আহত শিক্ষার্থী জাহিদ হোসেনকে (১৪) গতকাল রাতে বরগুনা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। অপর শিক্ষার্থী হাসানকে প্রাথমিক চিকিত্সা দেওয়া হয়েছে।
তবে প্রধান শিক্ষক আবদুল মান্নান দুই শিক্ষার্থীকে পেটানোর বিষয়টি পুরোপুরি অস্বীকার করে প্রথম আলো অনলাইনকে বলেন, ‘আমি এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত নই, কীভাবে ওই দুই শিক্ষার্থী আহত হয়েছে তাও আমি জানি না।’ পরে এ ঘটনায় তাঁর জড়িত থাকার বিষয়ে নানা তথ্য-উপাত্ত উপস্থাপন করলে তিনি বলেন, ‘আমি এ নিয়ে আপনার সঙ্গে দেখা করে বিস্তারিত কথা বলব।’ ওই স্কুলে বেতের ব্যবহার অনেক আগেই বন্ধ করা হয়েছে বলেও তিনি জানান।
ঘটনা সম্পর্কে শিক্ষার্থীরা জানায়, গতকাল মঙ্গলবার মধ্যাহ্ন বিরতির পর বেলা আড়াইটার দিকে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবদুল মান্নান নবম শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের ইংরেজি দ্বিতীয় পত্রের ক্লাস নিতে যান। এ সময় তাঁর মুঠোফোনে একটি কল আসে এবং তিনি কথা বলতে ক্লাসের বাইরে যান। প্রধান শিক্ষক প্রায় ১৫-২০ মিনিট ফোনে কথা বলেন। ফোনে কথা শেষ করে তিনি ক্লাসে গেলে শিক্ষার্থী হাসান ও আরও কয়েকজন শিক্ষার্থী প্রধান শিক্ষকের কাছে তাদের শ্রেণীকক্ষগুলো সব সময় নোংরা ও আবর্জনায় ভরা থাকে উল্লেখ করে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করার জন্য দাবি জানায়। এতে প্রধান শিক্ষক উত্তেজিত হয়ে যান।
শিক্ষার্থীদের দাবি, এ সময় প্রধান শিক্ষক হাতে থাকা বেত দিয়ে প্রথমে হাসানকে এবং পরে জাহিদকে পেটান। হাসান ও জাহিদ অসুস্থ হয়ে পড়লে তাদের মাথায় পানি দিয়ে সুস্থ করার চেষ্টা করেন সহপাঠীরা। কিন্তু তাতে দুই শিক্ষার্থী সুস্থবোধ না করায় বিদ্যালয়ের সামনে একজন পল্লি চিকিত্সকের কাছে নেওয়া হয়। সেখানে দুই শিক্ষার্থীকে চিকিত্সা দিলেও জাহিদের অবস্থার উন্নতি না হওয়ায় গতকাল সন্ধ্যায় তাঁকে বরগুনা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
হাসপাতালে চিকিত্সাধীন জাহিদ বলে, ‘আমি কোনো দোষ করি নাই, তবু স্যার আমাকে খুব মেরেছে।’
বরগুনা জেনারেল হাসপাতালের কনিষ্ঠ পরামর্শক চিকিত্সক তাজকিয়া সিদ্দিকাহ প্রথম আলো অনলাইনকে বলেন, ‘ছেলেটির পিঠে, বাম হাতের কনুই, উরুসহ বেশ কয়েক জায়গায় এবং নিতম্বে গুরুতর বেতের আঘাত রয়েছে। এতে সে শারীরিক ও মানসিকভাবে আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছে। ছেলেটির শারীরিক ক্ষত এবং মানসিক আঘাত কাটিয়ে উঠতেও সময় লাগবে। এ জন্য বেশ কয়েক দিন ওকে চিকিত্সাধীন থাকতে হবে।’
অন্যদিকে শিক্ষার্থী হাসানকে স্থানীয় পল্লি চিকিত্সকের কাছে প্রাথমিক চিকিত্সা দিয়ে বাড়ি পাঠানো হলেও তার ডান হাত, পিঠ, নিতম্বের আঘাতের স্থানগুলো ফুলে রক্ত জমাট বেঁধে আছে। হাসানের মা মিনারা বেগম বলেন, প্রধান শিক্ষক গতকাল বিকেলে ফোন করে বিষয়টি নিয়ে বাড়াবাড়ি করতে নিষেধ করেন।
বিদ্যালয়ের পরিচালনা কমিটির সদস্য খলিলুর রহমান খান বলেন, ‘প্রধান শিক্ষক ঘটনার পর ফোন করে ওই শিক্ষার্থীকে যথাযথ চিকিত্সা করানোর জন্য আমাকে ব্যবস্থা নিতে বলে। আমি স্থানীয় পল্লি চিকিত্সক রমেশ চন্দ্রের চেম্বারে এসে দেখি জাহিদের অবস্থা ভালো না। তারপর তাকে বরগুনা হাসপাতালে চিকিত্সার জন্য পাঠাই।’
জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. আনোয়ার হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি আজ বুধবার সকালে বলেন, ‘বিদ্যালয়ের শ্রেণীকক্ষে বেতের ব্যবহার সম্পূর্ণ অবৈধ। এ বিষয়ে প্রতিটি বিদ্যালয়ে আমাদের নির্দেশনা অনেক আগেই জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। দুই শিক্ষার্থীর ওপর নির্যাতনের বিষয়টি আমাকে কেউ জানায়নি। আমি এখন বেতাগীতে আছি এসেই খোঁজ নিয়ে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেব।’
0 comments:
Post a Comment