ঢাকা শহরের আরও অনেক এলাকার প্রধান সড়কে, অলিগলিতে সক্রিয় ভিক্ষুক নিয়ন্ত্রণ গোষ্ঠী। দিনের যা আয় তার অর্ধেক দিতে হয় তাদেরকে। অসহায় ভিক্ষুক নিরুপায় হয়ে মেনে নেয় তাদের অত্যাচার। কিশোরগঞ্জের তাড়াইল উপজেলার পঙ্গু শামীম ভিক্ষা করে এক ভিক্ষুক গোষ্ঠীর নিয়ন্ত্রণে। রায়েরবাজার এলাকায় ভিক্ষা করে বরিশালের কুলসুম। ভিক্ষার টাকার ভাগ দিতে হয় স্থানীয় এক মাস্তান গ্রুপকে। একদিন ভাগ কম দেয়ায় পরদিন তাকে রাস্তায় বসতে দেয়নি। নিয়মিত ভাগ না দিলে মাস্তানরা এলাকা ছাড়া করার হুমকি দিয়েছে।
রাজধানীর ভিক্ষুকদের নিয়ে জরিপ করেছে সমাজকল্যাণ অধিদপ্তর। দশটি এনজিও’র মাধ্যমে জরিপ চালানো হয়। সমাজসেবা অধিদপ্তর পরিচালিত ওই জরিপে উঠে এসেছে নানা তথ্য। রাজধানী শহরে কেউ ভিক্ষা করে জীবন বাঁচানোর তাগিদে, কারও কাছে এটা ব্যবসা। কেউ ভিক্ষার টাকায় দিনের শেষে পেটের আহার জুটায়। কেউ ভিক্ষার টাকার কমিশনে মাছ-মাংস খায়। অনেক ভিক্ষুক আছে তারা ভিক্ষা করে একটি প্রভাবশালী চক্রের অধীনে। আয়ের টাকার বেশির ভাগ দিতে হয় তাদের। মাস্তানকে ভিক্ষার টাকার কমিশন না দিলে সে এলাকায় ভিক্ষা করা যায় না। আছে লেখাপড়া জানা ভিক্ষুক। এসএসসি, এইচএসসি পাস করে তারা ভিক্ষা করছে। কারও বাড়িতে জমি-জমা আছে, চাষের লাঙল আছে। অবসর সময়ে রাজধানীতে ভিক্ষা করতে আসে। অনেক ভিক্ষুক ঢাকা শহরে বাসা ভাড়া নিয়ে ভিক্ষা করে। দিনে ৫ শ’ টাকা পর্যন্ত আয়ের ভিক্ষুক আছে, আবার এমন আছে সারাদিন শেষে পেটের আহার জুটাতে পারে না।
ভিক্ষুক পুনর্বাসনে সরকার একটি পাইলট কর্মসূচি নিয়েছে। পুনর্বাসনের মাধ্যমে রাজধানীকে ভিক্ষুকমুক্ত করার কথা বলা হলেও বাস্তব চিত্র ভিন্ন। দশটি এনজিও’র মাধ্যমে শহরের দশটি জোনে জরিপ চালানো হয়। প্রত্যেক জোনে প্রতিটি এনজিও এক হাজার ভিক্ষুকের ওপর জরিপ চালায়। জরিপ কাজ শেষ হয়েছে গত বছরের ৩০শে সেপ্টেম্বর। তারপর ৫ মাস যাচ্ছে। পুনর্বাসন কাজে হাত দেয়নি সমাজসেবা অধিদপ্তর। অবশ্য অধিদপ্তর থেকে বলা হয়েছে, আইন ও সালিশ কেন্দ্র উচ্চ আদালতে রিট করার কারণে পুনর্বাসন কাজ আটকে আছে। জরিপকারী এনজিওগুলোর ধারণা, ঢাকা শহরে কম করেও দেড় লাখ ভিক্ষুক আছে। এদের সকলকে চিহ্নিত করে পুনর্বাসনের কোন পরিকল্পনা নেই সরকারের। চলতি অর্থবছরে ২০০০ ভিক্ষুক পুনর্বাসনে ৭ কোটি ৫৪ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। ১০ হাজার ভিক্ষুক চিহ্নিত করতে ব্যয় দেখানো হয়েছে ২৪ লাখ টাকা। একজন ভিক্ষুকের তথ্য সংগ্রহের জন্য একটি ফরম পূরণে খরচ পড়েছে ২৪০ টাকা। ভিক্ষুকদের মধ্যে যাদের বয়স ১২ বছরের মধ্যে তাদের পড়াশোনার ব্যবস্থা করা হবে। যাদের বয়স ১৩ থেকে ৫০ তাদেরকে ভোকেশনাল প্রশিক্ষণ দিয়ে কাজে লাগানো হবে। যাদের বয়স ৫০-এর বেশি তাদেরকে সরকারি আশ্রয় কেন্দ্রে রাখা হবে। জরিপে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী ১০ হাজার ভিক্ষুকের মধ্যে বেশির ভাগের বাড়ি ময়মনসিংহ জেলায়। দ্বিতীয় স্থানে বরিশাল। অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, ময়মনসিংহ, ঢাকা, বরিশাল ও জামালপুর জেলায় ভিক্ষুক জরিপ করা হবে। ভিক্ষাবৃত্তিতে নিয়োজিত জনগোষ্ঠীর পুনর্বাসন ও বিকল্প কর্মসংস্থান কর্মসূচির সমন্বয়কারী আবদুল মাবুদ জানান, ঢাকা শহরে আরও অনেক ভিক্ষুক আছে, তবে আমরা পাইলট প্রকল্প হিসেবে মাত্র ১০ হাজার ভিক্ষুকের ওপর জরিপ করেছি। তাদের মধ্য থেকে ২০০০ জনকে প্রথম পুনর্বাসন করা হবে। এর জন্য সরকারের পক্ষ থেকে বরাদ্দও পাওয়া গেছে। তবে কার্যক্রম শুরু করা যায়নি আইন ও সালিশ কেন্দ্রের একটি রিটের কারণে। আমরা দ্রুত জবাব দেবো। রিট আবেদনের ফয়সালা হলে কার্যক্রম শুরু হবে চলতি অর্থবছরেই। mzanib
0 comments:
Post a Comment