বিপন্ন হতে চলেছে সবুজ ব্যাঙ
ছবি: ডব্লিউটিবি
বর্ষার বৃষ্টিমুখর দিনে মেঘের গুরুগর্জন আর ব্যাঙের ঘ্যাঙর ঘ্যাঙর ডাকের ঐকতান যেমন বাংলার প্রকৃতির চিরায়ত বৈশিষ্ট্য, তেমনি তা বাঙালির মধুর স্মৃতিও। জীবনযাত্রার নানা পরিপ্রেক্ষিতে জড়িয়ে থাকা এই নিরীহ প্রাণীটি নিয়ে লেখা হয়েছে অনেক ছড়া, কবিতা, গল্প প্রবাদ-প্রবচন। কিন্তু দেশে ব্যাঙের অস্তিত্ব এখন বড়ই বিপন্ন। প্রাণিবিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, মোট ৩৮ প্রজাতির ব্যাঙ এখন টিকে আছে তার মধ্যে চট্টগ্রামে ২৫ প্রজাতির, সুন্দরবনে আট প্রজাতির ও বাকিগুলো আছে দেশের সর্বত্র।
তবে সময় যত গড়াচ্ছে দেশের ব্যাঙের সংখ্যা তত কমছে। হাতেকলমে জীববিজ্ঞান শিক্ষার কাজেই শিক্ষার্থীদের হাতে বাংলাদেশে বছরে ২০ থেকে ২৫ লাখ ব্যাঙের প্রাণ যাচ্ছে। জলাভূমি ভরাট, দূষণ আর নির্বিচারে কীটনাশকের ব্যবহারে বিপন্ন ব্যাঙ রক্ষায় আজ শুক্রবার বিশ্বজুড়ে পালিত হবে বিশ্ব ব্যাঙ সচেতনতা দিবস। এবারের দিবসের প্রতিপাদ্য বিষয় ‘ব্যাঙের আবাসস্থল রক্ষা করো’।
একসময় শহর-গ্রামনির্বিশেষে মানুষ ব্যাঙের ডাক শুনতে পেতেন। সেই ডাক শুনে ধারণা করতেন বৃষ্টি নামবে। বর্ষায় ব্যাঙের ডাক যত বাড়ে, বৃষ্টির তীব্রতা তত বাড়বে বলে ধরে নেওয়া হতো। দেশের গ্রামে-গঞ্জে একসময় বৃষ্টি না হলে ঘটা করে ব্যাঙের বিয়ে দেওয়া হতো। এখনো কালেভদ্রে অনেক খরাপ্রবণ এলাকায় এই স্পর্শকাতর ত্বক ও অনূভূতির প্রাণীটির বিয়ে দেওয়ার কথা শোনা যায়।
ডোবা-নালার ক্ষুদ্রাকৃতির কীট-পতঙ্গ, ফসলের ক্ষেতের ক্ষতিকারক পোকা-মাকড় খেয়ে ব্যাঙ প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষা করে। জমিতে কীটনাশকের ব্যবহার ক্রমাগত বাড়তে থাকায় অতিপরিচিত সোনা ব্যাঙের সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে কমে আসছে বলে জানিয়েছেন প্রাণিবিদেরা।
সম্প্রতি বিজ্ঞানীরা জেনেছেন, প্রকৃতির এই নিরীহ প্রাণীটি ভূমিকম্প ও পাহাড় ধসের পূর্বাভাস দিতে পারে। বাঁচাতে পারে লাখো মানুষের জীবন। যুক্তরাজ্যের ওপেন ইউনিভার্সিটির প্রাণিবিদ্যার অধ্যাপক রাসেল গ্রান্ট সম্প্রতি এক গবেষণায় দেখেছেন, কুনোব্যাঙ ভূমিকম্পের বিষয়টি আগেভাগে জানতে পারে।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যার অধ্যাপক গাজী আসমত এ ব্যপারে প্রথম আলোকে বলেন, শীতল রক্তবিশিষ্ট হওয়ায় কুনোব্যাঙের বাইরের তাপমাত্রার সঙ্গে সঙ্গে এদের দেহের তাপমাত্রার পরিবর্তন ঘটে। মাটি ও পানির যেকোনো পরিবর্তন ওরা আগেভাগে টের পায়। বিশেষ করে তীব্র বৃষ্টিপাত হলে ব্যাঙ জোরে শব্দ করে মানুষকে সচেতন করতে পারে। দেশের পার্বত্য জেলাগুলোতে ব্যাঙের ডাককে অনুসরণ করে ভূমি ধসের পূর্বাভাস দেওয়া সম্ভব বলে তিনি মত দেন। তাই ব্যাঙ রক্ষার সরকারের জোরদার পদক্ষেপ দরকার।
0 comments:
Post a Comment