জুলিয়াস রবার্ট ভন ম্যায়ের
শক্তির নিত্যতা নিয়ে বিজ্ঞানীরা অনেক আগে থেকেই ভেবেছেন। বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে অনেকেই বুঝতে পারছিলেন শক্তি হারিয়ে যাচ্ছে না, বরং রূপ পরিবর্তন করছে। কিন্তু নির্দিষ্ট কোনো তত্ত্ব বা সূত্র দিয়ে এটিকে প্রকাশ করার জন্য অনেক সময়ের প্রয়োজন হয়েছে। এ কাজটি প্রথম করেছিলেন জার্মান বিজ্ঞানী জুলিয়াস রবার্ট ভন ম্যায়ের। ঘটনাটি বেশ মজার। তিনি ছিলেন একজন সার্জন বা শল্যচিকিৎসক। ১৮৪০ সালে একটি ওলন্দাচ জাহাজে করে জাভা দ্বীপে (ইন্দোনেশিয়ার একটি দ্বীপ, যা পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম) যাচ্ছিলেন। চিকিৎসক হওয়ার কারণে তাঁকে নিয়মিত মানুষের শিরা ও রক্ত পরীক্ষা করতে হতো। তিনি খেয়াল করলেন, ইউরোপের মানুষের তুলনায় তাঁর জাহাজের এবং ওই অঞ্চলের মানুষের রক্ত অনেক বেশি লাল। তখন তিনি ভাবলেন, রক্তের রং লাল হওয়ার প্রধান কারণ অক্সিজেন। রক্তে অক্সিজেনের পরিমাণ যত বেশি, রক্ত তত লাল হবে। এখন বায়ুতে অক্সিজেনের পরিমাণ একই। তাহলে শরীরে এই অতিরিক্ত অক্সিজেন কোথা থেকে এল। তখন তিনি যুক্তি দাঁড় করালেন, মানুষ উষ্ণ রক্তের প্রাণী। বেঁচে থাকার জন্য শরীরের তাপমাত্রা পরিবেশের তাপমাত্রার চেয়ে বেশি রাখতে হয়, অর্থাৎ তাপ উৎপন্ন করতে হয়। শীতপ্রধান এলাকায় পরিবেশ অনেক বেশি ঠান্ডা থাকে, তাই অনেক বেশি তাপ উৎপন্ন করার প্রয়োজন পড়ে। অন্যদিকে গরম এলাকায় পরিবেশ গরম থাকে বলে শরীরে তুলনামূলক কম তাপ উৎপন্ন করেই শরীর উষ্ণ রাখা যায়। তাপ উৎপন্ন করতে প্রয়োজন হয় অক্সিজেন। ফলে উষ্ণ এলাকায় শরীরে অক্সিজেন কম প্রয়োজন হয়। অর্থাৎ শরীরে অক্সিজেন বেশি জমা থাকে। তাই রক্তের রংও বেশি লাল হয়। আর শীতপ্রধান এলাকায় অক্সিজেন অনেক বেশি খরচ হয় বলে এসব এলাকায় রক্তের রং তুলনামূলক কম লাল হয়। (গায়ের রঙের ক্ষেত্রেও এর প্রভাব রয়েছে। শীতপ্রধান অঞ্চলের মানুষ এ কারণে তুলনামূলক ফর্সা হয়। আবার উষ্ণ অঞ্চলের মানুষ কিছুদিন শীতপ্রধান এলাকায় কাটানোর পর দেখা যায় চেহারা কিছুটা ফর্সা বা ফ্যাকাশে হয়ে গেছে। আর মেলানিনের প্রভাব তো আছেই। এ কারণে মানুষের গায়ের রং বা বর্ণ দিয়ে মানুষকে বিচার করা ঠিক নয়। ব্যাপারটা পরিবেশ ও জিনগত ব্যাপার।)
ম্যায়ার আরও খেয়াল করলেন, শরীরে যতটুকু তাপ উৎপন্ন হচ্ছে তার সবটুকুই তাপ উৎপন্ন করতে লাগছে না। তখন তিনি ধারণা করলেন আমরা যে কাজ করি, সেটা আসলে একধরনের শক্তি। তিনি পদার্থবিজ্ঞান পড়া শুরু করলেন এবং কিছুদিন পর তাপশক্তি ও যান্ত্রিক শক্তির মধ্যে সম্পর্ক দাঁড় করালেন। এটিই ছিল শক্তির নিত্যতা সূত্রের প্রথম গাণিতিক প্রকাশ। এটি ছিল: ১ কিলোক্যালরি = ৩৬৫ কিলোগ্রাম বলমিটার। এর আধুনিক মান হচ্ছে ১ কিলোক্যালরি = ৪.১৮৪ কিলোজুল।
সুব্রত দেবনাথ
0 comments:
Post a Comment