হিন্দু ধর্মের পঞ্চপাণ্ডব আর দ্রৌপদীর কথা অনেকেরই জানা। পাঁচ ভাইয়ের একজন মাত্র স্ত্রী। বাস্তবে এমন ঘটনা বা উদাহরণ খুব বেশি দেখা যায় না। বাস্তবে একজন পুরুষের একাধিক বিয়ে করার ব্যাপারটা হরহামেশাই দেখা যায়।কিন্তু একজন মেয়ের একাধিক বিয়ে করে একই সঙ্গে সংসার করার ব্যাপারটি একদমই খাপছাড়া। আর এই খাপছাড়া ব্যাপারটিই নিয়মে পরিণত হয়েছে পশ্চিম ভারতের এক বিশেষ জনগোষ্ঠীর কাছে। ‘টোডা’ নামের এই জনগোষ্ঠীর অধিকাংশ নারীই একাধিক স্বামী নিয়ে সংসার করে থাকেন।
‘টোডা’ শীর্ষক এই জনগোষ্ঠীর বসবাস দক্ষিণ ভারতের নীলগিরি পর্বতে। এরা স্বনির্ভর আর স্বয়ংসম্পূর্ণ এক ক্ষুদ্র জনজাতি। তবে এদের উৎপত্তি বা বিকাশ সম্বন্ধে সঠিক কোনো ইতিহাস খুঁজে পাওয়া যায়নি। টোডাদের একমাত্র পেশা পশুপালন এবং দুধ উৎপাদন। ১৯০১ সালে এদের মোট জনসংখ্যা ছিল ৮০৭। আর গত ১০০ বছরে এদের মোট সংখ্যা দাঁড়িয়েছে মাত্র ১৭০০। এর মধ্যে ৬০ ভাগেরও বেশি পুরুষ আর ৪০ ভাগের কম নারী। আর এ কারণেই টোডা সমাজের মেয়েরা বহুবিবাহে অভ্যস্ত হয়ে উঠেছে। তাদের বহু বিবাহ প্রথা অনুসারে মেয়েরা যে কোনো পরিবারের একাধিক ছেলেকে বিয়ে করতে পারে অর্থাৎ কোনো পরিবারে যদি পাঁচ ভাই থাকে তাহলে ওই পাঁচ ভাইকে যে কোনো একটি মেয়ে স্বামী হিসেবে গ্রহণ করতে পারে। এ বিয়েকে বলে ফ্রাটারনাল পলিঅ্যানড্রি (ঋৎধঃবৎহধষ ঢ়ড়ষুধহফৎু). পঞ্চপাণ্ডব আর দ্রৌপদীর কাহিনীর সঙ্গে মিল থাকলেও টোডারা হিন্দু ধর্মে বিশ্বাস করে না। এ জনগোষ্ঠীর উৎপত্তি সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া না গেলেও এরা দীর্ঘ অতীত থেকে নীলগিরি পর্বতে বসবাস করে এসেছে। এরা কথা বলে দ্রাবিড়িয়ান টোডা ভাষায়, যা একান্তই ওদের নিজস্ব এবং এর কোনো লিখিত রূপ নেই। টোডা উপজাতির ধর্ম বিশ্বাস অনুসারে এরা গৃহপালিত মহিষের পূজা করে। এছাড়া এদের দেবদেবীর জন্য আছে সর্বদেবতা মন্দিরও। টোডারা মনে করে, তাদের সৃষ্টিকর্তা প্রথমেই সৃষ্টি করেছেন পবিত্র মহিষ এবং তারপরই সৃষ্টি করেছেন তাদের প্রথম পুরুষকে। আর প্রথম নারী সৃষ্টি হয়েছে প্রথম পুুরুষের ডান পাঁজরের হাড় থেকে। এদের ধর্মে নদীর পুল বা সাঁকো কিংবা ব্রিজ পার হওয়া নিষিদ্ধ। নদী পার হতে হলে সাঁতার দিয়েই পার হতে হবে।
রণক ইকরাম – বাংলাদেশ প্রতিদিন
0 comments:
Post a Comment