নতুন আইন অনুযায়ী এখন বিভক্ত দুই সিটি করপোরেশনের জন্য দুজন প্রশাসক নিয়োগের প্রস্তুতি চলছে। আইনে রাষ্ট্রপতি সম্মতি দিলেই বর্তমান ঢাকা সিটি করপোরেশন বিলুপ্ত হয়ে যাবে। বিদায় নেবেন মেয়র সাদেক হোসেন খোকা।
গতকাল মঙ্গলবার জাতীয় সংসদে বহুল আলোচিত স্থানীয় সরকার (সিটি করপোরেশন) সংশোধন বিল, ২০১১ উত্থাপন করেন স্থানীয় সরকারমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম। বিকেল চারটা ৩৫ মিনিটে বিলটি উত্থাপিত হয়। স্পিকার আবদুল হামিদের সভাপতিত্বে পাঁচ মিনিটেই পাস হয়ে যায় বিলটি।
বিলটির ওপর কোনো সাংসদ জনমত যাচাই বা সংশোধনী প্রস্তাব না আনায় দ্রুততম সময়ে বিলটি পাস হয়ে যায়। কয়েকজন সাংসদ জনমত যাচাইয়ের নোটিশ দিলেও সংসদে উপস্থিত ছিলেন না। বিল উত্থাপন করে স্থানীয় সরকারমন্ত্রী বলেন, নাগরিক সুবিধা বাড়ানোর জন্যই ঢাকায় দুটি সিটি করপোরেশন করা হয়েছে। তিনি বিলটি পাসের প্রস্তাব করলে ত ৎক্ষণা ৎ তা কণ্ঠভোটে পাস হয়ে যায়।
জনমত যাচাইয়ের নোটিশ প্রদানকারীদের একজন রাশেদ খান মেনন গত রাতে প্রথম আলোকে বলেন, ‘দ্রুততম সময়ে এভাবে বিলটি পাস করায় হতাশ ও ক্ষুব্ধ হয়েছি। কারণ, ঢাকার সাংসদদের সঙ্গে আলোচনা করে এ ধরনের কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। তা ছাড়া মাত্র ১০ মিনিটেই দুটি বিল পাস করা হয়েছে। অধিবেশনে ঢুকতে ঢুকতেই বিল পাস করে অধিবেশন শেষ করা হয়েছে। ফলে, আপত্তি উত্থাপনের সুযোগই পাইনি।’ ঢাকাকে ভাগ করা নিয়ে আরও আলাপ-আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া প্রয়োজন ছিল বলে মনে করেন তিনি।
৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন: আইন অনুসারে প্রশাসক নিয়োগের ৯০ দিনের মধ্যে (ফেব্রুয়ারির মধ্যে) ঢাকা উত্তর ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের নির্বাচন করতে হবে। এখন সরকার তার পছন্দের দুজন ব্যক্তিকে প্রশাসক নিযুক্ত করবে। তাঁরা সরকারি কর্মকর্তা হতে পারেন, না-ও হতে পারেন।
প্রশাসক নিয়োগ: সদ্য পাস হওয়া আইন অনুসারে মেয়াদ শেষে দেশের সব সিটি করপোরেশনে প্রশাসক নিয়োগ করা হবে। ২০০৯ সালের আইনের ৬ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী নির্বাচিত প্রতিনিধি না হওয়া পর্যন্ত মেয়র দায়িত্ব পালন করবেন। কিন্তু সংশোধিত আইনে এ বিধান বাতিল করা হয়েছে।
সব সিটি করপোরেশনে প্রশাসক নিয়োগের বিধান করা হলেও মেয়াদ ভিন্ন রাখা হয়েছে। আইনের ২৫(৪) অনুচ্ছেদ সংশোধন করে প্রশাসকের মেয়াদ নতুন করপোরেশনের জন্য ১৮০ দিন রাখা হয়েছে। মেয়াদোত্তীর্ণ এবং ভেঙে দেওয়া সিটি করপোরেশনে প্রশাসকের মেয়াদ রাখা হয়েছে ৯০ দিন।
ডিসিসিকে দুই ভাগ করতে ‘স্থানীয় সরকার (সিটি করপোরেশন) (সংশোধন) বিল, ২০১১’ ২৩ নভেম্বর সংসদে উত্থাপিত হয়। মাত্র ছয় দিনের মধ্যেই কমিটির প্রতিবেদন পেশসহ গতকাল বিলটি পাস হয়।
বিশেষজ্ঞ মত: প্রথম আলোর পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হলে স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ তোফায়েল আহমেদ বলেন, তাড়াহুড়ো করে এ বিল পাস করে সরকারের কী রাজনৈতিক অর্জন হলো, তা স্পষ্ট নয়। কোনো উদ্দেশ্য ঠিক না করেই এ ধরনের আইন করে সরকার একটি ঝুঁকি নিল। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ নিজেদের মধ্যেও বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করলে হয়তো লাভ হতো। কারণ, আওয়ামী লীগের অনেক নেতা-কর্মীও কিন্তু মনে করেন, এভাবে ঢাকাকে ভাগ করা ঠিক হয়নি।
কোন ভাগে কোন ওয়ার্ড: ৩৬টি ওয়ার্ড নিয়ে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন গঠন করা হলো। ওয়ার্ডগুলো হচ্ছে: ১ থেকে ২৩, ৩৭ থেকে ৪৭ এবং ৫৪ ও ৫৫ নম্বর ওয়ার্ড।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন গঠিত হলো ৫৬টি ওয়ার্ড নিয়ে। এগুলো হচ্ছে: ২৪ থেকে ৩৬, ৪৮ থেকে ৫৩ এবং ৫৬ থেকে ৯২ নম্বর ওয়ার্ড। prothom-alo
0 comments:
Post a Comment