এভারেস্টজয়ী বাংলাদেশের প্রথম নারী নিশাদের মা-বাবা
ছবি: প্রথম আলো
উৎকণ্ঠা! উৎকণ্ঠা আর উৎকণ্ঠা। টানা তিন দিন তিন রাত ঘুম নেই। সারাক্ষণ শুধু ফোনের জন্য প্রতীক্ষা। কখন একটা খবর পাবেন। মাঝেমধ্যে টেলিভিশনের পর্দায় চোখ রাখছেন, যদি কোনো খবর মেলে। বাবা আবদুল মান্নান মজুমদার, মা আশুরা মজুমদার আর তাঁদের পুরো পরিবারের চৈতন্যজুড়ে তখন শুধুই নিশাত মজুমদার।
গতকাল সকাল ১০টা। বেজে উঠল মান্নান সাহেবের মুঠোফোন। দ্রুত কাঁপা হাতে ফোন ধরলেন তিনি। ভেসে এল এই মুহূর্তে পৃথিবীর সবচেয়ে আনন্দবার্তাটি, ‘অভিনন্দন! আপনার মেয়ে নিশাত মজুমদার পৃথিবীর সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ এভারেস্টে পৌঁছেছেন!’ আনন্দে দম বন্ধ হয়ে যেতে চায় তাঁর। গোটা পরিবার খুশিতে আত্মহারা! এরপর শুধুই আনন্দ আর আনন্দ। ফোনে একের পর এক অভিনন্দনবার্তা। কেউ কেউ মিষ্টি নিয়ে হাজির। আত্মীয়স্বজন, নিশাতের বন্ধু, সহকর্মীরা একে একে জড়ো হতে থাকলেন বাসায়। দেশের প্রথম এভারেস্টজয়ী নারী নিশাত মজুমদারের বাড়ি তখন এক আনন্দভুবন।
গতকাল পড়ন্ত বিকেলে নিশাত মজুমদারের গ্রিন রোডের বাসা চিনে নিতে কষ্ট হয় না। এই পাড়ার সবাই ততক্ষণে জেনে গেছে নিশাতের এভারেস্ট জয়ের খবর। বাবা মান্নান মজুমদার মুক্তিযোদ্ধা। মা আশুরা মজুমদার গৃহিণী।
মান্নান মজুমদার বললেন, ‘আমরা সব সময়ই তার কাজে উৎসাহ দিয়েছি। ভীষণ চুপচাপ আমার এই মেয়েটি। চুপচাপ হলে কী হবে, যেন তুসের আগুন। হার মানে না। প্রচণ্ড আত্মবিশ্বাসী। সে নিজের সামর্থ্য দেখিয়ে দিয়েছে।’
২০০৬ সালে এভারেস্টের বেসক্যাম্প পৌঁছানোর পর মা নিজেই তাঁকে প্রতিদিন রমনা উদ্যানে অনুশীলন করতে নিয়ে যেতেন। মা হাঁটতেন আর মেয়ে নিজেকে পাহাড়ে ওঠার জন্য প্রস্তুত করতেন। আশুরা মজুমদার বলছিলেন, ‘সে চাকরির ফাঁকে ফাঁকে পাহাড়ে ওঠার বিভিন্ন অনুশীলন করত। ওর সঙ্গে আমাদের শেষ কথা হয় এই মাসের ৮ তারিখ, তা-ও এক থেকে দেড় মিনিট মাত্র। যাওয়ার আগে খুবই অল্প কথা হয়েছে। প্রস্তুতি নিয়ে খুবই ব্যস্ত ছিল ও। এখন অপেক্ষায় আছি, মেয়েটা কবে আমাদের কোলে ফিরে আসবে? ও ফিরে এলে আমাদের আনন্দ পূর্ণতা পাবে।’
মেয়েকে কখনোই ‘মেয়ে’ হিসেবে মনে হয়নি বাবা আবদুল মান্নান মজুমদারের। মেয়েকে সন্তান হিসেবেই ভাবতে বেশি ভালোবাসতেন। তিনি বললেন, ‘আমাদের সমাজে মেয়েদের যেভাবে মূল্যায়ন করা হয়, সেখান থেকে বেরিয়ে এসে নিশাত যা করে দেখিয়েছে তাতে আমি গর্বিত। দেশের নারীদের জন্য সে একটা অনুপ্রেরণা হবে, এটা ভাবতেই ভালো লাগছে। মেয়ের নাম রেখেছিলাম নিশাত, নিশাত মানে খুশি। সে সত্যিই আজ খুশির ফোয়ারা বইয়ে দিল!’
নিশাত মজুমদার চার ভাইবোনের মধ্যে দ্বিতীয়। বড় বোন শিউলি মারজান মজুমদার থাকেন লক্ষ্মীপুরে; মুঠোফোনে বললেন, ‘বোনটা আমার যে কষ্ট করেছে, তার প্রতিদান সে পেয়েছে।’
নিশাতের ছোট ভাই আরহাম মজুমদার পেশায় ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট। আকাশে উড়াল দেওয়াই তাঁর পেশা; বললেন, ‘এভারেস্টের ওপর দিয়ে কখনো যাইনি, যদি কখনো যাই, তাহলে মনে পড়বে আপু তো এই পাহাড়ের চূড়াই ছুঁয়েছিল।’ সবার ছোট ভাই ইফতেখার জানালেন, ‘দেখেছি এই এভারেস্ট জয়ের জন্য আপু কতটা কষ্ট করেছে। তার সব কষ্ট এবার সার্থক হলো।’
তখন সন্ধে নেমেছে। মেয়ের খুশির খবর বলতে বলতে বাবা আবদুল মান্নান মজুমদার ফিরে গেলেন সেই একাত্তরের দিনগুলোতে; বললেন, ‘একটি স্বাধীন দেশ পাওয়ার জন্যই তো সেদিন যুদ্ধ করেছিলাম। প্রাণপণ লড়াই করেছি একটি লাল-সবুজ পতাকার জন্য। আর আজ সেই লাল-সবুজ পতাকা নিয়েই প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে আমার মেয়ে পৃথিবীর সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ এভারেস্টে পা রাখল। এ আনন্দ ভাষায় প্রকাশ করা যায় না।’ চশমার ফ্রেম কপালে তুলে চোখ মুছতে মুছতে বললেন, ‘এটা কেবল ওর একার নয়, শুধু আমাদের নয়, সারা দেশের মানুষের জয়।’ ততক্ষণে চোখ ভিজে উঠেছে আশুরা মজুমদারেরও।
গতকাল সকাল ১০টা। বেজে উঠল মান্নান সাহেবের মুঠোফোন। দ্রুত কাঁপা হাতে ফোন ধরলেন তিনি। ভেসে এল এই মুহূর্তে পৃথিবীর সবচেয়ে আনন্দবার্তাটি, ‘অভিনন্দন! আপনার মেয়ে নিশাত মজুমদার পৃথিবীর সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ এভারেস্টে পৌঁছেছেন!’ আনন্দে দম বন্ধ হয়ে যেতে চায় তাঁর। গোটা পরিবার খুশিতে আত্মহারা! এরপর শুধুই আনন্দ আর আনন্দ। ফোনে একের পর এক অভিনন্দনবার্তা। কেউ কেউ মিষ্টি নিয়ে হাজির। আত্মীয়স্বজন, নিশাতের বন্ধু, সহকর্মীরা একে একে জড়ো হতে থাকলেন বাসায়। দেশের প্রথম এভারেস্টজয়ী নারী নিশাত মজুমদারের বাড়ি তখন এক আনন্দভুবন।
গতকাল পড়ন্ত বিকেলে নিশাত মজুমদারের গ্রিন রোডের বাসা চিনে নিতে কষ্ট হয় না। এই পাড়ার সবাই ততক্ষণে জেনে গেছে নিশাতের এভারেস্ট জয়ের খবর। বাবা মান্নান মজুমদার মুক্তিযোদ্ধা। মা আশুরা মজুমদার গৃহিণী।
মান্নান মজুমদার বললেন, ‘আমরা সব সময়ই তার কাজে উৎসাহ দিয়েছি। ভীষণ চুপচাপ আমার এই মেয়েটি। চুপচাপ হলে কী হবে, যেন তুসের আগুন। হার মানে না। প্রচণ্ড আত্মবিশ্বাসী। সে নিজের সামর্থ্য দেখিয়ে দিয়েছে।’
২০০৬ সালে এভারেস্টের বেসক্যাম্প পৌঁছানোর পর মা নিজেই তাঁকে প্রতিদিন রমনা উদ্যানে অনুশীলন করতে নিয়ে যেতেন। মা হাঁটতেন আর মেয়ে নিজেকে পাহাড়ে ওঠার জন্য প্রস্তুত করতেন। আশুরা মজুমদার বলছিলেন, ‘সে চাকরির ফাঁকে ফাঁকে পাহাড়ে ওঠার বিভিন্ন অনুশীলন করত। ওর সঙ্গে আমাদের শেষ কথা হয় এই মাসের ৮ তারিখ, তা-ও এক থেকে দেড় মিনিট মাত্র। যাওয়ার আগে খুবই অল্প কথা হয়েছে। প্রস্তুতি নিয়ে খুবই ব্যস্ত ছিল ও। এখন অপেক্ষায় আছি, মেয়েটা কবে আমাদের কোলে ফিরে আসবে? ও ফিরে এলে আমাদের আনন্দ পূর্ণতা পাবে।’
মেয়েকে কখনোই ‘মেয়ে’ হিসেবে মনে হয়নি বাবা আবদুল মান্নান মজুমদারের। মেয়েকে সন্তান হিসেবেই ভাবতে বেশি ভালোবাসতেন। তিনি বললেন, ‘আমাদের সমাজে মেয়েদের যেভাবে মূল্যায়ন করা হয়, সেখান থেকে বেরিয়ে এসে নিশাত যা করে দেখিয়েছে তাতে আমি গর্বিত। দেশের নারীদের জন্য সে একটা অনুপ্রেরণা হবে, এটা ভাবতেই ভালো লাগছে। মেয়ের নাম রেখেছিলাম নিশাত, নিশাত মানে খুশি। সে সত্যিই আজ খুশির ফোয়ারা বইয়ে দিল!’
নিশাত মজুমদার চার ভাইবোনের মধ্যে দ্বিতীয়। বড় বোন শিউলি মারজান মজুমদার থাকেন লক্ষ্মীপুরে; মুঠোফোনে বললেন, ‘বোনটা আমার যে কষ্ট করেছে, তার প্রতিদান সে পেয়েছে।’
নিশাতের ছোট ভাই আরহাম মজুমদার পেশায় ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট। আকাশে উড়াল দেওয়াই তাঁর পেশা; বললেন, ‘এভারেস্টের ওপর দিয়ে কখনো যাইনি, যদি কখনো যাই, তাহলে মনে পড়বে আপু তো এই পাহাড়ের চূড়াই ছুঁয়েছিল।’ সবার ছোট ভাই ইফতেখার জানালেন, ‘দেখেছি এই এভারেস্ট জয়ের জন্য আপু কতটা কষ্ট করেছে। তার সব কষ্ট এবার সার্থক হলো।’
তখন সন্ধে নেমেছে। মেয়ের খুশির খবর বলতে বলতে বাবা আবদুল মান্নান মজুমদার ফিরে গেলেন সেই একাত্তরের দিনগুলোতে; বললেন, ‘একটি স্বাধীন দেশ পাওয়ার জন্যই তো সেদিন যুদ্ধ করেছিলাম। প্রাণপণ লড়াই করেছি একটি লাল-সবুজ পতাকার জন্য। আর আজ সেই লাল-সবুজ পতাকা নিয়েই প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে আমার মেয়ে পৃথিবীর সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ এভারেস্টে পা রাখল। এ আনন্দ ভাষায় প্রকাশ করা যায় না।’ চশমার ফ্রেম কপালে তুলে চোখ মুছতে মুছতে বললেন, ‘এটা কেবল ওর একার নয়, শুধু আমাদের নয়, সারা দেশের মানুষের জয়।’ ততক্ষণে চোখ ভিজে উঠেছে আশুরা মজুমদারেরও।
prothom-alo
0 comments:
Post a Comment