|
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম লন্ডন প্রতিনিধি
লন্ডন, ২২ সেপ্টেম্বর (বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম)- একের পর এক 'গাড়ি দুর্ঘটনা' দেখিয়ে বিভিন্ন বীমা কোম্পানি থেকে প্রায় ২০ লাখ পাউন্ড হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগে পাঁচ বাংলাদেশিকে দোষী সাব্যস্ত করেছে ব্রিটেনের আদালত।
অভিযোগের পক্ষে-বিপক্ষে যুক্তি-তর্ক শেষে বুধবার ক্রাউন কোর্ট পাঁচ বাংলাদেশিসহ ছয়জনকে দোষী সাব্যস্ত করে। অক্টোবরে এদের শাস্তি ঘোষণা করবে আদালত।
এরা হলেন- পশ্চিম লন্ডনের বাসিন্দা মোহাম্মদ শামসুল হক (২৬), ইলফোর্ডের বাসিন্দা রসুল ইউসুফ (৩৩), দক্ষিণ পশ্চিম লন্ডনের বাসিন্দা সেলিম মিয়া (২৯), নর্থ লন্ডনের বাসিন্দা নজরুল ইসলাম রহমান (৩২), লেইটনের বাসিন্দা নভিদ আখতার (৪০) ও ইলফোর্ডের বাসিন্দা হালিমুর রশীদ (২৮)।
মেট্রোপলিটন পুলিশ জানায়, এরা নিজস্ব ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে গাড়ি ভাংচুর করে দুর্ঘটনার গল্প বানিয়ে বীমা প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে অর্থ আদায় করতেন। গাড়ি গ্যারেজে নিয়ে আসা, স্টোরেজে রাখা এবং রিপ্লেসমেন্ট গাড়ির ব্যবস্থা করাসহ বিভিন্ন সেবা দেওয়ার অজুহাতে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের কাছে অর্থ দাবি করতেন তারা। আর ওই সব দাবির কাগজপত্র প্রস্তুত করা হতো লন্ডন ভিত্তিক কয়েকটি দুর্ঘটনা ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠানের (এক্সিডেন্ট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি) মাধ্যমে।
এ ধরনের ১২০টি 'ভুয়া' দাবির মাধ্যমে বীমা প্রতিষ্ঠান থেকে মোট ১১ লাখ ৭০ হাজার পাউন্ড আদায় করেন তারা। এছাড়া তাদের অর্থ দেওয়াসহ এসব ঘটনার মীমাংসায় মোট ১৯ লাখ ১০ হাজার পাউন্ড ব্যয় করে বীমা প্রতিষ্ঠান। ২০০৫ সালের নভেম্বর থেকে ২০০৮ সালের অক্টোবর মাস পর্যন্ত এসব প্রতারণার ঘটনা ঘটে।
পুলিশ জানায়, গাড়ি দুর্ঘটনার গল্প বানানো এবং বীমা প্রতিষ্ঠানের কাছে অর্থ দাবির প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে শামসুল হক লন্ডনের টোটেনহ্যামে 'মোটর অ্যালায়েন্স' নামে একটি 'দুর্ঘটনা ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠান' গড়ে তোলেন।
এসব ক্ষেত্রে পুরনো কম দামি গাড়ি ও বেশি দামি গাড়ির মধ্যে দুর্ঘটনা দেখানো হতো। বেশি দামের গাড়ির মালিক কম দামি গাড়ির মালিকের বীমা কোম্পানির কাছে অর্থ দাবি করতেন। মোটর অ্যালায়েন্স দামি গাড়ির মালিকের পক্ষে কাজ করতো।
মোটর অ্যালায়েন্সের পক্ষ থেকে বেশি দামি গাড়ির মালিককে রিপ্লেসমেন্ট কার হিসাবে বিএমডব্লিউ, জাগুয়ার ব্রান্ডের মতো উচ্চ মূল্যের গাড়ি দেওয়া হয়েছে দেখিয়ে তার জন্য সংশ্লিষ্ট বীমা প্রতিষ্ঠানের কাছে দৈনিক ৩৫০ পাউন্ড করে ভাড়া দাবি করা হতো।
একটি বীমা প্রতিষ্ঠানের অভিযোগ পেয়ে ২০০৮ সালের ১৫ অক্টোবর মোটর অ্যালায়েন্সের কার্যালয়ে অভিযান চালায় পুলিশ। শুধু একটি মার্সিডিজ গাড়িরই কয়েকটি দুর্ঘটনা দেখিয়ে ক্ষতিপূরণের ৬৪টি দাবির কাগজপত্রও উদ্ধার করা হয় সে সময়।
পুলিশ জানায়, একই ব্যক্তি বিভিন্ন দাবির সঙ্গে জড়িত এবং একই গাড়ি দিয়ে কয়েক দফা ক্ষতিপূরণ দাবি করা হয়েছে বলে তদন্তে পাওয়া গেছে। শামসুল হক বিভিন্ন সময় স্যামুয়েল হ্যাগ নাম ব্যবহার করেও এই কর্মকাণ্ড চালিয়েছেন।
এছাড়া একই গাড়ি একই সময়ে দুই-তিন জনের কাছে ভাড়া দেওয়া হয়েছে বলেও কাগজপত্রে পাওয়া গেছে। আসামিরা কিছু অর্থ দিয়ে অন্যের ড্রাইভিং লাইসেন্সের তথ্য ব্যবহার করতেন বলে জানিয়েছে পুলিশ।
তদন্তে দেখা যায়, মোটর অ্যালায়েন্সের গ্যারেজে গাড়ি ভাংচুরের জন্য 'ক্রাশিং পার্টি'র আয়োজন করা হতো। সাজানো দুর্ঘটনায় গাড়ির বেশি ক্ষতি না হলে বেইসবল ব্যাট দিয়ে আরো ভাংচুর করা হতো।
২০০৮ সালের ১৫ অক্টোবর শামসুল হক ও রসুল ইউসুফকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। সে বছরই নভিদ আখতার ও নজরুল ইসলাম রহমান গ্রেপ্তার হন। ২০১০ সালের জানুয়ারিতে হালিমুর রশিদ ও সেলিম মিয়াকে গ্রেপ্তার করা হয়।
এ বছর ১ জুলাই শামসুল হক, ৬ সেপ্টেম্বর নজরুল ইসলাম রহমান, ১৩ সেপ্টেম্বর রসুল ইউসুফ ও নভিদ আখতার, ১৪ সেপ্টেম্বর সেলিম মিয়া জালিয়াতি সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেন। ২০১০ সালের অগাস্টে হালিমুর রশীদ নিজেকে নির্দোষ দাবি করলেও ২১ সেপ্টেম্বর তাকেও দোষী সাব্যস্ত করে আদালত।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
0 comments:
Post a Comment