ওয়েস্টার্ন কেপ পুলিশের মুখপাত্র ক্যাপ্টেন এফসি ফন উইকের বিবৃতি থেকে জানা গেছে, শনিবার রাত সোয়া নয়টায় কোনো একটা ঘটনা ঘটেছিল হোটেলে, এর পরই মৃত অবস্থায় পাওয়া যায় রোবাককে। ঘটনাটি কী, পুলিশ কীভাবে নিশ্চিত হলো এটা আত্মহত্যা, কীভাবেই বা আত্মহত্যা করলেন—তদন্তের স্বার্থে এসবের কিছুই জানায়নি পুলিশ। তবে জানা গেছে, রাতের খাবার খেয়ে হোটেলে ফিরে পুলিশের সঙ্গে কথা হয়েছিল তাঁর। ক্রিকেটের জটিল ব্যাপারগুলোকে সহজ করে তুলতেন যিনি, তাঁর মৃত্যুই কি না হলো এমন রহস্যময়!
ক্রিকেট লেখক হিসেবে বিখ্যাত, কিন্তু অনেকেই ভুলে যান ক্রিকেটার হিসেবেও খুব একটা খারাপ ছিলেন না রোবাক। ছেলেবেলায় সমারসেটের অনূর্ধ্ব-১৩ দলে যোগ দিয়েছিলেন লেগ স্পিনার হিসেবে। পরে হয়ে যান ওপেনিং ব্যাটসম্যান, অফ স্পিন বোলিংও করতেন। টেস্ট খেলার সৌভাগ্য হয়নি, তবে প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটে প্রায় দেড় যুগের ক্যারিয়ারে ৩৩৫ ম্যাচে ৩৭.২৭ গড়ে করেছেন ১৭৫৫৮ রান। চশমা পরে ব্যাট করতেন, ‘উইজডেন’ বর্ষসেরা ক্রিকেটার হয়েছিলেন ১৯৮৮ সালে। সমারসেটকে নেতৃত্বও দিয়েছেন বেশ কিছুদিন, তাঁর অধিনায়কত্বে খেলেছেন বোথাম-রিচার্ডস-গার্নারদের মতো গ্রেটরা। খেলোয়াড়ি জীবনেই লেখালেখির শুরু। ভিন্ন চোখে ক্রিকেট বিশ্লেষণ করে সবার চেয়ে আলাদা করে তোলেন নিজেকে, দ্রুতই উঠে যান শীর্ষে। ক্রিকেট নিয়ে লেখা তাঁর অনেক বই পেয়েছে দারুণ জনপ্রিয়তা। ধারাভাষ্যকারও হিসেবেও বেশ জনপ্রিয় ছিলেন। এবিসি রেডিওতে ধারাভাষ্য দিতেন নিয়মিতই, দিচ্ছিলেন চলতি সিরিজেও। ক্রিকেট ছাড়ার পর চলে যান অস্ট্রেলিয়ায়, থাকতেন দক্ষিণ আফ্রিকাতেও।
লেখনীতে যেমন, তেমনি তাঁকে এক দৃষ্টিতেই আলাদা করে চেনা যেত প্রেসবক্সেও। সব সময়ই মাথায় থাকত একটা হ্যাট। রসবোধ ছিল দারুণ, কথাবার্তায় ভীষণ আন্তরিক। রোবাকের মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়তেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে শোক জানিয়েছেন সাবেক-বর্তমান ক্রিকেটার, ধারাভাষ্যকার, সাংবাদিকসহ বিশ্বজুড়ে ক্রিকেট ব্যক্তিত্বরা। প্রায় সবারই একই কথা, ক্রিকেট লেখক হিসেবে যেমন অনন্য ছিলেন রোবাক, তেমনি মানুষ হিসেবেও ছিলেন অসাধারণ। অনেকেই অকুণ্ঠচিত্তে বলেছেন, কতটা শিখেছেন রোবাকের কাছ থেকে। একজন যেমন অস্ট্রেলিয়ার সাবেক অধিনায়ক ও ধারাভাষ্যকার ইয়ান চ্যাপেল, ‘আমি সব সময়ই নানা অজুহাতে ওর সঙ্গে কথা বলতে চাইতাম। ওর সঙ্গ উপভোগ করতাম, কারণ প্রতি মুহূর্তেই মনে হতো কিছু না-কিছু শিখছি। ব্যক্তিগত জীবনে একা থাকতে পছন্দ করত, কিন্তু প্রেসবক্সে ওর সঙ্গ ছিল সবার কাঙ্ক্ষিত, ওর মতামত ছিল অমূল্য।’
রোবাকের আত্মজীবনীর মুখবন্ধে জনপ্রিয় ধারাভাষ্যকার হার্শা ভোগলে লিখেছিলেন, ‘শচীনের জন্ম যেমন শুধু ক্রিকেট খেলার জন্যই, তেমনি রোবাকের জন্ম ক্রিকেট নিয়ে লেখার জন্য।’ রোবাক সব সময় বলতেন, ‘আমার জীবনে স্রেফ দুটি ভালোবাসা—ক্রিকেট আর ইংরেজি ভাষা।’ এই দুই ভালোবাসা তাঁর হাতে পেত অন্য এক মাত্রা। কোন ক্ষোভে বা হতাশায় তিনি এই মায়া কাটিয়ে এমন কঠিন সিদ্ধান্ত নিলেন কে জানে। এখন শুধু এটুকুই বলা যায়, বিদায় ক্রিকেট লিখিয়েদের টেন্ডুলকার! ওয়েবসাইট।
শ্রদ্ধাঞ্জলি
আমি সবসময়ই নানা অজুহাতে ওর সঙ্গে কথা বলতে চাইতাম। ওর সঙ্গ উপভোগ করতাম, কারণ প্রতি মুহূর্তেই মনে হতো কিছু না কিছু শিখছি
—ইয়ান চ্যাপেল
0 comments:
Post a Comment