পরিবার পরিকল্পনা পরিদর্শক পদে ৩৬ জন, এমএলএসএস পদে ৪৪, গাড়িচালক একজন, অফিস সহকারী এক, নারী চিকিৎসা সহকারী এক, পরিচ্ছন্নকর্মী এক, কনিষ্ঠ পরিসংখ্যানবিদ এক, এমএলএসএস (নিরাপত্তা) চার, থানা পরিবার পরিকল্পনা সহকারী ২০, স্টেনো টাইপিস্ট এক ও পরিবার পরিকল্পনা সহকারী পদে ৩৪—এই মোট ১৪৪ জন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ না হয়েও নিয়োগ পেয়েছেন।
পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর গত ৩০ আগস্ট দুটি জাতীয় দৈনিকে লিখিত পরীক্ষার ফল প্রকাশ করে। ২০ ডিসেম্বর মৌখিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ ও চূড়ান্তভাবে নির্বাচিত প্রার্থীদের তালিকা প্রকাশ করে। দুটি তালিকা পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, ওই ১৪৪ জন লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হননি।
গত ২ নভেম্বর প্রথম আলোয় নিয়োগ-প্রক্রিয়ায় জালিয়াতি নিয়ে একটি প্রতিবেদন ছাপা হয়। ওই প্রতিবেদন তৈরির সময় স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণমন্ত্রী আ ফ ম রুহুল হক প্রথম আলোকে বলেছিলেন, অনিয়মের অভিযোগ তিনিও শুনেছেন। সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলেছিলেন।
পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর সূত্র বলছে, প্রতিবেদন প্রকাশের পর কর্তৃপক্ষ কিছুটা ধীরে চলার নীতি নেয়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সরকার কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।
২ জানুয়ারি প্রথম আলোর পক্ষ থেকে স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে ১৪৪ জনের বিষয়টি জানানো হয়। স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের কাছে তিনি বিষয়টি জানতে চাইবেন।
নিয়োগসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, গত বছর মার্চ থেকে পরিবার পরিকল্পনা সদর দপ্তর ও জেলা পর্যায়ে পরিবার পরিকল্পনা সহকারী, পরিবার পরিকল্পনা পরিদর্শক, পরিবার কল্যাণ সহকারী, আয়া, গাড়িচালক, পরিচ্ছন্নকর্মী, কনিষ্ঠ পরিসংখ্যানবিদ, এমএলএসএস, টাইপিস্ট, অফিস সহকারী, চিকিৎসা সহকারীর আট হাজার ৪৮টি পদে নিয়োগ-প্রক্রিয়া শুরু হয়। তিন লাখ ৩০ হাজার ৪৯২ জনকে লিখিত পরীক্ষায় অংশ নিতে প্রবেশপত্র দেওয়া হয়। ওএমআর পদ্ধতিতে লিখিত পরীক্ষায় অংশ নেন এক লাখ ৯৮ হাজার ২৯৫ জন।
উত্তীর্ণের চেয়ে মৌখিক পরীক্ষার্থী বেশি: অধিদপ্তর থেকে পাওয়া কাগজে লেখা আছে, ‘১:৩ অনুপাতে লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ প্রার্থীদের ফলাফল প্রকাশ করা হয়।’ অর্থাৎ একটি পদের বিপরীতে প্রথম তিনজনকে তালিকায় রাখা হয়।
লিখিত পরীক্ষার ফল প্রকাশের পর অধিদপ্তর থেকে বিভিন্ন জেলায় সিলগালা করা ফল পাঠানো হয়। প্রথম আলোর অনুসন্ধানে দেখা গেছে, পত্রিকায় প্রকাশিত তালিকার চেয়ে সিলগালা করা তালিকায় কোনো কোনো জেলায় প্রার্থীর সংখ্যা বেশি। এর মধ্যে ঢাকা জেলা একটি। পরিবার পরিকল্পনা পরিদর্শক পদে পত্রিকায় প্রকাশিত ফল অনুযায়ী ৭৪ জন উত্তীর্ণ হন। সিলগালা ফলাফলে দুটি বাড়তি রোল নম্বর জুড়ে বলা হয়, ৭৬ জন উত্তীর্ণ হয়েছেন। আয়া পদেও তিনটি বাড়তি রোল নম্বর দেওয়া হয়।
মাদারীপুর, সুনামগঞ্জ, নীলফামারীসহ বেশ কয়েকটি জেলার ক্ষেত্রে এমন ঘটনা ঘটেছে।
এ ব্যাপারে নিয়োগ কমিটির সভাপতি ও পরিচালক (প্রশাসন চ. দা.) মাহবুবুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, লিখিত পরীক্ষায় সমানসংখ্যক নম্বর পাওয়া প্রার্থীদের রোল নম্বর প্রথম তালিকায় ছিল না। এ ছাড়া কিছু ক্ষেত্রে ওএমআর পদ্ধতির কোডের জটিলতার কারণে কিছু রোল নম্বর প্রথম তালিকা থেকে বাদ পড়েছিল। তিনি বলেন, এই দুটি কারণে প্রথম প্রকাশিত তালিকার সঙ্গে ৪০টিরও কম নতুন রোল নম্বর যুক্ত হয়।
কিন্তু ১৪৪ জনের বিষয়ে জানতে চাইলে মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘এটা হতেই পারে না। এমন ঘটনা ঘটেনি।’
লিখিত পরীক্ষার খাতা কম্পিউটারে মূল্যায়ন করেছে বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ওএমআরডিএম। গত অক্টোবরে প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহী মো. জাহাদুর রহমান জটিলতার অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছিলেন, তাঁরা কোনো ভুল করেননি।
সভাপতি নিয়ে আপত্তি: নিয়োগ কমিটিতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি থাকার বিধান আছে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় জ্যেষ্ঠ সহকারী সচিব আজিজুর রহমানকে প্রতিনিধি করে পাঠায়। নিয়োগ কমিটি গঠন ও কমিটির কিছু কাজ বিধিসম্মত হচ্ছে না—এমন অভিযোগ করে আজিজুর রহমান কমিটির কাজে অংশ নেওয়া থেকে বিরত থাকেন।
আজিজুর রহমান ১৬ আগস্ট তাঁর মন্ত্রণালয়ের সচিবকে লিখেছেন, নিয়োগ কমিটির সভাপতি মাহবুবুর রহমান একজন মেডিকেল অফিসার। মাহবুবুর রহমানকে চলতি দায়িত্বে সহকারী পরিচালক ও পরে পরিচালক (প্রশাসন) পদে বসানো হয়। দায়িত্ব দেওয়ার সময় তথ্য লুকানো হয়েছিল। তাঁকে পরিচালকের (প্রশাসন) দায়িত্ব দেওয়া বিধিসম্মত হয়নি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এম এম নিয়াজউদ্দিন বলেন, তিনি দায়িত্ব নেওয়ার আগেই মাহবুবুর রহমানকে পরিচালক (প্রশাসন) ও নিয়োগ কমিটির সভাপতি পদে বসানো হয়। prothom-alo
0 comments:
Post a Comment