ছোট খাটাশ
ছবি: আ ন ম আমিনুর রহমান
ছোট খাটাশ গাছে চড়তে ওস্তাদ। মাটিতেও সমান সচল, ভালো দৌড়বিদ এবং অল্প জায়গায় আত্মগোপনে পারদর্শী। ছোট খাটাশ ‘গন্ধগোকুল’ নামেও এলাকাভেদে পরিচিত। ইংরেজি নাম Small indian civet। বৈজ্ঞানিক নাম Viverlculla indica। ওজন তিন থেকে পাঁচ কেজি। শরীরের মাপ লেজ বাদে ৯০ থেকে ৯৩ সেন্টিমিটার, লেজ ৩০ সেন্টিমিটার।
বড় খাটাশ ও সারেল বৃহত্তর খুলনা জেলাসহ সারা দেশে মোটামুটি টিকে থাকলেও ছোট খাটাশ কমে গেছে আশঙ্কাজনক হারে। অথচ, বড় ও ছোট দুই ভাইয়ের তুলনায় এদের সুবিধাজনক অবস্থানে থাকার কথা ছিল। আবাস ও নিরাপত্তার সংকটের কারণেই এরা একেবারে কমে গেছে, নাকি অন্য কোনো কারণ আছে, তা গবেষণাযোগ্য। পাতিশিয়ালের তুলনায় খ্যাঁকশিয়ালও (Fox) কমল কেন, এটাও স্পষ্ট নয়।
আমার ব্যক্তিগত মাঠপর্যায়ের পর্যবেক্ষণে দেখেছি, ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত বৃহত্তর খুলনা জেলার গ্রামীণ বনে এরা ছিল সন্তোষজনক হারে। এখন নজরেই পড়ে না বলতে গেলে। ছোট খাটাশ নাকি কানে কম শোনে, ফকিরহাট-বাগেরহাটে তাই এর প্রচলিত নাম ‘ঘোইলো’। এ বিষয়টিও গবেষণা করে দেখা যেতে পারে। ছোট খাটাশ বছরে একাধিকবার বাচ্চা দেয়। বন্যা-জলোচ্ছ্বাসে বন-বাগান, মাঠঘাট ডুবে গেলে এরাই বেশি অসহায় হয়ে পড়ে। এ রকম ক্ষেত্রে অনেক দয়ালু মানুষ এদের খাদ্য সরবরাহ করে থাকেন। সম্ভব হলে অন্য প্রাণীদের খাদ্য দিতে চেষ্টা করেন।
ছোট খাটাশের পশ্চাদ্দেশে বাড়তি একটা সুগন্ধি গ্রন্থি আছে। দুর্গন্ধি গ্রন্থি তো আছেই। এরা নিশাচর প্রাণী। বাঁচে ১০ থেকে ১৫ বছর। বয়স ৮-৯ বছর হলে ওজন বেশ বাড়ে। আকারে ছোট হলেও খাদ্যতালিকা এদের বিশাল। প্রায় সব ধরনের ফল, বিভিন্ন ছোট প্রাণী ও পতঙ্গ, তাল-খেজুরের রস ইত্যাদি। নিজেরা গর্ত করে আশ্রয়স্থল বানায় এবং সেখানেই বাচ্চা প্রসব করে। ছানারা জন্ম নেয় চোখ খোলা অবস্থাতেই। বাদামি শরীরে এদের ছাই ও হালকা হলুদাভ আভা থাকে। পিঠের ওপর ও দুই পাশে টানা পাঁচ-ছয়টি বাদামি কালো রেখা। শরীরের উভয় পাশে গোল গোল একই রঙের বুটি আঁকা। বয়সভেদে লেজে পাঁচ-সাতটি চওড়া বলয় থাকে। কান থানকুনি পাতার মতো। চোখ দুটি সদ্য খোসা ছাড়ানো পাকা বৈচি ফলের মতো। ঘাড়ে দুটি ও গলায় তিনটি কালো রেখা আছে। শৈশব-কৈশোরে প্রাণীটির সঙ্গে দেখা হতো প্রায় নিত্যই, আজ আর ওদের দেখাই পাই না বলতে গেলে।
শরীফ খান প্রথম আলো
0 comments:
Post a Comment