প্রাচীন মিসরীয়রা তাদের দেহের সৌন্দর্যচর্চার পাশাপাশি চুলের সৌন্দর্যচর্চার ব্যাপারেও ছিলেন বেশ যত্নশীল। আর এ জন্য তারা চুলে ব্যবহার করতেন বিশেষ প্রকারের চর্বিযুক্ত ‘জেল’। তাই জীবিত অবস্থায় তাদের চুলের স্টাইল যেমন ছিল, মৃত্যুর পর মমিতেও সেভাবেই রয়েছে। বহু পুরনো মমির চুলের উপাদান গবেষণা করে সম্প্রতি এ তথ্য জানিয়েছেন যুক্তরাজ্যের গবেষকরা।

যুক্তরাজ্যের ম্যানচেস্টার ইউনিভার্সিটির বায়োমেডিক্যাল ইজিপটোলজি সেন্টারের প্রত্নতাত্তি্বক গবেষক নাতালি ম্যাকক্রেস ও তাঁর সঙ্গীরা এ গবেষণা চালান। গবেষকরা মিসরের ১৮টি মমি থেকে চুলের নমুনা সংগ্রহ করেন। এসব মমির সবচেয়ে পুরনোটি আনুমানিক তিন হাজার ৫০০ বছর আগের এবং ডেখলে মরুভূমির এসব মমির বেশির ভাগই দুই হাজার ৩০০ বছরের পুরনো অর্থাৎ গ্রিক-রোমান সময়কালের। চুলের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে নারী-পুরুষ দুয়েরই মমি থেকে। এর মধ্যে তাদের বয়স ছিল সর্বনিম্ন চার বছর থেকে সর্বোচ্চ ৫৮ বছর।

এসব চুলের নমুনা সংগ্রহের পর গবেষকরা অনুবীক্ষণ যন্ত্রের সাহায্যে সেগুলো পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেন। উজ্জ্বল আলো ও ইলেক্ট্রনের ব্যবহার করে গবেষকরা দেখতে পান, ৯টি মমির চুলের ওপর চর্বিযুক্ত পদার্থ রয়েছে। গবেষকরা গ্যাস ক্রোমোটোগ্রাফি বা রং পৃথককরণ পদ্ধতির সাহায্যে ওই সব চুলের ওপরের আবরণে ফেটি এসিড, এর সঙ্গে প্লামাটিক এসিড ও স্টেয়ারিক এসিডের অস্তিত্ব দেখতে পান। এসব উপাদানের উপস্থিতি থেকেই গবেষকরা নিশ্চিত হয়েছেন, প্রাচীন মিসরীয়রাও চুলে চর্বিযুক্ত জেল ব্যবহার করত। এ গবেষণা প্রতিবেদন জার্নাল অব আর্কিওলজিক্যাল সাইন্সে প্রকাশ করা হয়েছে।

গবেষক দলের প্রধান নাতালি ম্যাকক্রেস বলেন, সম্ভবত ওই সময়কার মানুষ তাদের চুলের যত্নে বিশেষ মনযোগ দিতেন। কারণ তারা উপলব্ধি করতেন, মৃত্যুর পরও এ চুলকে অমর্যাদা করা হয় না। মমি করার সময়ও চুল অবিকৃত রাখা হয়।

লন্ডনের ব্রিটিশ জাদুঘরে মিসরের মমি সংগ্রাহক জন টেলর গবেষকদের এ তথ্যকে বিশ্বাসযোগ্য বলে মনে করছেন। তিনি বলেন, ওই সময় চুল ছিল মর্যাদা ও শ্রেণী চরিত্রের প্রতীক। সূত্র: ন্যাচার অনলাইন।

কালের কন্ঠ