শুধু তা-ই নয়, ব্যাংক আইনকে পাশ কাটিয়ে তারা আমানত সংগ্রহ করছে। এই আমানত ফেরত না দিলে কোম্পানির মালিকদের ধরার কোনো সুযোগ নেই। আর এভাবেই দেশের মানুষের কাছ থেকে প্রতিষ্ঠানটি বিপুল পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে।
আর এ কাজে মন্ত্রী, সাংসদ, রাজনীতিবিদ, শীর্ষ সামরিক-বেসামরিক কর্মকর্তা এবং ডিসি-এসপিদেরও ব্যবহার করছে ডেসটিনি। তাঁদের সঙ্গে ডেসটিনির মালিকদের ছবি তুলে জেলা ও উপজেলাসহ সব অফিসে বড় বড় করে টাঙিয়ে রাখা হচ্ছে। নতুন গ্রাহক-পরিবেশকদের আস্থা অর্জনের জন্য এ হলো ডেসটিনির কৌশল।
ডেসটিনির কর্মকাণ্ডের ওপর বাংলাদেশ পুলিশের (বিশেষ শাখা-এসবি) সাম্প্রতিক এক বিশেষ প্রতিবেদনে এসব কথা বলা হয়েছে। ১৭ এপ্রিল প্রতিবেদনটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। প্রতিবেদনে ডেসটিনির বিভিন্ন ধরনের কর্মকাণ্ডের বর্ণনা দিয়ে তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে।
দীর্ঘ প্রতিবেদনটিতে ডেসটিনির অবৈধ এমএলএম পদ্ধতি, বিভিন্ন দেশে এমএলএম কোম্পানির বিরুদ্ধে গৃহীত পদক্ষেপ, সামাজিক দায়বদ্ধতার নামে ডেসটিনির অর্থ ব্যয় ও এভাবে কোম্পানির ওপর গ্রাহকদের আস্থা বাড়ানোর কৌশল, খসড়া নিজের মতো না হওয়ায় আইন প্রণয়নে ডেসটিনির বাধা, এমএলএম কর্ণধারদের রাজনৈতিক উচ্চাভিলাষ ইত্যাদি তুলে ধরা হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রতারণার দায়ে প্রতিবেশী ভারত, নেপাল, শ্রীলঙ্কা এবং যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, চীন, সুইডেন, পোল্যান্ডসহ বিশ্বের ৫৩টি দেশে এমএলএম পদ্ধতিতে পণ্য বিপণন এখন নিষিদ্ধ। ডেসটিনিও একই ধরনের প্রতারণামূলক কর্মকাণ্ড করছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দ্রব্যের মান, ব্যবসায়ের বিষয়, মার্কেটিং চেইন, বিপণন প্রবণতা, মুনাফার অংশ ইত্যাদি বিবেচনায় বিশ্বের অন্য দেশের নিষিদ্ধ ও প্রতারক কোম্পানি এবং ডেসটিনির কার্যক্রম একই ধরনের।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সরকারি সংস্থা ফেডারেল ট্রেড কমিশন (এফটিসি) জনসাধারণকে এমএলএম কোম্পানির প্রতারণা থেকে সতর্ক থাকার জন্য ওয়েবসাইটে একটি পৃষ্ঠাই বরাদ্দ রেখেছে। এতে বলা রয়েছে, ‘এমএলএম পদ্ধতিতে ব্যবসায়ের অর্থ আসবে নতুন পরিবেশকের কাছ থেকে, যার পরিণতি অসংখ্য শূন্য হাত। যতই কোম্পানিগুলো বলুক না কেন শেষের দিকের ব্যক্তিরাও লাভবান হবেন, কিন্তু আমরা অসংখ্য মানুষকে পথে বসানোর ঝুঁকি মেনে নিতে পারি না।’
গত বছরই প্রতারণার দায়ে বিশ্বের বৃহৎ এমএলএম কোম্পানি দাবিদার এমওয়ের (ইন্ডিয়া) সব কার্যক্রম বন্ধ করে দেয় ভারত সরকার। তবে এ পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি এমএলএম কোম্পানির বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে। যুক্তরাষ্ট্রের সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন ১৯৭৩ সালেই ‘হলি ডে ম্যাজিক’ নামের এমএলএম কোম্পানির বিরুদ্ধে ৮০ হাজার মানুষের কাছ থেকে ২৫ কোটি ডলার মূল্যের শেয়ার বিক্রির দায়ে মামলা করে এবং প্রতারণামূলক কর্মকাণ্ডের দায়ে কোম্পানিটিকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। ২০০৭ সালে ‘বায়োফার্মান্স’ নামের কোম্পানি থেকে ৭০ লাখ ডলার জরিমানা আদায় করা হয়। একই বছরে আরেক কোম্পানি ‘এমওয়ে’কে জরিমানা করে ৭০ লাখ ডলার। ১৯৮৬ সালেও অধিক কমিশনের লোভ দেখানোর কারণে এমওয়েকে এক লাখ ডলার জরিমানা করা হয়।
চীনে এমএলএম কোম্পানি বন্ধের দাবিতে ১৯৯৮ সালে দাঙ্গা হয়, যা পরে গোটা চীনে ছড়িয়ে পড়ে। এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের মতো সুইডেন সরকারও ১৯৭৩ সালে ‘হলিডে ম্যাজিক’ নামের কোম্পানিকে জরিমানা ও নিষিদ্ধ করে। ১৯৯৭ সালে পোল্যান্ড সরকারও কয়েকটি কোম্পানিকে নিষিদ্ধ করে।
বাংলাদেশে এমএলএম শুরু হয় ১৯৯৮ সাল থেকে জিজিএনের মাধ্যমে। প্রতারণামূলক কর্মকাণ্ডের দায়ে জিজিএনকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে সরকার। এই জিজিএনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ছিলেন ডেসটিনি ২০০০ লিমিটেডের এমডি রফিকুল আমীন।
প্রতিবেদন মতে, সব এমএলএম কোম্পানিরই বৈশিষ্ট্য প্রায় এক রকম। এরা প্রভাবশালী ব্যক্তিদের ব্যবসায়ের অংশীদার করে, মাসোহারা দেয় এবং সরকার না চাইলেও সেধে গিয়ে বড় বড় ক্রীড়ানুষ্ঠান ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের স্পনসর হয়
prothom-alo
0 comments:
Post a Comment