সিলেটে গত রোববার বাসে অগ্নিসংযোগের পর আটকে পড়া এক যাত্রীকে উদ্ধারে সহযাত্রীরা এগিয়ে গেলে দুর্বৃৃত্তরা এভাবেই হুংকার ছাড়ে। বাস থেকে নামতে গিয়ে আহত মকবুল হোসেন গতকাল সোমবার সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ওই ঘটনার বর্ণনা দেন।
দুর্বৃত্তদের বাধার মুখে আর কেউ ওই যাত্রীকে উদ্ধারে এগিয়ে যাওয়ার সাহস পায়নি। সবার চোখের সামনে তিনি আগুনে পুড়ে মারা যান। বাসের জানালা থেকে শুধু তাঁর পা দুটি ঝুলতে দেখা যায়।
মকবুলের বাড়ি সিলেটের দক্ষিণ সুরমার বদিকোনা এলাকায়। তিনি ওই বাসের যাত্রী ছিলেন। প্রাণ বাঁচাতে জানালা দিয়ে লাফিয়ে পড়লে তাঁর বাম পা ভেঙে যায়।
গতকাল হাসপাতালে গিয়ে আহত ব্যক্তিদের সঙ্গে আলাপ করে জানা যায়, ৪০ আসনের বাসের সবগুলো আসনে যাত্রী ছিল। এ ছাড়া ১৫-২০ জন যাত্রী দাঁড়িয়ে ছিল।
বীভৎস দৃশ্য: ওই বাস থেকে লাফিয়ে নামতে গিয়ে ঢাকার ডেমরার বাসিন্দা দুলাল হোসেনের (৩৫) একটি পা ভেঙে যায়। হাসপাতালের অর্থোপেডিক বিভাগের ৯ নম্বর ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন তিনি। দুলাল প্রথম আলোকে বলেন, ঢাকায় তাঁর স্ত্রী ও এক মেয়ে আছে। তিনি সিলেটের শাহ পরান বাহুবল এলাকায় থেকে ঘিয়ের ব্যবসা করেন। রোববার মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল থেকে হবিগঞ্জ সুপার এক্সপ্রেসে ওঠেন। দক্ষিণ সুরমার বদিকোনা এলাকায় পৌঁছালে পাঁচ থেকে ছয়টি মোটরসাইকেলে চড়ে আসা একদল যুবক বাসের গতি রোধ করে। যুবকেরা লাঠি ও ইট দিয়ে আঘাত করে বাসের জানালার কাচ ভাঙতে থাকে। এ সময় আতঙ্কিত যাত্রীরা বাস থেকে নামার চেষ্টা করলে যুবকেরা বাধা দেয়। একপর্যায়ে কয়েকজন যুবক চালকের আসনের সামনে পেট্রল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয়।
হাসপাতালের একই ওয়ার্ডে ৩১ নম্বর শয্যায় চিকিৎসাধীন মৌলভীবাজারের রাজনগর উপজেলার জাউয়া গ্রামে মুজিবুর রহমানেরও (৩১) বাঁ পা ভেঙে গেছে। ‘সবগুলা পশু। এভাবে কেউ পুড়িয়ে মানুষ হত্যা করতে পারে—এটা নিজে না দেখলে বিশ্বাস করতাম না।’ বলেন মুজিবুর।
পরিচয় মেলেনি তাঁর: গতকাল রাত নয়টা পর্যন্ত নিহত যাত্রীর পরিচয় মেলেনি। হবিগঞ্জ সুপার এক্সপ্রেসের চালক নজরুল ইসলাম বলেন, তাঁর বাসটি লোকাল। আগুনে পুড়ে মারা যাওয়া ওই যাত্রী সম্ভবত হবিগঞ্জ থেকে বাসে ওঠেন।
দক্ষিণ সুরমা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু শ্যামা মো. ইকবাল হায়াত জানান, ময়নাতদন্ত শেষে গতকাল সন্ধ্যায় সিলেটের মানিকপীর কবরস্থানে বেওয়ারিশ হিসেবে ওই যাত্রীর লাশ দাফন করা হয়েছে। সুরতহাল প্রতিবেদন ও ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনের সূত্র ধরে তাঁর সম্পর্কে খোঁজ নেওয়া হবে।
সাতটি মামলা: হবিগঞ্জ সুপার এক্সপ্রেসে অগ্নিসংযোগ ও যানবাহন ভাঙচুরের ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে দক্ষিণ সুরমা থানায় দুটি মামলা করেছে। এর একটি হত্যা মামলা। অপরটি সহিংসতা সৃষ্টির অভিযোগে করা হয়। এ ছাড়া ওই দিন নগরের ১৫টি স্থানে অর্ধশতাধিক যানবাহন ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় সিলেট কোতোয়ালি থানায় দুটি মামলা এবং সিলেট মহানগর পুলিশের অধীন শাহ পরান, বিমানবন্দর ও জালালাবাদ থানায় আরও তিনটি মামলা করা হয়। মোট সাতটি মামলায় সহস্রাধিক অজ্ঞাতপরিচয় মানুষকে আসামি করা হয়েছে।
সিলেট মহানগর পুলিশের কমিশনার অমূল্য ভূষণ বড়ুয়া বলেন, সব কটি থানায় মামলার সূত্রে পুলিশ তদন্ত শুরু করেছে। দুর্বৃত্তদের শনাক্ত করার চেষ্টা চলছে। prothom-alo
0 comments:
Post a Comment