ঘড়ির কাঁটা শনিবার রাতে ১২টা পেরোতেই নতুন বছরে পা ফেললো বিশ্ববাসী।
বিশ্বের নানা দেশ রকমারি আয়োজনে বরণ করে নেয় নতুন ইংরেজি বছরের প্রথম দিনটিকে (১ জানুয়ারি)।
শুক্রবার ঢাকাবাসীকে যার যার বাসায় পরিবারের সঙ্গে ‘ঘরোয়াভাবে’ ইংরেজি নববর্ষ উদযাপন করার ‘পরামর্শ’ দিয়েছিল মহানগর পুলিশ। ৩১ জানুয়ারি রাত ১১টার পর উন্মুক্ত স্থানে সমবেত হওয়া থেকে বিরত থাকার জন্যও নগরবাসীর প্রতি আহ্বান জানায় ঢাকা মহানগর পুলিশ।
রাষ্ট্রপতি মো. জিল্লুর রহমান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়া ইংরেজি নববর্ষ উপলক্ষে দেশবাসীকে শুভেচ্ছা জানান।
রাজধানীর গুলশান, বনানী, বারিধারা ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থাও নেওয়া হয়। সন্ধ্যা ৭টা থেকে বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় পরিচয়পত্র ছাড়া কোনো শিক্ষার্থীকে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি।
রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে বসানো হয় তল্লাশি চৌকি।
‘থার্টি ফার্স্ট নাইটে’ ঢাকা মহানগরের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে দুই হাজার র্যাব সদস্য মোতায়েন রয়েছে। সারাদেশে দায়িত্বে থাকছে আরো তিন হাজার সদস্য।
বিশেষ নিরাপত্তা
নতুন ইংরেজি বছরের আগমন উপলক্ষে যে কোনো ধরনের নাশতকামূলক ঘটনা এড়াতে শনিবার সন্ধ্যা থেকে রাস্তায় নামে পুলিশ ও র্যাব।
নিরাপত্তার চাদরে ঢাকা পড়ে রাজধানীর গুলশান, উত্তরা ও বারিধারা এলাকা।
মহাখালী থেকে গুলশানে ঢোকার রাস্তা রাত ৯টার পর বন্ধ করে দেয় পুলিশ। একইভাবে বারিধারা দিয়ে গুলশানে আসার রাস্তাও বন্ধ হয় একই সময়।
উত্তরা ১০ সেক্টরসহ প্রতিটি সেক্টরের ঢোকার মুখে বসানো হয় নিরাপত্তা চৌকি। বারিধারা দূতাবাস এলাকায় কাউকে ঢুকতে দেওয়া হয়নি।
গুলশান এক নম্বর এবং দুই নম্বর প্রতিটি সড়কে বসানো হয় র্যাব ও পুলিশের নিরাপত্তা চৌকি। এসব এলাকায় গাড়ি ঢুকতে তল্লাশি করা হয়।
এতে কিছু সময়ের জন্য যানজট সৃষ্টি হলেও রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে গাড়ি এবং পথচারীদের চলাচল কমে আসে।
পুলিশের গুলশান অঞ্চলের উপ-কমিশনার লুৎফুল কবির বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “জরুরি কোনো কারণ ছাড়া কাউকে রাস্তায় না নামতে বলা হচ্ছে।”
পুলিশ এবং র্যাবের চৌকি ছাড়াও টহল দিচ্ছে এই দুই বাহিনীর গাড়ি। চলাচলরত কাউকে সন্দেহ হলে জিজ্ঞাসাবাদ করছে তারা।
রাত ১১টার দিকে এসব এলাকা ঘুরে দেখা গেছে প্রায় জনমানবশূন্য।
উপ-কমিশনার বলেন, গুলশান এলাকার হোটেল ও রেস্টুরেন্টে বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে যোগ দিতে আসা লোকজনকেই কেবল এই এলাকায় ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে।
রাষ্ট্রপতি-প্রধানমন্ত্রীর বাণী
রাষ্ট্রপতি মো. জিল্লুর রহমান তার বাণীতে বলেন, “নববর্ষ উদযাপন আমাদের জাতীয় সংস্কৃতির সঙ্গে গভীরভাবে সম্পৃক্ত। আমাদের দৈনন্দিন জীবনে ইংরেজি নববর্ষ ব্যাপকভাবে প্রভাব ফেলে।
“আমি আশা করি, ইংরেজি নববর্ষ আমাদের সবার জীবনে উন্নতি, অগ্রগতি, সমৃদ্ধি ও অনাবিল সুখ বয়ে আনবে।”
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার বাণীতে বলেন, ‘‘ইংরেজি নতুন বছর ২০১২ উপলক্ষে আমি দেশবাসী, প্রবাসী বাঙালি এবং বিশ্বের সব নাগরিককে আন্তরিক শুভেচ্ছা জানাই।
“বিদায়ী বছরে আমরা উদযাপন করেছি স্বাধীনতার এবং বিজয়ের ৪০ বছরপূর্তি উৎসব। মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়নের মাধ্যমে মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তি আনতে দেশবাসী নতুন করে শপথ নিয়েছেন।”
বিদায়ী বছরে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের উজ্জ্বল ভাবমূর্তি তৈরি হয়েছে বলেও বাণীতে উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী।
২০১১ সালের উল্লেখযোগ্য অর্জনের তালিকায় যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শুরুর বিষয়টিও রেখেছেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, “আমি আশা করি, দলমত নির্বিশেষে সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় আমরা বাংলাদেশকে ক্ষুধা-দারিদ্র্য-নিরক্ষরতামুক্ত এবং অসা¤প্রদায়িক ও শান্তিপূর্ণ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলায় পরিণত করতে সক্ষম হব।”
বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়া তার বাণীতে ২০১২ সালকে শান্তি ও অগ্রগতির বছরে পরিণত করতে সবাইকে একযোগে কাজ করার আহ্বান জানান।
দলের যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত বাণীতে তিনি বলেন, “গত বছরটি এখন আমাদের মনে স্মৃতি হয়ে থাকবে। অতীতের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে সুন্দর ভবিষ্যৎ বিনির্মাণে তৎপর হতে পারলে নতুন বছরটি হয়ে উঠতে পারে সাফল্যময়।”
১১৯ বছর পর
এবার সবার আগে নতুন বছর বরণ করে দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগরীয় দুই দ্বীপপুঞ্জ সামোয়া ও টোকেলু। দেশ দুটি ১১৯ বছর পর ঘড়ির কাঁটা একদিন এগিয়ে দেয় গত ২৯ ডিসেম্বর। ফলে ৩০ ডিসেম্বর বাদ দিয়েই দেশটি ৩১ ডিসেম্বরে পৌঁছে যায়।
এ কারণে দেশ দুটি এবার সবার আগে নতুন ইংরেজি বছর বরণ করে।
এরপর বর্ষবরণের উৎসবে মেতে ওঠে অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ড। সিডনির অপেরা হাউসে বর্ষবরণের উৎসবে শামিল হয় লাখ লাখ মানুষ। এরপর এশিয়া পেরিয়ে ধীরে ধীরে ইউরোপও চলে বর্ষবরণ।
পৃথিবীর আবর্তনের কারণে এর আগে নতুন বছর সবার আগে বরণ করার সুযোগ পেত প্রশান্ত মহাসগরীয় ছোট্ট দেশ কিরিবাতি।
কক্সবাজারে কনসার্ট
কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতে শনিবার রাত ১১টা ৫৯ মিনিট ৫০ সেকেন্ডে গুণতে শুরু করলেন ব্যান্ডশিল্পী আইয়ুব বাচ্চু, “টেন, নাইন ... থ্রি, টু, ওয়ান অ্যান্ড জিরো!”
২০১২ সালকে স্বাগত জানিয়ে উল্লাসে ফেটে পড়ল লাখ মানুষ। বরণ করে নিল আরো একটি নতুন বছরকে।
কক্সবাজার থেকে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম প্রতিনিধি জানান, একটি মোবাইল অপারেটর কোম্পানি আয়োজন করে এ ওপেন এয়ার কনসার্ট।
কক্সবাজারের পুলিশ সুপার সেলিম মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর সাংবাদিকদের বলেন, “এই জনসমুদ্রকে সামাল দিতে মাঠে আইন-শৃংখলা বাহিনী রয়েছে। শনিবার সকাল থেকেই শহরের ১০টি পয়েন্টে পুলিশের তল্লাশি চৌকি ছিল তৎপর।”
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
0 comments:
Post a Comment