গত ৩ আগষ্ট ২০১১ তারিখে কালের কন্ঠ পত্রিকার টেক বিশ্ব পাতায় “পাঁচ তরুণের ব্লগিং সাফল্য” শিরোনামে রিপোর্ট টি তৈরী হয়েছিল। যেখানে কিছু তরুন ব্লগার এবং তাদের গড়া অনলাইন সাপোর্টের সাফল্য সম্পর্কে তুলে ধরা হয়েছে এইভাবেঃ
তেজগাঁও কলেজের অনার্স তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী মাসুদুর রশীদের ইন্টারনেটে হাতেখড়ি ২০০৫ সালে। ইন্টারনেটে সার্চ আর ওয়েবসাইট ঘুরেফিরে বেড়ানোই ছিল তখন তাঁর একমাত্র কাজ। এভাবেই কেটে যায় প্রায় তিনটি বছর। ২০০৮ সালে তাঁর বড় ভাই জহিরুল ইসলাম মামুনের কাছ থেকে শেখেন নতুন এক মন্ত্র_ব্লগিং! অনেকে শখের বসে ব্লগিং শেখেন, ব্লগিং করেন। তবে মামুন শিখেছিলেন পেশাগতভাবে। ‘আমার মূল লক্ষ্য ছিল ব্যতিক্রম কিছু করা, ব্লগিংয়ে যুক্ত হওয়ার পর পরই অনেক ভালো লেগে যায় বিষয়টি। এরপর এটিকে পেশা হিসেবে কিভাবে নেওয়া যায়, সে বিষয়ে বিস্তারিত পরামর্শ পাই বড় ভাইয়ের কাছ থেকে।’ ব্লগিং ক্যারিয়ারে আসার শুরুটা এভাবেই বর্ণনা করেন মাসুদ। ব্লগিংকে ক্যারিয়ার হিসেবে গ্রহণ করে দুই বছরের মাথায়ই উল্লেখযোগ্য সাফল্য পেয়েছেন এ তরুণ। গত মাসে ব্লগ লিখে আয় করেছেন প্রায় এক লাখ ৪০ হাজার টাকা (এক হাজার ৯০০ ডলার)। তবে নিজের এ সাফল্যে থেমে থাকেননি মাসুদ। একই কলেজের সহপাঠী তাহের চৌধুরী সুমনকেও উৎসাহ দিয়েছেন ব্লগিংয়ে, হাতে-কলমে শিখিয়েছেন অনেক কিছু। সুমনের শুরুটা একেবারে গোড়া থেকেই হয়েছিল। ২০০৯ সালের শেষ দিকে তাঁর প্রথম ইন্টারনেট ব্যবহারের সুযোগ হয়। ওয়েব সার্ফিংয়েও তখন অনেকটাই কাঁচা ছিলেন তিনি। ২০১০ সালের প্রথম দিকে বন্ধু মাসুদের হাত ধরে তাঁরও শুরু হয় ব্লগিং ক্যারিয়ার। অল্প সময়ে তিনিও পেয়েছেন উল্লেখযোগ্য সাফল্য। আর মাসুদুরকে ব্লগিংয়ে যিনি হাতেখড়ি দিয়েছিলেন, সেই জহিরুল ইসলাম মামুনও এ সময়ের মধ্যে অন্যদের চেয়ে বেশ এগিয়ে গেছেন ব্লগিংয়ে। এই দলের তত্ত্বাবধানেই স্বল্প সময়ে সাফল্য পান আরো দুই তরুণ_দিপু শিকদার ও মাসুদুর রহমান। ইন্টারনেটে নিজ নিজ বিষয়ে এখন সবাই প্রায় প্রতিষ্ঠিত ব্লগার, তাঁদের মাসিক আয়ও বেশ উৎসাহজনক।
সমস্যা, তবুও!
বিভিন্ন বিষয় নিয়ে ওয়েবসাইটে লেখালেখি করাকেই মূলত ব্লগিং বলা হয়ে থাকে। আর এসব ওয়েবসাইটে জনপ্রিয়তা পাওয়ার পর সেখানে বিজ্ঞাপন বসিয়ে আয় করতে পারেন ব্লগাররা। এ ক্ষেত্রে বিজ্ঞাপন প্রচারের জন্য সবচেয়ে ভালো প্ল্যাটফর্ম হলো, সার্চ ইঞ্জিন জায়ান্ট গুগলের ‘গুগল অ্যাডসেন্স’। এ পাঁচ তরুণও ব্লগিং থেকে আয়ের জন্য গুগল অ্যাডসেন্সই বেছে নিয়েছেন। বর্তমানে সফল ব্লগার হিসেবে নিজেদের পরিচিত করলেও এ সফলতা এক দিনে আসেনি তাঁদের। অনেক বাধার সম্মুখীন হয়েছেন শুরুর দিকে। মাসুদুর রহমান বলেন, ‘ব্লগিং শেখার জন্য আমাদের দেশে তখন তেমন কোনো নির্ভরযোগ্য প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠেনি। তাই প্রাতিষ্ঠানিক কোনো শিক্ষাই পাইনি ব্লগিং বিষয়ে। কাজ করতে গিয়েও অনেক প্রতিবন্ধকতার মধ্যে পড়েছি। এমনকি ইন্টারনেটে কাজ করার জন্য যে ইন্টারনেট গতি দরকার, সেটিও পাইনি। একটি ব্লগ পোস্ট হয়তো লিখতে বসছি, অমনি লুকোচরি খেলছে বিদ্যুৎ।’ তাহের চৌধুরী সুমন বলেন, ‘টাকা আয় করে যে দেশে আনব, সেটির জন্যও নানা প্রতিবন্ধকতা পোহাতে হচ্ছে আমাদের। পেপালের সুবিধা না থাকায় অনেক কাজের মাধ্যমেই আমরা টাকা আয় করতে পারছি না।’ এমন নানা সমস্যার কথা জানান মামুন, দিপু আর মাসুদুর রহমান। তবে শত প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও তাঁরা উল্লেখযোগ্য অবস্থানে পেঁৗছাতে পেরেছেন, নিজেরা যেমন ছাত্রাবস্থায়ই স্বাবলম্বী হয়েছেন, তেমনি দেশের জন্যও প্রতি মাসে নিয়ে আসছেন হাজার হাজার ডলারের বৈদেশিক মুদ্রা। আর তাই ফ্রিল্যান্সারদের অর্থ লেনদেন সমস্যা সমাধানে সংশ্লিষ্ট মহলের কাছে দাবি জানাতেই পারেন তাঁরা।
নতুনদের জন্য পরামর্শ
ব্লগিংয়ে ক্যারিয়ার গড়তে পারেন যেকোনো উদ্যমী সৃজনশীল তরুণ। ইন্টারনেটের বিশাল এ প্ল্যাটফর্মটি সবার জন্যই উন্মুক্ত। আর ব্লগিং থেকে আয়ের পরিমাণও তুলনামূলক অনেক বেশি। যাঁদের অনলাইনে কাজ করার যোগ্যতা, ধৈর্য, মননশীলতা এবং নিজের প্রতি আত্মবিশ্বাস রয়েছে, তাঁরাই পেশা গড়তে পারেন ব্লগিংয়ে। নতুন যাঁরা ব্লগিংয়ে আসতে চান, তাঁদের জন্য পরামর্শ কী_এ প্রশ্নের উত্তরে জহিরুল ইসলাম মামুন জানান, ইন্টারনেটে বিভিন্ন বিষয়ে আর্টিকেল লেখা, মতামত প্রকাশ করা আর অন্য ওয়েবসাইটের সঙ্গে নিজ ওয়েবসাইটের সংযোগ স্থাপনই ব্লগিংয়ের মূলমন্ত্র। তবে যাঁরা খুব অল্প সময়ে ধৈর্য হারিয়ে ফেলেন, তাঁদের জন্য ব্লগিং নয়, একটু সময় নিয়ে এ ক্ষেত্রে আসতে হবে। লেগে থাকতে পারলে সাফল্য আসবেই। দিপু শিকদার জানান, পড়ালেখা বা চাকরির পাশাপাশি যে কেউ এ পেশাকে ‘পার্টটাইম’ হিসেবে গ্রহণ করতে পারেন। আর ভালোভাবে সাফল্য লাভ করার পর ফুলটাইম ব্লগার হিসেবেও শুরু করতে পারেন ব্লগিং। এ ক্ষেত্রে রয়েছে কাজের বিশাল সম্ভাবনা।
পাঁচ তরুণের ‘অনলাইন সাপোর্ট’
ব্লগিংয়ে নিজেরা সাফল্য লাভ করায় নতুন ব্লগারদের সাহায্য করতেও উদ্যোগ নিয়েছেন এ পাঁচ তরুণ। তাঁরা এখন নতুনদের ব্লগিংয়ের মাধ্যমে আয়ের বিষয়গুলোও শেখানো শুরু করেছেন। এ জন্য গঠন করেছেন ‘অনলাইন সাপোর্ট’ নামের একটি ব্লগিং ক্যারিয়ার সহায়তা প্রতিষ্ঠান। এ বিষয়ে তাহের চৌধুরী সুমন বলেন, ‘আমাদের দেশে অনেক বেকার তরুণ-তরুণী রয়েছে, যারা ব্লগিংয়ের মাধ্যমে টাকা আয় করতে পারে। তাদের সহায়তা করার লক্ষ্যেই বর্তমানে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। বর্তমানে আমাদের অনলাইন সাপোর্টে ওয়েব ডিজাইন-ডেভেলপমেন্ট এবং অ্যাডভান্স সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন কোর্স চালু রয়েছে। রাজধানীর যাত্রাবাড়ীর ডেমরায় রয়েছে অনলাইন সাপোর্টের অফিস। তবে অফিসে শেখানোর পাশাপাশি অনলাইনেও তাঁরা নতুনদের ব্লগিং এবং আউটসোর্সিং বিষয়ে তথ্য সহায়তা করছেন। আর এ জন্য তাঁরা www.earntricks.com ঠিকানার একটি বাংলা কমিউনিটি ব্লগও পরিচালনা করছেন
0 comments:
Post a Comment