপাত ঘটায়। এ অপবাদ সইতে না পেরে গত শনিবার সে বিষপান করে। রোববার রাতে দিনাজপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।
বিষপানের আগে নাহারের লিখে যাওয়া আট পাতার একটি চিঠি উদ্ধার করেছে পুলিশ। এতে সে প্রথমেই বাবা-মাকে উদ্দেশ করে লিখেছে, ‘আমাকে ক্ষমা করবেন। আমাকে ঘিরে আপনাদের অনেক স্বপ্ন। স্বপ্নগুলো আর পূরণ করতে পারব না। আপনাদের সম্মান রক্ষার জন্য সব সময় নিরাপদে চলাচল করি। আমার কোনো ছেলেবন্ধু নেই, তবুও একটি অপবাদ দেওয়া হলো। এ অপবাদ আমার পক্ষে সারা জীবন বয়ে বেড়ানো সম্ভব নয়। আমি কোনো পাপ করিনি, কিন্তু এ অপবাদ সহ্য করতে পারছি না। আপনাদের সব স্বপ্ন নষ্ট করে দিলাম।’
নাহার লিখেছে, ‘পাশের বাড়ির খালা, মোহাম্মদ আলী মামা ও কয়েকজন মানুষ আমার সুন্দর ভবিষ্যৎ নষ্ট করে দিল। আমি তো কারও কোনো ক্ষতি করেছি বলে মনে পড়ে না। কিন্তু এরা যে ক্ষতিটা আমার করল তা অপূরণীয়।’
নাহারের বাবা শমসের আলী অভিযোগ করেন, পলাশ নামের এলাকার একজন যুবক নাহারকে বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছিলেন। কিন্তু পলাশের এক খালা ও মামা মোহাম্মদ আলী নাহারের বিরুদ্ধে অপবাদ রটিয়ে তাঁকে বিয়ে না করার জন্য পলাশকে বলেন। এরপর অন্য জায়গা থেকেও নাহারের বিয়ের প্রস্তাব এলে অপবাদের কথা জানতে পেরে ছেলেপক্ষ ফিরে যায়।
পলাশের উদ্দেশে নাহার লিখে গেছে, ‘আপনাকে আমি সব সময় বড় ভাইয়ের মতো দেখেছি। আমার যত অপবাদ সব আপনার নানাবাড়ি থেকেই দেওয়া হয়েছে। আমি নিষ্পাপ, এটা তারা ভালো করেনি। ওরা আমার ও আমার পরিবারের অনেক ক্ষতি করে ফেলল।’
সবশেষে নাহার লিখেছে, ‘আত্মহত্যা মহাপাপ, তবুও বাধ্য হলাম এই পাপ করতে। আল্লাহ তুমি আমার মান-সম্মান রক্ষা করো।’
দিনাজপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে ময়নাতদন্ত শেষে গত সোমবার বিকেলে নাহারের লাশ তার মামার বাসায় নিয়ে আসার পর তার আত্মীয়স্বজন, সহপাঠী ও শিক্ষকসহ প্রতিবেশীরা কান্নায় ভেঙে পড়েন।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে মোহাম্মদ আলী প্রথম আলোকে বলেন, ‘মুক্তার নামে এলাকার লোকজনের নানা কথা শুনে পলাশকে বলেছিলাম তাঁকে বিয়ে না করতে। মামা হিসেবে সেটা তো করতে পারি। কিন্তু আমি বা আমরা তো কোনো অপবাদ রটাইনি।’
এ বিষয়ে ঠাকুরগাঁওয়ের পুলিশ সুপার (এসপি) মো. শাহ আলম বলেন, ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে মেয়েটির বিরুদ্ধে অপবাদ রটানোর অভিযোগ পাওয়া গেছে। উদ্ধার করা হয়েছে আট পাতার একটি চিঠি। তবে চিঠিটি নাহারের নিজের লেখা কি-না তা যাচাই করতে মেয়েটির ক্লাসের কয়েকটি খাতা উদ্ধার করে আনা হয়েছে। এখন পর্যন্ত মামলা হয়নি, পুলিশ বিষয়টি তদন্ত করে দেখছে।
0 comments:
Post a Comment