1 / 1
লৌহমানবী খ্যাত সাবেক ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী মার্গারেট থ্যাচার আর নেই। ৮৭ বছর বয়সে মস্তিস্কে রক্তক্ষরণে সোমবার সকালে তিনি মারা গেছেন বলে জানিয়েছে তার মুখপাত্র।
যুক্তরাজ্যের একমাত্র নারী প্রধানমন্ত্রী থ্যাচার এই দায়িত্বে ছিলেন এক যুগ, যা অতিক্রম এখনো কেউ করেননি।
রক্ষণশীল দলের থ্যাচার ১৯৭৯ সাল থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। রাজনৈতিক জীবনে তিনি ছিলেন কঠোর, আপসহীন এবং স্পষ্টভাষী, আর এ কারণেই তাকে বলা হত ‘লৌহমানবী’।
২০০২ সালে স্ট্রোকের পর থেকে থ্যাচার সব কাজ থেকে অবসরে যান। এরপর তার আরো কয়েকবার স্ট্রোক হয়েছিল। সব শেষ স্ট্রোকে মারা গেলেন তিনি।
শোকার্তরা এরই মধ্যে বেলগ্রাভিয়ার বাড়িতে ফুল দিয়ে তাকে শেষ শ্রদ্ধা জানিয়েছে।
থ্যাচারের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন। তিনি বলেছেন, দেশ একজন মহান নেতা, মহান প্রধানমন্ত্রী এবং একজন মহান ব্রিটিশকে হারাল।
রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথও শোক প্রকাশ করে থ্যাচারের পরিবারের কাছে সহানুভূতির বার্তা পাঠিয়েছেন।
যুক্তরাজ্য সরকার জানিয়েছে, লন্ডনের সেন্ট পলস ক্যাথেড্রালে সামরিক মর্যাদায় আনুষ্ঠানিকতার মধ্য দিয়ে থ্যাচারের শেষকৃত্য করা হবে।তবে তার পরিবারের ইচ্ছানুযায়ী এ শেষকৃত্য পূর্ণ রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় করা হবে না।
থ্যাচার পরিবারের মুখপাত্র লর্ড টিম বেল সোমবার সকালে থ্যাচারের মৃত্যুর খবর দিয়ে বলেন, “অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে জানাচ্ছি যে, মার্ক এবং ক্যারোল থ্যাচার তাদের মা ব্যারোনেস থ্যাচারের মারা যাওয়ার কথা জানিয়েছেন।”
থ্যাচার পরিবারের মুখপাত্র লর্ড টিম বেল সোমবার সকালে থ্যাচারের মৃত্যুর খবর দিয়ে বলেন, “অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে জানাচ্ছি যে, মার্ক এবং ক্যারোল থ্যাচার তাদের মা ব্যারোনেস থ্যাচারের মারা যাওয়ার কথা জানিয়েছেন।”
মানুষের জীবনযাত্রায় থ্যাচার বাস্তবিকই পরিবর্তন এনে দিয়েছিলেন। আর তাই দেশের এ যাবৎকালের একজন মহান প্রধানমন্ত্রী হিসাবে তিনি স্মরণীয় হয়ে থাকবেন বলে মন্তব্য করেন বেল।
“আমেরিকা সত্যিকারের এক বন্ধুকে হারাল’ থ্যাচারের মৃত্যুতে এক শোকবার্তায় একথা বলেন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। বিশ্ব তার মৃত্যুতে মুক্তি ও স্বাধীনতার অন্যতম এক পথিকৃৎকে হারাল বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
ওদিকে, স্নায়ুযুদ্ধাবসান এবং ইউরোপে বিভক্তি জয়ে তার ভূমিকা অবিস্মরণীয় বলে মন্তব্য করেন জার্মানির চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল।
মার্গারেট থ্যাচারের জন্ম লিংকনশায়ারে ১৯২৫ সালের ১৩ অক্টোবরে। মুদিদোকানির মেয়ে থ্যাচার ১৯৫৯ সালে উত্তর লন্ডন থেকে কনজারভেটিভ দলের এমপি হন । প্রধানমন্ত্রিত্ব ছাড়ার পর হাউজ অফ কমন্সে ১৯৯২ সাল পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন তিনি।
১৯৭৫ সালে সাবেক প্রধানমন্ত্রী এডওয়ার্ড হিথকে চ্যালেঞ্জ করে দলের নেতৃত্বে উঠে আসেন থ্যাচার। ১৯৭৯, ১৯৮৩ এবং ১৯৮৭ সালের সাধারণ নির্বাচনে তিন-তিনবার দলের জয় ছিনিয়ে আনেন তিনি।
দেশের কয়েকটি রাষ্ট্রায়ত্ত শিল্প বেসরকারিকরণ করে থ্যাচার সরকার। ১৯৮২ সালে ফকল্যান্ড দ্বীপপুঞ্জ নিয়ে আর্জেন্টিনার সঙ্গে যুক্তরাজ্যের যুদ্ধের সময়টিতেও থ্যাচার ক্ষমতায় ছিলেন।
রাজনৈতিক জীবনে দেশের চেহারা পাল্টে দেয়া একজন নেতা হিসাবে থ্যাচার যেমন খ্যাতি কুড়িয়েছেন, তেমনি ধনী-গরিব বিভেদ সৃষ্টির জন্য তিক্ত সমালোচনার শিকারও হয়েছেন।
স্নায়ুযুদ্ধকালে থ্যাচারের কাছের বন্ধু ছিলেন সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট রোনাল্ড রিগান। রিগানের সঙ্গে পারস্পরিক সহযোগিতার ভিত্তিতে কাজ করেছিলেন থ্যাচার।১৯৯১ সালের উপসাগরীয় যুদ্ধে তিনি তৎকালীন প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশকে সমর্থন দেন।সোভিয়েত নেতা মিখাইল গর্বাচেভের সঙ্গে কাজ করার আগ্রহও প্রকাশ করেছিলেন তিনি।
0 comments:
Post a Comment