জানা গেছে, সরকারের ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার অঙ্গীকার বাস্তবায়নে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের ‘তথ্য প্রবেশাধিকার প্রকল্পের’ (এটুআই) আওতায় পরীক্ষামূলকভাবে উপজেলার ৪২টি মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও মাদ্রাসায় ৪৭০টি এবং মানিকগঞ্জের শিবালয় উপজেলার ২২টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ২৭০টি ল্যাপটপ বিতরণ করা হয়। গত বছরের নভেম্বরে দুই উপজেলার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোয় ল্যাপটপ বিতরণের কাজ শেষ হয়। প্রসেসর নির্মাতাপ্রতিষ্ঠান ইন্টেলের কাছ থেকে ২০১০ সালে প্রধানমন্ত্রী এসব ল্যাপটপ উপহার পেয়েছিলেন।
এটুআই প্রকল্পের সহায়ক প্রতিষ্ঠান ব্র্যাকনেটের নির্বাহী তাওহিদ শরীফ মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘সরকারের ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে এবং প্রত্যন্ত এলাকার শিক্ষার্থীদের মধ্যে কম্পিউটার-ভীতি দূর করতে এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ল্যাপটপ বিতরণ করা হয়। বিতরণের সময় আমরা সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান প্রধানদের ল্যাপটপগুলো যথাযথভাবে শিক্ষার্থীদের ব্যবহারের সুযোগ দেওয়া এবং যাতে ব্যক্তিগত কাজে কেউ ব্যবহার না করা হয় এমন নির্দেশনা দিয়ে এসেছিলাম। এরপর খোঁজ নিয়ে জানতে পেরেছি, বেশির ভাগ ল্যাপটপই ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার করছেন সংশ্লিষ্টরা। যা খুবই দুঃখজনক ও অনৈতিক।’
আমতলীর মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, একেকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সর্বনিম্ন সাতটি থেকে সর্বোচ্চ ২৬টি ল্যাপটপ দেওয়া হয়।
আমতলীর বগীরহাট মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ১২টি ল্যাপটপের সবগুলোই শিক্ষক ও ব্যবস্থাপনা কমিটির কর্মকর্তারা ভাগবাটোয়ারা করে নিয়েছেন বলে স্থানীয় অভিভাবকেরা অভিযোগ করেছেন। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আ. লতিফ বলেন, ‘আমাদের বিদ্যালয়ে কম্পিউটার বিষয়টি এখনো ওপেন (খোলা) করিনি। তাই ল্যাপটপগুলো শিক্ষকেরা তাঁদের প্রয়োজনে বাড়ি নিয়ে যান, আবার সকালে নিয়ে আসেন। আরেকটি ল্যাপটপ বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির সাবেক সভাপতি নিয়েছিলেন এবং বেশ কিছুদিন ব্যবহারের পর ফেরত দিয়ে গেছেন।’
লোচা নিম্নমাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ১০টি ল্যাপটপ বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির নেতা-শিক্ষকেরা তাঁদের ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার করছেন বলে অভিযোগ আছে। এই বিদ্যালয়ে কম্পিউটার বিষয় নেই। প্রধান শিক্ষক মান্নান মাসুদ এসব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘এগুলো সভাপতির বাড়িতে থাকে। মাঝেমধ্যে বিদ্যালয়ে এনে শিক্ষার্থীদের অন-অফ করা শেখানো হয়।’
একইভাবে আমতলী কমডেকা নিম্নমাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের আটটি ল্যাপটপ শিক্ষকেরা ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার করছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এই বিদ্যালয়েও কম্পিউটার বিষয়টি নেই। বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণীর ছাত্রী হালিমা খানম ও অষ্টম শ্রেণীর ছাত্রী মাসুমা আকতারকে কম্পিউটার চেনে কি না জিজ্ঞেস করলে তারা বলে, ‘মোরা জীবনেও কম্পিউটার দেহি নায়। হুনছি আমাগো স্কুলে নাকি কম্পিউটার আছে।’ প্রধান শিক্ষক আ. রাজ্জাক বলেন, ‘অফিসের কাজকর্ম করতে আমি একটি ল্যাপটপ সঙ্গে রাখি।’ অন্য শিক্ষকেরাও তো ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার করেন—এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘কয়েকজন শিক্ষক মাঝেমধ্যে নেন, তারপর কাজ করে আবার স্কুলে নিয়ে আসেন।’
তবে ছোট ভাইজোড়া সালেহিয়া মাদ্রাসার সুপার আবু সালেহ বলেন, ‘আমরা এসব ল্যাপটপ শিক্ষার্থীদের পাঠদানের কাজে ব্যবহার করি।’ কড়ইবাড়িয়া দাখিল মাদ্রাসার সুপার আ. সবুর বলেন, ‘ছয়টি ল্যাপটপই আমাদের ল্যাবে আছে, এগুলো দিয়ে শিক্ষার্থীদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে।’
আমতলীর মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা গোলাম মোস্তফা প্রথম আলোকে বলেন, ‘বেশ কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে এ ধরনের অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি তদন্ত করে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ source
0 comments:
Post a Comment