বাউলসাধক ফকির লালন শাহর ১২১তম তিরোধান দিবস উপলক্ষে গতকাল রোববার শুরু হয়েছে চার দিনের লালন স্মরণোৎসব। সন্ধ্যায় কুষ্টিয়ার লালন একাডেমি আয়োজিত স্মরণোৎসবের উদ্বোধন করেন একুশে পদকপ্রাপ্ত বাউল আবদুল করিম শাহ। এর আগে কালী নদীর তীরে লালনের একটি দেয়ালচিত্র (ম্যুরাল) উন্মোচন করেন অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ। উৎসব চলবে ১৯ অক্টোবর পর্যন্ত।
আখড়াবাড়ির ভেতরে ও সামনের বিশাল মাঠে শুধু ভক্ত, অনুসারী, সাধু, বাউল ও দর্শনার্থীদের বিপুল সমাবেশ। দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে বাউলসাধকেরা এসেছেন তিরোধান দিবসে সাঁইজির প্রতি ভক্তি নিবেদন করতে। এটিই তাঁদের প্রধান উদ্দেশ্য। এ ছাড়া সাধুসঙ্গ ও সংগীতের মধ্য দিয়ে আধ্যাত্মিক সাধনার পথে দয়াল-মুর্শিদের সন্ধানও এ সমাবেশে তাঁদের অংশ নেওয়ার একটি বিশেষ লক্ষ্য। নিজেদের মধ্যে তত্ত্বকথার গূঢ় আলোচনায় মেতে থাকেন কেউ কেউ। আয়োজকদের পক্ষ থেকে তিনবেলা খাবারের ব্যবস্থা করা হয়। এরপর বাউলসাধুরা নিজ ব্যবস্থাপনাতেই আহারের আয়োজন করেন। এর আগে তাঁদের গোসলের ভালো বন্দোবস্ত ছিল না। এবারই প্রথম সাধকদের গোসলের জন্য তৈরি করা হয়েছে একটি পুকুরঘাট। সাধুসন্তরা তাতে বেশ সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন।
এবারের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান বিগত কয়েক বছরের চেয়ে খানিকটা ব্যতিক্রমী। অশীতিপর সাধক ফকির আবদুল করিম শাহ স্মরণোৎসবের উদ্বোধন করায় বাউলেরা মনে করছেন আয়োজনে ভিন্নমাত্রা পেয়েছে। এর আগে বাউলদের উৎসবে বাউলেরাই প্রায় উপেক্ষিত ছিলেন। উৎসবের উদ্বোধন করে করিম শাহ বলেন, ‘আমি সাঁইজির সেবায় আবার এখানে আসতে পেরে খুবই আনন্দিত। বয়সের ভারে নুয়ে গেছে শরীর। আগের মতো আর চলাফেরা করতে পারি না। তবে যত দিন বেঁচে আছি, সাঁইজির গান গেয়েই মানবধর্ম প্রতিষ্ঠা করার সাধনা চালিয়ে যাব।’
আলোচনা করেন সাংসদ মজহারুল হক প্রধান, কুষ্টিয়া পৌর মেয়র আনোয়ার আলী, কুমারখালী উপজেলা চেয়ারম্যান আবদুর রউফ, জেলা প্রশাসক বনমালী ভৌমিক, আজগর আলী প্রমুখ। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন খুলনা বিভাগীয় কমিশনার মসিউর রহমান। চার দিনের এ উৎসবের পৃষ্ঠপোষকতা দিয়েছে মুঠোফোন সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান বাংলালিংক।
অনুষ্ঠানের প্রবীণ সাধক করিম শাহ লালন সাঁইয়ের ‘এলাহি আল মিম গো আল্লাহ বাদশা আলমপনা তুমি’ গানটি গেয়ে গানের পালা শুরু করেন। এবারের উৎসবে দীর্ঘ ছয় বছর পর একক গান পরিবেশন করেন বিশিষ্ট লালনশিল্পী ফরিদা পারভীন। রাতভর চলতে থাকে গান।
ওদিকে বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আসা বাউলেরা ছোট ছোট দলে মিলিত হয়ে সন্ধ্যার পরপরই গানে গানে সাধন-ভজনে মগ্ন হয়ে পড়েন। তাঁদের বিশ্বাস, সাঁইজির মৃত্যু হয়নি। লোকান্তর হয়েছে মাত্র। চর্মচোখে তাঁকে দেখা যায় না বটে, তবে তিনি ভক্তের পাশেই আছেন। ভক্তদের মধ্যেই বিরাজ করছেন। prothom-alo
0 comments:
Post a Comment