সোমবার ওই চারটি খাল থেকে সব অবৈধ স্থাপনা ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সরিয়ে নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয় জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে। ওই দিন মাইকিং ছাড়াও জেলা প্রশাসনের এ-সংক্রান্ত নোটিশ বিভিন্ন স্থানে সেঁটে দেওয়া হয়। ২৪ ঘণ্টা সময় পার হওয়ার পর গতকাল শুরু হয় উচ্ছেদ অভিযান। এ সময় অনেককেই নিজ উদ্যোগে তাদের অবৈধ স্থাপনা সরিয়ে নিতে দেখা যায়।
প্রত্যক্ষদর্শী ও সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, গতকাল বিপুলসংখ্যক পুলিশের উপস্থিতিতে শতাধিক কর্মী এই উচ্ছেদ অভিযানে অংশ নেন। এ সময় সেখানে ভিড় জমায় স্থানীয় শত শত লোক। গতকাল নয়নের খাল থেকে তিনতলা ও দোতলাবিশিষ্ট পাকা স্থাপনাসহ মোট ১৪টি অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়েছে। এ ছাড়া গোপপাড়া খাল থেকে উচ্ছেদ করা হয় ৩৩টি অবৈধ স্থাপনা। আজ বুধবার রিকাবীবাজার ও ফেচন্নীর খালে উচ্ছেদ অভিযান চালানো হবে বলে জানা গেছে।
স্থানীয় ভূমি কার্যালয় সূত্র জানায়, চারটি খালের মধ্যে অবৈধভাবে গড়ে ওঠা মোট ১৫২টি স্থাপনায় লাল নিশানা দেওয়া হয়েছে। অবৈধ দখলদারের তালিকায় রয়েছে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির বেশ কিছু নেতার নামও। যেসব স্থাপনা নিয়ে মোকদ্দমা চলছে, সেগুলো সম্পর্কে এর মধ্যেই খোঁজখবর নেওয়ার পর সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
জেলা প্রশাসক মো. আজিজুল আলম প্রথম আলোকে বলেন, চারটি খাল সম্পূর্ণ দখলমুক্ত না হওয়া পর্যন্ত এই উচ্ছেদ অভিযান চলবে। লাল নিশানা দিয়ে অবৈধ স্থাপনাগুলো চিহ্নিত করে দেওয়া হয়েছে।
এদিকে উচ্ছেদ অভিযানের পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়েছে স্থানীয় বাসিন্দারা। তবে তাদের দাবি, অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের পাশাপাশি পরিবেশ রক্ষায় খননকাজের মাধ্যমে খালের নাব্যতাও ফিরিয়ে আনতে হবে। এ ছাড়া এলাকাবাসীর অভিযোগ, কিছু দখলবাজ উচ্ছেদ অভিযানের হাত থেকে তাদের অবৈধ স্থাপনাগুলো বাঁচাতে কৌশলে মামলা করে রেখেছে। তাই সেগুলো উচ্ছেদ অভিযানের আওতার বাইরে থেকে যেতে পারে বলে শঙ্কা রয়েছে।
বিনোদপুর এলাকায় নয়নের খাল থেকে উচ্ছেদ করা হয় অঞ্জয় কর্মকারের টিনশেডের ঘর। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘এই উচ্ছেদ অভিযানকে আমিও সমর্থন করি। কিন্তু খাল দখল করে তৈরি স্থাপনা উচ্ছেদ করলেই হবে না। খাল খনন করে নাব্যতা ফিরিয়ে আনা এবং পরিবেশ রক্ষায় পয়োনিষ্কাশনের ব্যবস্থা করতে হবে।’
বিনোদপুর উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বরেন্দ্রনাথ বিশ্বাস বলেন, খালগুলোর মুখ বরাবর গড়ে ওঠা স্থাপনাগুলো আগে সরানো দরকার।
বিনোদপুর এলাকার চাল ব্যবসায়ী মঞ্জিল দেওয়ান বলেন, ‘এত দিনে একটা ভালো কাজ হতে চলেছে। খালগুলো দখল হয়ে গিয়েছিল। সেগুলো আবার প্রাণ ফিরে পাবে, এই কথা ভেবেই ভালো লাগছে।’
মিরকাদিম পৌরসভার মেয়র মো. শহীদুল ইসলাম বলেন, ‘খালগুলো উদ্ধারে আমি অনেক দিন ফাইল নিয়ে দৌড়াদৌড়ি করছি। যাঁদের কাছে গিয়েছি, তাঁরাই বলেছেন, এই তো করছি, তালিকা করা হচ্ছে, হবে। এমন আশ্বাস দিয়েই শেষ।’ তিনি বলেন, খাল উদ্ধারের প্রচেষ্টায় প্রথম আলো যে ভূমিকা রাখল, তা মিরকাদিমবাসী চিরদিন স্মরণ করবে। অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ শেষ হওয়ার পর খালগুলো খনন করার উদ্যোগ নেওয়া হবে বলেও তিনি জানান।
উল্লেখ্য, গত বৃহস্পতিবার প্রথম আলোয় ‘নয়নের খাল আর নয়ন জুড়ায় না’ শিরোনামে মুন্সিগঞ্জের চারটি খাল নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। সংবাদটি নজরে এলে একই দিন রুল জারি করেন হাইকোর্ট। রুলে ছয়জন দখলদারকে ২৬ জানুয়ারি আদালতে হাজির হতে নির্দেশ দেওয়া হয়। এ ছাড়া দুই সপ্তাহের মধ্যে মুন্সিগঞ্জের জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালকসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের রুলের জবাব দিতে বলা হয়।
খাল রক্ষা কমিটির প্রতিবাদ সভা: মিরকাদিম খাল রক্ষা কমিটির পাঁচ দিনের কর্মসূচি শেষ হয়েছে। কর্মসূচির শেষ দিনে গতকাল গ্রিন ওয়েলফেয়ার সেন্টারের পাঠাগারে প্রতিবাদসভা অনুষ্ঠিত হয়। অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযান শুরু হওয়ায় সভায় আন্দোলনের কর্মসূচি স্থগিত ঘোষণা করা হয়। প্রতিবাদ সভায় খাল রক্ষা কমিটির কর্মীরা ছাড়াও বিভিন্ন শ্রেণীপেশার লোকজন উপস্থিত ছিলেন। খাল রক্ষা কমিটির সদস্যসচিব মাহফুজ আহমেদ বলেন, কর্মসূচি স্থগিত করা হয়েছে। উচ্ছেদ অভিযান শেষ হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করা হবে। সব অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ না করা হলে আবার আন্দোলনের কর্মসূচি দেওয়া হবে।prothom-alo
0 comments:
Post a Comment