তাকে নিয়ে লেখা বিভিন্ন পত্রিকার খবর গুলা দেখুন।
চাঁদহীন রাতে কেন চলে যাবেন, হুমায়ূন আহমেদ
‘জোছনা আমার অতি প্রিয় বিষয়। প্রতি পূর্ণিমাতেই নুহাশপল্লীতে যাই জোছনা দেখতে, সঙ্গে পুত্র নিষাদ, নিনিত এবং তাদের মমতাময়ী মা। প্রবল জোছনা আমার মধ্যে একধরনের হাহাকার তৈরি করে। সেই হাহাকারের সন্ধান করে জীবন পার করে দিলাম।’ হুমায়ূন আহমেদ ২০১২ সালে প্রকাশিত বইয়ের মলাটে নিজেই লিখেছেন। আরেকটা বইয়ের উৎসর্গপত্রে লিখেছিলেন, ‘চাঁদনি পসর রাতে যেন আমার মরণ হয়’, এই গানটির কথা। লিখেছিলেন, শাওনের কণ্ঠে এই গানটা তাঁর খুব প্রিয়। আর, তিনি প্রবল জোছনার তোড়ে ভেসে যাওয়া কোনো রাতে মারা যেতে চান।
বাংলাদেশে বৃহস্পতিবার অমাবস্যা। শুক্রবার চাঁদ উঠবে, শনিবার রোজা। পূর্ণিমা আসতে ঢের দেরি। হুমায়ূন আহমেদ স্যার কি তা জানেন? কেন তিনি অমাবস্যার রাতে আমাদের অন্ধকারে, দুঃখ আর শোকের কালো সাগরে ডুবিয়ে মারা যাবেন?
‘নিউইয়র্কের আকাশে ঝকঝকে রোদ’, প্রথম আলোয় কলাম লিখেছেন কিছুদিন। গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসে চিকিৎসার জন্য নিউইয়র্কে যাওয়ার পরের দিনগুলোয়। আমেরিকায় গিয়ে রাতের আকাশে চাঁদ দেখলে মনে হয়, এই দেশের সবকিছুই বিদেশি, কেবল চাঁদটা আমার বাংলাদেশের। হুমায়ূন আহমেদ স্যার কি জোছনা আসার জন্যও অপেক্ষা করতে পারলেন না?
একটু আগে ফরিদুর রেজা সাগর ফোন করেছিলেন (বৃহস্পতিবার রাতে)। এত রাতে তাঁর ফোন পেয়েই আমার হাত-পা কাঁপতে লাগল। গত বছর ফরিদুর রেজা সাগর ভাই-ই আমাকে জানিয়েছিলেন, হুমায়ূন আহমেদ স্যারের ক্যানসার। ফোনের বাটন টিপে আমি বলি, হ্যালো। গলা কাঁপছে আমার। সাগর ভাই বলেন, ‘মাজহারের সঙ্গে কথা হলো, হুমায়ূন ভাইয়ের খবর ভালো না। তোমরা একটু খোঁজ নাও।’
হুমায়ূন আহমেদ স্যারের স্বাস্থ্যটা ভালো নয়। তিনি প্রায় অচেতন অবস্থায় ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে আছেন, ফুসফুসে সংক্রমণ দেখা দিয়েছে, তাঁকে কৃত্রিম শ্বাস-প্রশ্বাস দিয়ে রাখা হয়েছে, এটা গত বুধবারের খবর। ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল, প্রকাশক মাজহারুল ইসলাম ও মেহের আফরোজ শাওন এক বিবৃতিতে বুধবারে এটা আমাদের জানিয়েছেন। বৃহস্পতিবার রাত ১০টা ৫০। প্রথম আলোর সাহিত্য পাতার সম্পাদক লেখক আলীম আজিজ একটু আগে মাজহারুল ইসলামের সঙ্গে কথা বলে জানালেন, হুমায়ূন স্যারের রক্তচাপ দ্রুত কমে যাচ্ছে। বৃহস্পতিবার রাত ১১টা ৪০ বাংলাদেশ সময়। আলীম আজিজই খবর দিলেন, স্যার আর নেই।
হুমায়ূন আহমেদ স্যারের বাসায় গিয়েছিলাম গত মে মাসে। ধানমন্ডির ‘দখিন হাওয়া’ নামের বাড়িটার ফ্ল্যাটে। স্যার নিউইয়র্ক থেকে কেমো নিয়ে ফিরেছেন। মা এবং মাটির টানে এসেছেন। আবার চলে যাবেন। কারণ, সামনে তাঁর শরীরে অস্ত্রোপচার করা হবে।
আমি নীরবে গিয়ে তাঁর লেখার ঘরে ঢুকে পড়ি। তিনি একা একা কথা বলছেন আর লিখছেন। আমি তাঁর কাজে ব্যাঘাত না ঘটিয়ে অনেকক্ষণ চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকি। স্যার একটা নাটক লিখছেন। সেই নাটকের সংলাপ একবার এ চরিত্রের হয়ে, আরেকবার ও চরিত্রের হয়ে লিখছেন। স্যার লিখতে লিখতে মুখ তুলে চেয়ে বলেন, ‘এসেছ, বসো।’ আমি বলি, না, আপনাকে বিরক্ত করি না। আপনি লেখেন। ভালো থাকেন। সুস্থ হয়ে ফিরে আসেন।
‘আচ্ছা, আমি সুস্থ হয়ে ফিরে আসার পরে এসো। অনেক গল্প করব।’
স্যার, সেই গল্পগুলো কি হবে না? আপনি আসবেন না আর ‘দখিন হাওয়া’য়?
পরে হুমায়ূন স্যারের সঙ্গে আবার দেখা বসুন্ধরা মার্কেটের সিঁড়িতে। স্যার, শাওন, স্যারের মা আয়েশা ফয়েজ—সবাই মাইক্রোবাস থেকে নামছেন। আমিও নামছি আমার গাড়ি থেকে। মঙ্গলবার। ফাঁকা মার্কেট। আমি গিয়ে স্যারের সঙ্গে হাত মিলিয়ে একসঙ্গে এক লিফটে উঠলাম। আমরা চলেছি হুমায়ূন স্যারের নতুন ছবি ঘেটুপুত্র কমলার উদ্বোধনী প্রদর্শনী দেখতে। স্যার একদম সুস্থ মানুষের মতো চলাফেরা করছেন। পুরো ছবি দেখলেন। ছবি দেখার আগে কথা বললেন। সবার সঙ্গে শিল্পী-কলাকুশলীদের পরিচয় করিয়ে দিলেন। স্বভাবসুলভ রসিকতা করলেন, ‘ছবি আমরা বানাবই। বানিয়েই যাব।’
স্যার, আপনার না আরও আরও ছবি বানানোর কথা?
এই লেখার শুরুতে যে বইয়ের মলাট থেকে হুমায়ূন স্যারের কথা উদ্ধৃত করেছি, সেখানেই তিনি লিখেছেন, ‘১৩ নভেম্বর মধ্যরাতে আমার জন্ম। সন ১৯৪৮। হ্যাঁ, মেঘে মেঘে অনেক বেলা হয়ে গেছে। লেখালেখি করছি প্রায় চল্লিশ বছর ধরে। আমি আনন্দিত, ক্লান্তি এখনও স্পর্শ করেনি।’
বাংলাসাহিত্যের কিংবদন্তি তিনি। সম্পূর্ণ নিজের ভাষায় লিখেছেন মৌলিক সব আশ্চর্য উপন্যাস, ছোটগল্প। নন্দিত নরকে, শঙ্খনীল কারাগার থেকে শুরু করে মধ্যাহ্ন—কী আশ্চর্য সব সৃষ্টি। বদলে দিয়েছেন বাংলাদেশের টেলিভিশন নাটক। তাঁর অয়োময় কিংবা বহুব্রীহি কিংবা কোথাও কেউ নেই-এর কথা কে ভুলতে পারবে? আগুনের পরশমণি কিংবা শ্রাবণ মেঘের দিন-এর মতো সিনেমা আমাদের আবার সিনেমা হলে ফিরিয়ে নিয়ে গেছে, আমাদের চোখ ভিজিয়ে দিয়েছে। আজকের ছেলেমেয়েরা বৃষ্টিতে ভিজতে চায়, জোছনা দেখতে চায়, সে তো তাঁর কাছ থেকে শেখা। তারা ‘হিমু’ হতে চায়, ‘মিসির আলী’র মতো করে যুক্তি খোঁজে। বাংলাদেশের বেশির ভাগ ছেলেমেয়ের গদ্য আজ সহজ, কিন্তু সুন্দর—সে তো হুমায়ূন পড়ে পড়েই শেখা। আমাদের প্রকাশনাশিল্পকে প্রায় একাই তিনি দাঁড় করিয়ে দিয়েছেন, ধরে রেখেছেন। এই কথাগুলো এখন অতীত কাল দিয়ে লিখতে হবে? বলতে হবে, তিনি ছিলেন। তিনি করেছিলেন। তিনি আর নেই? সামনের বইমেলায় তিনি আসবেন না? আমাদের ঈদসংখ্যাগুলোর কী হবে? কী হবে ঈদের সন্ধ্যায় টেলিভিশন চ্যানেলগুলোর? আমাদের প্রকাশনাজগৎ এই শূন্যতা সইতে পারবে?
বাংলাদেশে পূর্ণিমা আসতে ঢের দেরি। আর, তাঁরও নতুন নতুন ছবি বানানোর কথা, দেয়াল উপন্যাসটা আমাদের হাতে তুলে নিয়ে নতুন উপন্যাস নিয়ে কাজ করার কথা। লেখকদের গল্প শেষ না করে মাঝপথে চলে যেতে নেই। ৬৪ বছর প্রস্থানের জন্য মোটেও উপযুক্ত বয়স নয়।
কিন্তু কোটি কোটি পাঠককে, ভক্তকে শোকের অমাবস্যায় ঢেকে দিয়ে তিনি চলে গেলেন।
তবে এই যাওয়া মানেই হারিয়ে যাওয়া নয়। তাঁর অবিনশ্বর কীর্তি, তাঁর সাহিত্য, তাঁর ছবি, তাঁর শিল্পকর্ম তাঁকে আমাদের মাঝে ধরে রাখবে বহুকাল।
হুমায়ূন আহমেদের মতো প্রাণপ্রাচুর্যভরা মানুষের, সৃষ্টিশীল প্রতিভার মৃত্যু নেই।
এই দেশে আবারও আকাশ ভেঙে জোছনা আসবে। উথালপাতাল বৃষ্টি নামবে নীপবনে। সেই সব জোছনায়, সেই কদম ফুলের রেণুতে আমরা হুমায়ূন আহমেদকে পাব। তিনি আমাদের চৈতন্য এবং নিসর্গের সঙ্গে অবিচ্ছেদ্যভাবে মিশে থাকবেন।
আমরা যারা তাঁর সমসাময়িক কালে বাংলাদেশে ছিলাম, তারা কোনো দিনও তাঁকে ভুলতে পারব না। হয়তো তাঁকে মনে রাখবে বাংলার ভবিষ্যৎ কালও, মনে রাখবে তাঁর পাঠকেরা; আর এই বাংলার জোছনা, বৃষ্টি, কদম ফুল।
ঔষধি বৃক্ষের বাগানে হুমায়ূন আহমেদ
হুমায়ূন আহমেদ সঙ্গে যাবেন না। তাহলে আর ঔষধি বৃক্ষের বাগান দেখার মানে কী?
‘স্যার, আপনাকে মোটরসাইকেলে নিয়ে যাব।’ মরিয়া হয়ে বলি।
‘শোনো, আমার তো মোটরসাইকেলভীতি আছে। ছোটবেলায় একবার মামার মোটরসাইকেলে উঠেছিলাম। মামা আমাকে মোটরসাইকেলে উঠিয়েছেন। আমিও খুশিমনে উঠেছি। মামা মোটরসাইকেল চালিয়ে বাজার পর্যন্ত চলে গেছেন। আমি যে পেছন থেকে পড়ে গেছি, খেয়ালই নেই। সেই থেকে মোটরসাইকেলভীতি।’
এরপর আর কথা চলে না। অগত্যা মুখ তোম্বা করে একা একাই গেলাম নুহাশপল্লী।
এর মাস কয়েক পরই হবে সম্ভবত। হুমায়ূন আহমেদের নয় নম্বর বিপদ সংকেত ছবির শুটিং চলছে নুহাশপল্লীতে। গেলাম সেখানে। সঙ্গে আলোকচিত্রী কবির হোসেন।
শুটিং চলছে। স্যারের পরনে নীল-সাদা ফুল ফুল বাটিকের শার্ট। হাতে চিত্রনাট্য। গরমে ঘামছেন। শট ওকে হলো। স্যার উঠে এসেই আমাকে বললেন , ‘চলো, তোমাকে বাগান দেখাতে নিয়ে যাই।’ বিস্মিত হওয়ার কোনো সময় না দিয়েই স্যার রওনা হলেন। ফিল্মের প্রোডাকশন টিম তাঁর পিছু পিছু ছুটল। মাথায় ছাতা ধরল কেউ একজন। কায়দা করে স্যার মাথায় চাপালেন হ্যাট। স্যারের পিছু নিলাম। সুযোগ পেয়ে তাঁকে বললাম, ‘স্যার, মাহিহি নামের একটা গাছের কথা বলেছিলেন। গাছটা কি আছে?’
‘না, মারা গেছে।’ বলতে বলতে তিনি হাঁটেন। নানান জাতের গাছগাছালি পেরিয়ে আমরাও হাঁটি। সব কটি গাছের সামনেই সাইনবোর্ডে নাম লেখা আছে। বিচিত্র তাদের নামধাম—শিয়ালকাঁটা, জয়ত্রী, কৃষ্ণবট, দণ্ডকলস, ঈশ্বরমূল। ‘স্যার, আপনি বলেছিলেন, এর চেয়ে বড় ঔষধি বৃক্ষের বাগান দেশে আর নেই।’
‘আমি তো তা-ই বিশ্বাস করি। খুব নামডাক শুনে একটা ভেষজ ঔষধ কোম্পানির বাগানে গিয়ে আমি যারপরনাই হতাশ হয়েছি। ওদের চেয়ে অনেক বেশি ঔষধি গাছ আছে আমার এখানে।’
‘স্যার, এই গাছগাছালির প্রতি আপনার আগ্রহটা জন্মাল কীভাবে?
‘মহর্ষি চরক ছিলেন আয়ুর্বেদ চিকিৎসার জনক। তাঁর একটা কথা আছে, যার জন্ম যেখানে, তার ভেষজও সেখানে জন্মগ্রহণ করে। গাছগাছালি, বিশেষ করে ঔষধি বৃক্ষের প্রতি আমার আগ্রহ প্রবল। কোনো কোনো গাছ আছে যাদের নিরাময়গুণ অবিশ্বাস্য।’ বলতে বলতে হুমায়ূন আহমেদ একটা গাছের পাশে দাঁড়িয়ে বলেন, ‘এটা একটা বিশেষ গাছ। কারণ, এ গাছের নাম দিয়েছিলেন স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।’
বটে? গাছটা মন দিয়ে লক্ষ করি। স্যার গাছের সামনে দাঁড়ালেন। কবির ক্যামেরার শাটার টিপেই চলেছে।
খানিকটা দূরে গিয়ে হুমায়ূন আহমেদ কী যেন ভাবলেন। বললেন, ‘দাঁড়াও, তোমাদের একটা জিনিস খেতে দেব, যেটা তোমরা সারা জীবন মনে রাখবে।’ কী সেই জিনিস? আমরা ভেতরে ভেতরে বেশ উত্তেজিত। কোথা থেকে হুমায়ূন আহমেদ নিজেই এক গোছা পাতা ছিঁড়ে নিয়ে এলেন। বললেন, ‘এটা চিবাও।’
কবির মুঠো ভর্তি করে পাতা নিয়ে মুখে পুরল। স্যার বললেন, চিবাও। সে চিবাল। আমি একটা পাতা মুখে দিতে গিয়ে থেমে গেছি। পাতার তেতো স্বাদ মুখে লেগেছে। কবিরকে দেখলাম চিবিয়েই যাচ্ছে।
‘এর নাম কালোমেঘ। প্রচণ্ড তেতো। একবার যে খায়, সারা জীবন মনে রাখে। তবে এর উল্টো জিনিসও আমার কাছে আছে। দারুণ মিষ্টি।’
‘সেটা কী গাছ?’
‘গাছের নাম স্টেভিয়া। মধুর চেয়ে কয়েক গুণ বেশি মিষ্টি। একটা পাতা চিবাও, মুখের তেতো চলে যাবে।’
কবির আর পাতা চিবানোর ঝুঁকিতে গেল না। ওদিকে ক্যামেরা রেডি। লিচুগাছের ডালে তৈরি করা গাছবাড়ির দিকে ক্যামেরা তাক করা হয়ে গেছে। স্যার চলে গেলেন শুটিংয়ে। আমি মুগ্ধ হয়ে বাগানের গাছগাছালি আরেকবার দেখা শুরু করলাম। কবির ‘ওয়াক থু, ওয়াক থু’ করতে করতে আবার স্যারের পিছু পিছু ছুটল। ক্যামেরাসমেত।
২০০৬ সালের আগস্ট মাসের আলাপচারিতা থেকে লেখা
উনি আসলে মহাপুরুষ
এরপর আমি আবার পড়াশোনায় মনোযোগ দিই। পিজি হাসপাতালে নিউক্লিয়ার মেডিসিন বিভাগে পোস্ট গ্র্যাজুয়েশনে ভর্তি হই। পড়াশোনা শেষে ১৯৯৪ সালে অধ্যাপক মো. আবদুল করিম স্যারের দপ্তরে সনদ আনতে যেতে হয়েছিল। সেখানে জানতে পারি তিনি তাঁর দপ্তরে নেই, আছেন হুমায়ূন আহমেদ স্যারের অফিসে, যিনি আমার স্বপ্নের মানুষ। সত্যি কথা বলতে কি, যখন জানতে পারলাম আবদুল করিম স্যারের সঙ্গে হুমায়ূন স্যারের অফিসে গিয়ে দেখা করে সনদ তোলার জন্য স্বাক্ষর আনতে হবে, তখন কিন্তু আমার কাছে সনদ তোলা নিয়ে মাথাব্যথা ছিল না। আমার লক্ষ্যই ছিল আমার শ্রদ্ধেয় ও স্বপ্নের মানুষ হুমায়ূন আহমেদ স্যারের সঙ্গে দেখা করা। ভাগ্যও সুপ্রসন্ন ছিল। হুমায়ূন স্যারের চেম্বারে যাওয়ার পর সহকারী পরিচালকের অনুমতি নিয়ে আমি ভেতরে যাই। আমার কিন্তু হাত-পা কাঁপছিল। গিয়েছিলাম আমার বিভাগের স্যারের সঙ্গে দেখা করতে, কিন্তু চেম্বারে যাওয়ার পর দেখলাম, আমার বিভাগের স্যারের চেয়ে হুমায়ূন স্যার আমার সঙ্গে অনেক বেশি কথা বলছেন। কথা প্রসঙ্গে হুমায়ূন স্যার জানতে চাইলেন আমি কোথায় থাকি? বললাম গাজীপুরে। তিনি বললেন, ‘আমি তো গাজীপুরে শুটিং করতে যাই। সময় থাকলে আমার সঙ্গে একটু থেকো।’ কথাটা শোনার পর আমার মনে হলো, আসমানের চাঁদ হাতে পেলাম। আমি অবাক হলাম এই ভেবে, স্যার, যাঁকে আমি স্বপ্নের মানুষ হিসেবে জানি, সেই তিনি কিনা আমাকে কাজের ফরমায়েশ দিচ্ছেন! এটাতে আমি সত্যিই খুব অবাক হয়েছিলাম।
তিন-চার দিন স্যার নিজেই আমাকে ফোন দিয়ে একটি সিরিয়ালের শুটিং করবেন বলে জানালেন। গাজীপুরের চৌরাস্তায় তখন আমার চেম্বার। তিনি শুটিং করেন গাজীপুরের মনিপুরে। শুটিংয়ের এক ফাঁকে আমি স্যারকে অনেকটা ভয়ে ভয়ে বললাম, স্যার আমি রংপুর বেতারে নাটিকাতে কাজ করতাম আর খবরও পড়তাম। তা ছাড়া আমি কিন্তু বিটিভির তালিকাভুক্ত শিল্পী। স্যার আমার কথাটা শুনে বেশ অবাক হলেন। বললেন, ‘বিষয়টি আমাকে আগে জানাওনি কেন?’ সঙ্গে সঙ্গে স্যার আমাকে ‘সবুজ সাথী’ সিরিয়ালে ছোট্ট একটি চরিত্রে অভিনয়ের সুযোগ করে দেন। আর এই ছোট্ট অভিনয় দেখেই স্যার সন্তুষ্ট হন। তারপর স্যার কয়েকটি খণ্ডের একটি সিরিয়ালের কাজ শুরু করেন। খণ্ডে খণ্ডে নির্মিত এই সিরিয়ালটিতে কাজ করেছিলেন ফরীদি ভাই (হুমায়ুন ফরীদি), জাহিদ হাসান, মাহফুজ আহমেদ। আর সেই অনুষ্ঠানে স্যার নতুন একটি ছেলেকে অভিনয়ের সুযোগ দেওয়ার ঘোষণা দিলেন। স্যার অনেকটা এভাবেই বলেছিলেন, ‘আমরা তো সারাক্ষণ জাহিদ-মাহফুজকে নিয়ে ব্যস্ত থাকি, কিন্তু এমনও অনেক ছেলে আছে, যারা কিনা অনেক ভালো কাজ করে। আমি তেমনই একটি ছেলেকে দিয়ে এক খণ্ড নাটক করাব।’ এটি ছিল ‘বুনোর গল্প’। আর ছেলেটি ছিলাম আমি নিজে। এটা শোনার পর আমি আসলে কান্না ধরে রাখতে পারিনি। সেই থেকে শুরু।
আমার জীবনে যদি আজ পর্যন্ত যত সাফল্য, প্রাপ্তি বা যা কিছু করতে পেরেছি, এর ষোলো আনাই হচ্ছে হুমায়ূন আহমেদ স্যারের জন্য। আমি এখন প্রায়ই ভাবি, আমার জীবন বৃথা হয়ে যেত যদি স্যারের সঙ্গে আমার দেখা না হতো। আমার জীবনে সবচেয়ে সুখের স্মৃতি, সবচেয়ে দুঃখের স্মৃতি, সাফল্যের স্মৃতি সবই স্যারের সঙ্গে। আমি সবাইকে বলে থাকি, আমার জীবনের যে আসলে কোনো যে মূল্য আছে, তা স্যারের সঙ্গে দেখা হওয়ার পরই জানতে পেরেছি।
স্যারের সঙ্গে আমার আনন্দের স্মৃতি যদি বলি তবে ইরাক-ইরান যুদ্ধের সময় নিয়ে নির্মিত ‘চৈত্রদিনের গান’ নাটকের কথা বলব। এটি আমার জীবনের সেরা আনন্দের স্মৃতি। ‘চৈত্রদিনের গান’ নাটকে একটি দৃশ্য ছিল যুদ্ধকালীন ইরাকের শিশুরা পানি খেতে পারছে না। তাদের প্রতি সহমর্মিতা দেখানোর জন্য আমিও পানি খাওয়া বন্ধ করে দিই। দৃশ্যটা শেষ হওয়ার পর আমি সহকারী পরিচালককে জিজ্ঞেস করলাম, কেমন হয়েছে। তখন পাশে তাকিয়ে দেখি স্যারের চোখে পানি। আমি অবাক হলাম এই ভেবে যে আমি কী এমন অভিনয় করেছিলাম যে স্যারের চোখে পানি! এটা আসলে আমার আভিনয়জীবন এবং ব্যক্তিজীবনের সবচেয়ে আনন্দের স্মৃতি। এর চেয়ে বড় আনন্দ আজ পর্যন্ত আর হয়নি। আমার অভিনয় দেখে স্যার কাঁদছেন—এ আনন্দের কথা বলে বোঝানো আমার সম্ভব হবে না।
অনেকে স্যারকে বদরাগী মনে করতেন। স্যার আমাদের প্রায় বকা দিতেন। কিন্তু স্যারের এই বকাটা কিন্তু অনেক আদরের ছিল। স্যার যে কতটা বড় মনের মানুষ, তা স্যারের কাছে যাঁরা যাননি, তাঁদের আসলে বোঝনো যাবে না। স্যারকে আমি তুলনা করি বেলের সঙ্গে, শামুকের সঙ্গে। বেল ও শামুকের যেমন বাইরের শক্ত কিন্তু ভেতরেরটা নরম আর কোমল, স্যারও ছিলেন ঠিক সে রকমই।
স্যারের বিশ্বাসের কোনো জায়গায় আমি ছিলাম, তা একটি ঘটনার মাধ্যমে টের পাই। ১৯৯৬ সালে যখন ‘বুনোর গল্প’ নাটকের শুটিং করতে বাসে করে যাচ্ছিলাম, তখন স্যার আমাকে পেছন থেকে ডেকে বললেন, ‘ডাক্তার আমি একটা সুন্দর বাগানবাড়ি করতে চাই। এর মধ্যে অনেককে বলেছি। কিন্তু এবার পুরো দায়িত্বটা তোমাকে দিতে চাই। কাউকে কিছু জিজ্ঞেস করার দরকার নাই। তুমি আমাকে একটা বাগানবাড়ি করার জায়গা খুঁজে দাও।’ এটা যখন তিনি আমাকে বলেন, তখন আমার মনে হয়েছে আমার দেবতা আমাকে হুকুম করছে। তারপর আমি জায়গাটা নির্বাচন করলাম। তখন স্যারকে দেখার জন্য বললাম। তিনি আমাকে বললেন, ‘তোমার পছন্দ হয়েছে তো?’ একই ঘটনা ঘটে ‘শ্রাবণ মেঘের দিন’ ছবির শুটিংয়ে জমিদার বাড়ি বাছাইয়ের জন্য। আমি জমিদার বাড়ির খোঁজ দেওয়ার পর স্যার আমাকে একই কথা বললেন, ‘তোমার পছন্দ হয়েছে তো?’ তারপরও আমি বললাম, স্যার আপনি দেখবেন না। স্যার একই কথা বললেন, ‘তোমার পছন্দ হয়েছে তো?’ আমি বললাম, জি স্যার। স্যার আমাকে এতটাই বিশ্বাস করতেন!!!
হুমায়ূন আহমেদের মতো দেবতাতুল্য মানুষের কাছ থেকে আমার মতো একজন মানুষের এই বিশ্বাস ও ভালোবাসা অর্জনের পর এক জীবনে আর কিছু লাগে বলে আমার মনে হয় না। নাটকে অভিনয় করানোর ক্ষেত্রে স্যার আমাকে কীভাবে একটা ভালো চরিত্রে অভিনয় করানো যায়, সেটাই দেখতেন। আমার কাছে মনে হয়েছে, আমার প্রতি স্নেহ ও ভালোবাসা দেখানোর আর জায়গা স্যারের মধ্যে ছিল না।
স্যারের প্রতি আমার এত শ্রদ্ধা ছিল, তাই তাঁর সঙ্গে যেতে আমার ভয়ও হতো। তার পরও নুহাশপল্লী করার সময় রাস্তা খারাপ থাকার কারণে প্রায়ই স্যারের সঙ্গে রিকশায় ভ্রমণের সৌভাগ্য হয়েছে। রিকশায় আমি বসলেও স্যারের গায়ের সঙ্গে লেগে যাবে, এ জন্য একটু জায়গা রেখে বসার চেষ্টা করতাম। কিন্তু স্যারের জন্য সেটা পারতাম না। মনে মনে ভাবতাম, আমি আর হুমায়ূন আহমেদ এক রিকশায়! তখন নিজেকে পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী মানুষ মনে হত।
নানা করণে দেশের বাইরেও অসংখ্যবার গিয়েছি। কিন্তু আমার জীবনে স্যারের সঙ্গে সুইজারল্যান্ড আর নেপাল যাওয়ার মতো আনন্দ আর আসবে কি না, সন্দেহ। দেশের বাইরে অন্য সবার সঙ্গে যাওয়া আর স্যারের সঙ্গে যাওয়ার কাছে পৃথিবীর সব আনন্দ ম্লান।
আমি জীবনে অনেক নাটকে অভিনয় করেছি এবং করছি। তবে এর মধ্যে স্যারের নাটকের সংখ্যাই বেশি। আর তাই সবাই কিন্তু আমাকে হুমায়ূন আহমেদের নাটকের অভিনয়শিল্পী হিসেবেই জানে। এ রকম অসংখ্য ঘটনা আমার জীবনে ঘটেছে। পেশাগত কাজের জন্য আমি একদিন মন্ত্রণালয়ে যাচ্ছিলাম। আমার গাড়ির পেছনে একজন মন্ত্রীর গাড়ি। উনারা আমাকে কিন্তু কোনো হর্ন দিচ্ছেন না। তাঁরা আমাকে উল্টো যাওয়ার জায়গা করে দিলেন।
গত ১৬-১৭ বছরে যেখানেই গেছি, সবাই আমাকে দেখলেই বলে, ‘আপনি হুমায়ূন আহমেদের নাটক করেন না?’ রিকশায় উঠলে বলত, ‘স্যার হুমায়ূন আহমেদের নাটক করেন না?’ হুমায়ূন আহমেদ এমন একজন মানুষ, যাঁকে আসলে সমাজের উঁচু স্তর থেকে শুরু করে নিচু স্তরের সবাই ভালোবাসে, মমতা করে। তাঁর মতো একজন মানুষের সান্নিধ্য পাওয়াটা আসলে এক জীবনে ভাগ্য ছাড়া আর কিছুই বলব না। একটা মানুষের জনপ্রিয়তা কী পরিমাণ হতে পারে, তা হুমায়ূন স্যারের নাম বলার পর আর কারও নাম বলার সুযোগ নেই।
স্যারের আমি অসংখ্য নাটকে অভিনয় করেছি। বেশির ভাগ নাটকে আমি ভালো ভালো অনেক চরিত্র পেয়েছি। স্যারের একেকটা কাজ করা মানে একেকটা মাইলস্টোন অতিক্রম করা। শেষের দিকে আমি বেশ কয়েকটা নাটকে কাজ করতে পারিনি। এটা যে আমাকে কীভাবে তাড়িয়ে বেড়াত, সেটা বলে বোঝাতে পারব না। আমার মনে হয়েছে আরেকটি মাইলস্টোন ছোঁয়া থেকে বঞ্চিত হয়ে গেলাম। একটি কাজ হারানো মানে আমার জীবনের অনেক কিছুই হারানো মনে হতো।
পেশায় আমি চিকিত্সক হলেও হুমায়ূন আহমেদে স্যারের সঙ্গে পরিচয় আমার পুরো জীবনকে আলোকিত করেছে। আমি প্রায় আমার বন্ধুদের বলি, স্যারের সঙ্গে যদি আমার দেখা না হতো, তাহলে আমার জীবনের কোনো বৈচিত্র্যই থাকত না। একঘেঁয়েমি হতো আমার জীবন। হুমায়ূন আহমেদ স্যারের সম্মোহন ক্ষমতা ছিল অসাধারণ। দেখা গেল, আমি চিকিত্সা পেশায় ব্যস্ত থাকার কারণে নাটকের শিডিউল নিয়ে ঝামেলা হতো। একটানা তিন দিন ঢাকার বাইরে থাকাটা আমার জন্য অনেক ঝামেলার হতো। তাই আমি যেতেও চাইতাম না। তারপর স্যার যখন আমাকে ডেকে বলতেন, ‘নাটকের জন্য ঢাকার বাইরে আমাদের সাত দিন থাকতে হবে।’ অমি বলতাম, জি স্যার। ‘সাত দিন কিন্তু তুমি কোথাও যেতে পারবে না।’ জি স্যার। ‘সাত দিন কিন্তু তুমি কিছুই করতে পারবে না।’ বলতাম, জি স্যার। এটা শুনে অন্য সবাই হাসতো। আসলে কী এক সম্মোহনী ক্ষমতা যে উনার মধ্যে ছিল, সেটা আমি এখনো বুঝি না। উনি আসলে মহাপুরুষ।
অনুলিখন: মনজুর জিয়া
অন্য ভুবনে হুমায়ূন আহমেদ
রাষ্ট্রপতি মো. জিল্লুর রহমান হুমায়ূন আহমেদের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করে এক শোকবার্তায় বলেছেন, ‘বাংলা সাহিত্যে হুমায়ূন আহমেদের বহুমাত্রিক সৃজনশীল রচনা কালজয়ী হয়ে থাকবে।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর প্রতিক্রিয়ায় শোক প্রকাশ করে বলেছেন, ‘বাংলা সাহিত্য, নাটক ও চলচ্চিত্রে হুমায়ূন আহমেদের অনন্য অবদানের জন্য জাতি তাঁকে কখনো ভুলবে না।’
জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়া তাঁর শোকবাণীতে বলেন, ‘তাঁর মৃত্যু দেশ ও জাতির জন্য অপূরণীয় ক্ষতি।’
তাঁরা সবাই মরহুমের রুহের মাগফিরাত কামনা করে শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।
বৃহদন্ত্রের ক্যানসারে আক্রান্ত হয়েছিলেন তিনি। বেলভিউ হাসপাতালে দুবার অস্ত্রোপচারের পর তাঁর অবস্থার কোনো উন্নতি হচ্ছিল না। সপ্তাহ খানেক থেকে অবস্থার ক্রমাবনতি ঘটতে থাকে। তিন দিন থেকে তাঁকে কৃত্রিম শ্বাস-প্রশ্বাস দিয়ে রাখা হয়েছিল। জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে ছিলেন তিনি। চিকিৎসকদের সব প্রচেষ্টা এবং সারা বিশ্বে বাংলা ভাষাভাষী অগণিত ভক্তের মঙ্গল কামনা সত্ত্বেও তিনি চলে গেলেন না-ফেরার দেশে।
নিউইয়র্ক থেকে সাংবাদিক আশরাফুল আলম গত রাতে জানান, বাংলাদেশ সময় রাত ১১টা ২০ মিনিটে তিনি ইন্তেকাল করেন। বিমানের ফ্লাইট পাওয়া সাপেক্ষে যত দ্রুত সম্ভব তাঁর মরদেহ দেশে নেওয়ার প্রস্তুতি চলছে। এর আগে স্থানীয় বাঙালিদের উদ্যোগে নিউইয়র্কে প্রথম জানাজা সম্পন্ন হবে।
বৃহদন্ত্রে ক্যানসার শনাক্ত হওয়ার পর তিনি চিকিৎসার জন্য নিউইয়র্কে যান। সেখানে স্লোয়ান-ক্যাটারিং ক্যানসার সেন্টারে চিকিৎসা নিতে শুরু করেন। দুই দফায় মোট ১২টি কেমো দেওয়ার পর গত মাসে বেলভিউ হাসপাতালে অনকোলজি বিভাগের প্রধান জেইন এবং ক্যানসার সার্জন জজ মিলারের নেতৃত্বে তাঁর দেহে দুই দফা অস্ত্রোপচার করা হয়েছিল।
সংক্ষিপ্ত জন্মবৃত্তান্ত
হুমায়ূন আহমেদের জন্ম নেত্রকোনার কুতুবপুরে ১৯৪৮ সালের ১৩ নভেম্বর। বাবা ফয়জুর রহমান আহমেদ ছিলেন পুলিশ কর্মকর্তা। তিনি মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর হাতে শহীদ হন। মায়ের নাম আয়েশা ফয়েজ। তাঁরা তিন ভাই ও দুই বোন। অন্য দুই ভাই হলেন লেখক মুহম্মদ জাফর ইকবাল ও কার্টুনিস্ট আহসান হাবিব।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের মেধাবী ছাত্র হুমায়ূন আহমেদ পাঠ শেষে ওই বিভাগেই প্রভাষক হিসেবে যোগ দেন। পরে যুক্তরাষ্ট্রের নর্থ ডাকোটা স্টেট ইউনিভার্সিটিতে পিএইচডি সম্পন্ন করেন।
বাংলাদেশের লেখালেখির ভুবনে প্রবাদপুরুষ হুমায়ূন আহমেদ সত্তর দশকের শুরুতে ছাত্র অবস্থাতেই লেখালেখি শুরু করেন। তবে ১৯৭২ সালে তাঁর প্রথম উপন্যাস নন্দিত নরকে প্রকাশিত হওয়ার পরেই পাঠকের মন জয় করে নেন। অর্জন করেন বিপুল জনপ্রিয়তা। তিনি মধ্যবিত্ত জীবনের কথকতা সহজ-সরল গদ্যে তুলে ধরে পাঠককে মন্ত্রমুগ্ধ করে রেখেছেন। শুধু মধ্যবিত্ত জীবনের কথকতা বয়ানেই সীমিত নয় তাঁর কৃতিত্ব, বেশ কিছু সার্থক বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনির লেখকও তিনি। জনপ্রিয় চরিত্র ‘মিসির আলী’ ও ‘হিমু’র স্রষ্টা তিনি—যে দুটি চরিত্র যথাক্রমে ‘লজিক’ এবং ‘অ্যান্টিলজিক’ নিয়ে কাজ করে। তাঁর উপন্যাসের সংখ্যা দুই শতাধিক। ঔপন্যাসিক হিসেবে শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের পর বাংলা কথাসাহিত্যে তাঁর মতো এত জনপ্রিয়তা আর কেউ পাননি।
একটা পর্যায়ে তিনি অধ্যাপনা ছেড়ে লেখালেখি, নাটক ও চলচ্চিত্র নির্মাণে নিমগ্ন হন। উপন্যাস রচনার পাশাপাশি টেলিভিশন নাটকেও তিনি একটি নিজস্ব ঘরানা সৃষ্টি করেন। বদলে দেন টিভি নাটকে গতানুগতিক ধারা। বিটিভিতে সম্প্রচারিত প্রথম ধারাবাহিক টিভি নাটক এইসব দিনরাত্রি মধ্য আশির দশকে তাঁকে এনে দিয়েছিল তুমুল জনপ্রিয়তা। তাঁর হাসির নাটক বহুব্রীহি এবং ঐতিহাসিক নাটক অয়োময় বাংলা টিভি নাটকের ইতিহাসে একটি অনন্য সংযোজন। নাগরিক ধারাবাহিক কোথাও কেউ নেই-এর ‘বাকের ভাই’ নামের একটি চরিত্র যেন বাস্তব হয়ে উঠেছিল টিভি দর্শকের কাছে। নাটকের শেষে বাকের ভাইয়ের ফাঁসির রায় হলে ঢাকার রাজপথে বাকের ভাইয়ের মুক্তির দাবিতে মিছিল হয়েছিল। এমন ঘটনা এর আগে আর ঘটতে দেখা যায়নি। এ ছাড়া অসংখ্য বিটিভি নাটক ও প্যাকেজ নাটকের নির্মাতা তিনি।
নাটকের পাশাপাশি চলচ্চিত্র নির্মাণেও তাঁর প্রতিভার স্বাক্ষর রেখেছেন তিনি। তাঁর নির্মিত প্রথম চলচ্চিত্র আগুনের পরশমণি, শ্যামল ছায়া, শ্রাবণ মেঘের দিন, দুই দুয়ারী, চন্দ্রকথা প্রভৃতি চলচ্চিত্র কেবল সুধীজনের প্রশংসাই পায়নি, মধ্যবিত্ত দর্শককেও হলমুখী করেছে বহু দিন পর।
হুমায়ূন আহমেদ ১৯৭৩ সালে গুলতেকিনের সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। হুমায়ূন ও গুলতেকিন দম্পতির চার ছেলেমেয়ে। দীর্ঘ ৩২ বছরের দাম্পত্য জীবনের অবসান ঘটিয়ে ২০০৫ সালে বিবাহবিচ্ছেদের মাধ্যমে তাঁরা পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয়ে যান। এরপর তিনি অভিনেত্রী ও পরিচালক মেহের আফরোজ শাওনকে বিয়ে করেন। হুমায়ূন-শাওন দম্পতির দুই ছেলে।
হুমায়ূন আহমেদ একুশে পদক, বাংলা একাডেমী পুরস্কারসহ দেশে-বিদেশে বিভিন্ন পুরস্কার ও সম্মাননা পেয়েছেন।
কাঁদছে হুমায়ূনের কুতুবপুর গ্রাম
মুক্তিযুদ্ধে শহীদ বাবার স্মরণে স্কুলটির নামকরণের ইচ্ছা পোষণ করেছিলেন হুমায়ূন আহমেদ। পরে সে ভাবনা থেকে সরে এসে একাত্তরের সব শহীদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে স্কুলটির নাম রেখেছিলেন শহীদ স্মৃতি বিদ্যাপীঠ। ১৯৯৬ সাল থেকে এই বিদ্যাপীঠ যাত্রা শুরু করে।
স্ত্রী মেহের আফরোজ শাওনের নকশা করা এই বিদ্যাপীঠ সব দিক থেকেই অনন্য—স্থাপত্যে, পাঠদানের রীতিতে, শিক্ষক-শিক্ষার্থীর প্রাণপ্রাচুর্যে। দশম শ্রেণী পর্যন্ত পড়াশোনার সুযোগসম্পন্ন এই বিদ্যাপীঠটি সরকারি করার জন্য জীবদ্দশায় বহু চেষ্টা করেছেন, তবে তা আর হয়নি। হাল ছেড়ে তিনি নিজেই এর খরচের জোগান দিয়ে যাচ্ছিলেন। তাঁর মৃত্যুতে বিদ্যাপীঠের ভবিষ্যত্ নিয়েও কেউ কেউ শঙ্কা প্রকাশ করলেন।
হুমায়ূনের মৃত্যুশোকে শোকাহত তাঁর পরিবারের সদস্যরা। চাচা আলতাফুর রহমান জানালেন, হুমায়ূন সর্বশেষ ২০১১ সালের ২৩ এপ্রিল এখানে এসেছিলেন। দেখভাল করেছেন সাড়ে তিন একর জমির ওপর গড়ে তোলা বিদ্যাপীঠের।
আজ শুক্রবার বিদ্যালয়ে ছুটি থাকলেও সকাল থেকেই শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা স্কুল প্রাঙ্গণে জড়ো হয়। বিদ্যাপীঠে কালো পতাকা উত্তোলন করা হয়েছে। ঘোষণা করা হয়েছে তিন দিনের শোক। দ্বিতীয় সাময়িক পরীক্ষাও স্থগিত করা হয়েছে বলে জানালেন স্কুলটির প্রধান শিক্ষক আসাদুজ্জামান।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের বেলভিউ হাসপাতালে চিকিত্সাধীন অবস্থায় গতকাল বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ সময় রাত ১১টা ২০ মিনিটে হুমায়ূন আহমেদ অন্তিম শ্বাস ত্যাগ করেন। তাঁর বয়স হয়েছিল ৬৪ বছর।
হুমায়ূন আহমেদের জন্ম নেত্রকোনার কুতুবপুরে ১৯৪৮ সালের ১৩ নভেম্বর। বাবা ফয়জুর রহমান আহমেদ ছিলেন পুলিশ কর্মকর্তা। তিনি মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর হাতে শহীদ হন। মায়ের নাম আয়েশা ফয়েজ। তাঁরা তিন ভাই ও তিন বোন। অন্য দুই ভাই হলেন লেখক মুহম্মদ জাফর ইকবাল ও কার্টুনিস্ট আহসান হাবিব।
হুমায়ূনের মরদেহ ঢাকায় পৌঁছাতে পারে রোববার
জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি এম এ মোমেন জানিয়েছেন, হুমায়ূন আহমেদের মরদেহ যত দ্রুত সম্ভব ঢাকায় পাঠানোর চেষ্টা চলছে। সম্ভব হলে শুক্রবার জানাজার পর বিমান যোগে পাঠানোর সর্বাত্মক চেষ্টা করবেন তাঁরা।
বন্ধু মাজহারুল ইসলাম জানালেন, সম্ভব হলে একই বিমানে দেশে ফিরবেন শাওন ও তাঁদের দুই শিশুপুত্র।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের বেলভিউ হাসপাতালে চিকিত্সাধীন অবস্থায় গতকাল বৃহস্পতিবার স্থানীয় সময় বেলা ১টা ২০ মিনিটে (বাংলাদেশ সময় রাত ১১টা ২০ মিনিট) শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করেন সমসাময়িক বাংলা সাহিত্যের জনপ্রিয় লেখক হুমায়ূন আহমেদ। এ সময় তাঁর শয্যা পাশে ছিলেন স্ত্রী মেহের আফরোজ শাওন, ভাই মুহাম্মদ জাফর ইকবাল, শাশুড়ি তহুরা আলি ও অন্য ঘনিষ্টজনেরা।
জানা গেছে, হুমায়ূন আহমেদের মরদেহ দেশে আনার জন্য জেট এয়ার লাইন্সের একটি ফ্লাইটে বুকিং দেওয়া হয়েছে। বুকিং নিশ্চিত (কনফার্ম) হলে আজ শুক্রবার নিউইয়র্কের সময় বিকেল সাড়ে ছয়টায় ফ্লাইটটি মুম্বাইয়ের উদ্দেশে যাত্রা করবে। সব কিছু সময় মতো হলে মুম্বাই থেকে রোববার বেলা ১২টায় বরেণ্য এ লেখকের মরদেহ দেশে পৌঁছাবে। একই ফ্লাইটে প্রয়াত লেখকের স্ত্রী ও সন্তানদের দেশে পাঠানোর চেষ্টা চলছে। জাফর ইকবাল ফিরবেন এমিরেটসের ফ্লাইটে।
হুমায়ুন ভাই আকাশছোঁয়া মানুষ
সে সময় কিন্তু হুমায়ূন আহমেদের ‘নন্দিত নরকে’ তখন পাঠকহূদয় জয় করেছে। হঠাত্ করে তাঁকে দেখে আমি একাধারে অবাক, বিস্মিত ও আনন্দিত হলাম। অবাক হলাম এই ভেবে নন্দিত নরকের লেখক হুমায়ূন আহমেদের ভাই আমার বন্ধু। এরপর তো হুমায়ুন ভাই পড়াশোনার জন্য যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমান।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় আমার নাটকে আসা। জাহাঙ্গীরনগর থিয়েটারে এক বছর নাট্য সম্পাদকের দায়িত্ব পালনও করেছিলাম। ঢাকা থিয়েটারে যোগ দিই ১৯৮৩ সালে। টেলিভিশনে আমি প্রথম কাজ করি সেলিম আলদীনের ‘গ্রন্থিকগণ কহে’ নাটকে। এরপর করি ইমদাদুল হক মিলনের ‘বারোরকম মানুষ’। ১৯৯৩ সালে আমি প্রথম হুমায়ুন আহমেদের স্ক্রিপ্টে (পাণ্ডুলিপি) প্রথম নাটক করি। নাম ‘অচিন বৃক্ষ’। তারপর ‘মাটিরও পিঞ্জিরার মধ্যে বন্ধি হইয়া রে’, ‘আজ রবিবার’ নাটকে অভিনয় করি। তবে হুমায়ুন আহমেদের পরিচালনায় আমি প্রথম অভিনয় করি ‘এই মেঘ এই রৌদ্র’ নাটকে। আমার মনে হয় আজ পর্যন্ত হুমায়ুন আহমেদের সবচেয়ে বেশি নাটকে অভিনয় করার সৌভাগ্য হয়েছে।
আমি তো মঞ্চে অভিনয় শিখেছি। কিন্তু নাটকে অভিনয়ের ক্ষেত্রে যে পরিমিতিবোধ, অভিনয়ের হাস্যরস, কতটুকু করলে অভিনয়, কতটকু করলে অতি অভিনয়, আর কতটুকু করলে অভিনয় না— এগুলো উনার মত এত ভালো কেউ বোঝে বলে আমার জানা নেই। আমি মনে করি, তিনি আসলে একজন বড় অভিনেতাও বটে। তা না হলে একা এভাবেই তিনি এতসব কাজগুলো আদায় করতে পারতেন না। আমার এও মনে হয় উনার নাটকে অভিনয়শিল্পীর কোনো কৃতিত্ব নেই। সব কৃতিত্ব একাই হুমায়ুন আহমেদের।
নাটকের কাজসহ বিভিন্ন কাজে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন দেশে আমার ঘেরা হয়েছে। ‘রূপালি রাত্রি’ নাটকের শুটিং করতে হুমায়ুন ভাইয়ের সঙ্গে গিয়েছিলাম সুইজারল্যান্ড। সঙ্গে আরও ছিলেন শাওন, ডা. এজাজ, চ্যালেঞ্জার ভাই ও স্বাধীন খসরু। ১৫ দিন সেখানে আমরা একসঙ্গে ছিলাম। উনার সঙ্গে মিশার যে আনন্দ, সেটা বলে বোঝানো যাবে না। উনি আড্ডার ছলে যে কথাগুলো বলেন, সেটা কেউ যদি সেভাবেই লিখে দিন, ওটাই আসলে একটা উপন্যাস হয়ে যাবে।
শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতির এমন কোনো শাখা নেই যে যেখানে তিনি বিচরণ করেন নাই। কবিতা, গান , নাটক, গল্প, উপন্যাস, প্রবন্ধ, চিত্রকলা সব শাখায় উনার ছিল অবাধ বিচরণ। বিশ্ব যাদুশিল্পী সমিতির সদস্যও কিন্তু তিনি। নুহাশ পল্লীতে তাঁর যে ঔষধি বাগান, শুধু সেটাই করতে একজন মানুষের এক জীবন শেষ হয়ে যাবে। এক জীবনে এতকিছু করা লোক যে আছে সেটার তুলনা একমাত্র হুমায়ুন আহমেদ নিজেই। উনি আসলে আকাশছোঁয়া একজন মানুষ।
আহসান হাবীবের বন্ধু হওয়াতে হুমায়ুন ভাই আমাকে সবসময় অভিনেতার পাশাপাশি ছোট ভাই হিসেবেও দেখতেন। পরিচয়ও কিন্তু সবাইকে সেভাবেই করে দিতেন। এর প্রমাণও কিন্তু আমি নানাভাবে নানাক্ষেত্রে পেয়েছি। একটি ঘটনার কথাই বলি। আমি ১৯৯৭ সালে ‘আজ রবিবার’ নাটকের শুটিং করছিলাম। নাটকটিতে আমার স্ত্রীও অভিনয় করেছিলেন। ডিএফপিতে আমরা শুটিং করছিলাম। প্রায় মাস খানেকের বেশি শুটিং করার কথা ছিল। হঠাত্ করেই সপ্তাহখানেক শুটিং করার পর উনি আমাকে ডেকে একটা খাম ধরিয়ে দিলেন। খুলেই দেখি টাকা। দেখি পুরো মাসের টাকাটাই উনি আমাকে দিয়ে দিয়েছেন। তখন হুমায়ুন ভাইকে কেন পুরো টাকাটা দিয়েছেন জিজ্ঞেস করতেই মজা করেই তিনি বললেন, তোমার ছোট ভাইয়ের বিয়ে। তুমি তো আমাকে দাওয়াত দেবে। টাকাটা তোমার খুব দরকার। যাও টাকাটা দিয়ে তুমি কোনাকাটা করো। এরপর আসলে উনাকে দিয়ে আর ভালোভাবে কি উদাহরণ দেয়া যেতে পারে সেটা আমার জানা নেই।
শুটিংয়ের ফাঁকে আমাদের অনেক আড্ডা হতো। সর্বশেষ যুক্তরাষ্ট্রে যওয়ার আগের সময়কার একটা ঘটনার কথা বলি। অসুস্থ হওয়ার খবর জানার মাত্র কয়েক দিন আগের ঘটনা। নুহাশ পল্লীতে শুটিং চলছে। রাতের বেলা। হুমায়ূন ভাই শুটিংয়ে নেই। হঠাত্ একজন এসে বলল, ‘স্যার আপনাকে ডাকছেন।’ আমি গেলাম। দেখলাম হুমায়ূন ভাই ড্রইং রুমে বসে আছেন। পাশে স্ত্রী মেহের আফরোজ শাওন। সামনের টেবিলে রাতের খাবার। খাবারের বিশাল আয়োজন। তিনি আমাকে বসতে বললেন। আমি বসলাম। তারপর বললেন তুমি আজ আমার সঙ্গে রাতের খাবার খাবে। হাত ধুয়ে এসো। আমি, হুমায়ূন ভাই আর হুমায়ূন ভাইয়ের স্ত্রী শাওন খেতে বসলাম।
খেতে খেতে হুমায়ূন ভাই প্রশ্ন করে বসলেন, ‘তোমার বাবা-মা জীবিত আছেন?’
আমি বললাম ‘বাবা নেই, মা জীবিত আছেন।’
হুমায়ূন ভাই বললেন, ‘মায়ের সেবা করবে। শান্তি পাবে।’
আমি বললাম,’ জী। অবশ্যই।’
কিছুক্ষণ নিশ্চুপ। তারপর আবেগ আপ্লুত হয়ে তিনি বলতে লাগলেন, ‘এই আমাকে দেখ। কত অভাগা আমি! যুদ্ধের বছর বাবা পাকবাহিনীর হাতে বাবা মারা গেছেন। বাবা মারা যাওয়ার সময় আমি ছাত্র। আয়-রোজাগার করি না। বাবা সিগারেট খেতেন। বাবাকে এক প্যাকেট সিগারেট কিনে দেয়ার সৌভাগ্য আমার হয়নি। এখন আমার কত টাকা। অথচ বাবা নেই। ইচ্ছা করলেও বাবাকে এক প্যাকেট সিগারেট আমি কিনে দিতে পারছি না। আফসোস!’
‘আফসোস’ শব্দটি উচ্চারণ করার পর আমি হতবাক হয়ে গেলাম। এক দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে রইলাম।
ফারুক নামে কিন্তু আমাদের মিডিয়াতে অনেকেই আছেন। কিন্তু আমাকে সবাই এক নামে হুমায়ুন আহমেদের ফারুক বলে চেনে। এটা আমার জন্য অনেক আনন্দের ও গর্বের। হুমায়ুন ভাই আমার অনেক শ্রদ্ধেয় ও পিতার তুল্য। অভিনয় শেখার ক্ষেত্রে ঢাকা থিয়েটার আমাকে সহযোগিতা করলেও আজকে মিডিয়াতে আমার যে অবস্থান কিংবা সবাই যে আমাকে চেনে এটার পুরো কৃতিত্বটাই একমাত্র হুমায়ুন আহমেদের।
অনুলিখন : মনজুর জিয়া
0 comments:
Post a Comment