বিশ্বের যাবতীয় প্রাণ তাদের অস্তিত্বের জন্য দুটি তথ্য ধারণকারী অণুর কাছে ঋণী, তা হলো ডিএনএ ও আরএনএ। এরা বংশগতিকে নির্দেশ করে, অর্থাৎ জিনগত তথ্য ধারণ ও সঞ্চারণ করতে পারে।
গবেষণা নিবন্ধ দুটির একটি প্রকাশিত হয়েছে বিজ্ঞানবিষয়ক নেচার কেমিস্ট্রি সাময়িকীতে। লেখক যুক্তরাষ্ট্রের অ্যারিজোনা স্টেট ইউনিভার্সিটির বায়োডিজাইন ইনস্টিটিউটের গবেষক জন চ্যাপুট। অন্যটি প্রকাশিত হয়েছে সায়েন্স সাময়িকীতে। এটির লেখক ব্রিটিশ গবেষকেরা।
সায়েন্স সাময়িকীতে প্রকাশিত প্রবন্ধটির গবেষকেরা দাবি করেছেন, পৃথিবীতে প্রাণের বিবর্তনের ধারা আরও ভালোভাবে বুঝতে তাঁরা সফলভাবে ডিএনএ ও আরএনএর ‘কৃত্রিম প্রতিরূপ’ তৈরি করতে সক্ষম হয়েছেন। ডিএনএ ও আরএনএর এই বিকল্পগুলো জীবনের উৎস তলিয়ে দেখার সুযোগ করে দিয়েছে।
জীবকোষের ডিএনএতেই দেহের গঠন ও ক্রিয়াকলাপ নিয়ন্ত্রণের যাবতীয় নির্দেশনা থাকে, যা স্থানান্তরিত হয় এক প্রজন্ম থেকে অন্য প্রজন্মে। প্রতিটি প্রজন্মের অভিজ্ঞতা, তখনকার পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টা এবং রূপান্তরের মধ্য দিয়ে এই ‘তথ্যভান্ডার’ পরিবর্তিত হতে থাকে। এভাবেই চলে বিবর্তনের ধারা।
ব্রিটিশ গবেষক ফিলিপ হোলিগার বলেন, ‘জিনগত উত্তরাধিকার ও বিবর্তন—প্রাণের এই দুটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট যে ডিএনএ বা আরএনএ ছাড়াও অন্য পলিমারের মাধ্যমে তৈরি করা সম্ভব, এই গবেষণায় সেটাই দেখতে পেয়েছি আমরা।’
কৃত্রিম ডিএনএ নিয়ে গবেষণায় এই সাফল্য হয়তো ভবিষ্যতে ‘সিনথেটিক বায়োলজির’ পথ তৈরি করে দেবে। এ ছাড়া ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে, পৃথিবীর বাইরে এই মহাবিশ্বের অন্য কোথাও যদি প্রাণের অস্তিত্ব থাকে, সেখানে বিবর্তনও থাকবে। তবে ওই প্রাণের রাসায়নিক গঠন পৃথিবীর মতো না-ও হতে পারে।
যুক্তরাজ্যের মেডিকেল রিসার্চ কাউন্সিলের ল্যাবরেটরি অব মলিকুলার বায়োলজির গবেষক ফিলিপ হোলিগার ও তাঁর সহকর্মীরা এই গবেষণায় ডিএনএ ও আরএনএর মতো ছয়টি কৃত্রিম অণু তৈরি করেন, যাকে তাঁরা বলছেন জেনো-নিউক্লিক এসিড বা এক্সএনএ। কোষ বিভাজনের সময় ডিএনএ যেভাবে বিভাজিত হয়ে সন্তানের দেহে মাতৃকোষের জিনগত তথ্য পৌঁছে দেয়, তাঁরা গবেষণায় সেই পরিবেশ তৈরি করে দেন এক্সএনএগুলোর জন্য।
দীর্ঘ ও জটিল গবেষণার শেষ পর্যায়ে বিজ্ঞানীরা লক্ষ করেন, বিভাজনের পর তৈরি হওয়া নতুন অনুলিপিতেও এক্সএনএর জিনগত তথ্য স্থানান্তরিত হয়েছে।
ডিএনএ ও আরএনএর এই প্রতিরূপ তৈরির একটি কারণ ছিল পৃথিবীতে কীভাবে জীবনের সূচনা হলো, তা বের করা।
এই গবেষণার আলোকে এই পৃথিবীতে প্রাণ যেভাবে বিকশিত হয়েছে, সেই রাসায়নিক গঠনই যে সব ক্ষেত্রে প্রাণের অস্তিত্বের জন্য অপরিহার্য হবে, তা ভাবার আর কোনো কারণ দেখছেন না গবেষকদের কয়েকজন। তবে সেই প্রাণের বিকাশের জন্যও ‘বিবর্তন’ জরুরি হবে বলে মনে করছেন তাঁরা। বিবিসি ও সায়েন্স ডেইলি। prothom-alo
0 comments:
Post a Comment