আজ জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৯২তম জন্মদিন। ১৯২০ সালের এই দিনে গোপালগঞ্জ জেলার টুঙ্গিপাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন বঙ্গবন্ধু। তাঁর সাহসী, দৃঢ়চেতা, আপসহীন নেতৃত্ব ও বীরত্বপূর্ণ সংগ্রামে অনুপ্রাণিত হয়ে জেগে উঠেছিল নিপীড়িত পরাধীন বাঙালি জাতি। মুক্তিসংগ্রামে বুকের তাজা রক্ত ঢেলে তারা অর্জন করে স্বাধীনতা। সঠিক নেতৃত্ব ও জনগণের প্রতি অসীম মমত্ববোধের কারণে তিনি হয়ে উঠেছিলেন জাতির অবিসংবাদিত নেতা।
সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালির এবারের জন্মদিনটি সরকারিভাবে 'জাতীয় শিশু দিবস' হিসেবে পালিত হচ্ছে। একই সঙ্গে আজ সরকারি ছুটির দিন। এ দিনে নানা কর্মসূচি নিয়েছে সরকার, আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গ-সংগঠনসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক-সামাজিক সংগঠন। দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান বলেছেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্ম না হলে হয়তো বাংলাদেশের জন্ম হতো না। দিনটিকে জাতীয় শিশু দিবস হিসেবে পালনের উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়ে তিনি শিশুদের সুন্দর ভবিষ্যৎ এবং সুখী-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়তে দলমত নির্বিশেষে সবাইকে সম্মিলিতভাবে কাজ করার আহ্বান জানান।
আমাদের গোপালগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, রাষ্ট্রপতির পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ সকালে গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় গিয়ে তাঁর পিতা ও মহান এই বাঙালির সমাধিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ এবং তাঁর রুহের মাগফিরাত কামনায় ফাতেহা পাঠ করবেন। তিনি বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ার শপথ নিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার জন্য দেশবাসীর প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন। বাংলাদেশকে শিশুদের নিরাপদ আবাসভূমি হিসেবে পরিণত করার জন্য সবাইকে অঙ্গীকারবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
কলকাতায় ইসলামিয়া কলেজে পড়ার সময় বঙ্গবন্ধু হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী ও শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হকসহ তৎকালীন প্রথম সারির রাজনৈতিক নেতাদের সানি্নধ্যে আসেন। অসাম্প্রদায়িক চেতনায় বিশ্বাসী এই নেতা জনতার অধিকার আদায়ে পথে নামেন। বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন, চুয়ান্নর যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন, আটান্নর সামরিক শাসনবিরোধী আন্দোলন, ছেষট্টির ছয় দফা, ঊনসত্তরের গণ-অভ্যুত্থানসহ প্রতিটি গণতান্ত্রিক ও স্বাধিকার আন্দোলনে তিনি নেতৃত্ব দেন। এ জন্য তাঁকে বহুবার কারাবরণ করতে হয়। সহ্য করতে হয় নির্যাতন। তবু তিনি কখনো আপস করেননি।
১৯৪০ সালে সর্ব ভারতীয় মুসলিম ছাত্র ফেডারেশনে যোগদানের মধ্য দিয়ে তাঁর রাজনৈতিকজীবনের শুরু। ১৯৪৬ সালে তিনি কলকাতা ইসলামিয়া কলেজে (বর্তমানে মওলানা আজাদ কলেজ) ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। ১৯৪৯ সালে তিনি তৎকালীন আওয়ামী মুসলিম লীগের পূর্ব পাকিস্তান শাখার যুগ্ম সম্পাদক নির্বাচিত হন। ১৯৫৩ সালে তিনি সাধারণ সম্পাদক এবং ১৯৫৪ সালে যুক্তফ্রন্টের ব্যানারে ইস্ট বেঙ্গল লেজিসলেটিভ অ্যাসেম্বলির সদস্য নির্বাচিত হন।
একাত্তরের মার্চে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে শুরু হয় অসহযোগ আন্দোলন। ৭ই মার্চ রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) তিনি ঘোষণা করেন, 'এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।' সেদিন বাঙালি জাতিকে পাকিস্তানি শাসনের বিরুদ্ধে দুর্বার প্রতিরোধ গড়ে তোলায় ঐক্যবদ্ধ করেছিল এই ঐতিহাসিক ভাষণ। ২৫ মার্চ পাকিস্তানি সামরিক বাহিনী নিরস্ত্র বাঙালির ওপর হামলা চালায়। ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধুকে গ্রেপ্তার করে পাকিস্তানে নিয়ে যাওয়া হয়। ৯ মাসের সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে জন্ম হয় বাংলাদেশের। পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি স্বাধীন দেশে ফেরেন বঙ্গবন্ধু। ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট ঘাতকদের হাতে সপরিবারে নিহত হন তিনি।
জন্মদিন উপলক্ষে দেওয়া বাণীতে প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীদের বিচারের রায় কার্যকরের কথা উল্লেখ করে বলেন, রায় কার্যকরের মাধ্যমে বাঙালি জাতি কিছুটা হলেও দায়মুক্ত হয়েছে। সরকার ফাঁসির দণ্ডাদেশপ্রাপ্ত পলাতক বাকি আসামিদের দেশে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছে।
আজ ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে সারা দেশে দলীয় কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন এবং সকাল ৭টায় বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধার্ঘ্য অর্পণ। দুপুর ১২টায় বঙ্গবন্ধুর সমাধিসৌধ এলাকায় আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে এবং প্রধান অতিথির ভাষণ দেবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বিকেলে গণভবনে অনুষ্ঠিত হবে শিশু সমাবেশ। এ ছাড়া ১৮ মার্চ বিকেল ৩টায় বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে দলীয় আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে।
এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং স্থানীয় সরকারমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মদিন ও জাতীয় শিশু দিবস পালন উপলক্ষে দলের গৃহীত কর্মসূচি দেশবাসীর সঙ্গে যথাযোগ্য মর্যাদায় পালন করার জন্য সংগঠনের সব নেতা-কর্মীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
দিবসটি উপলক্ষে পটুয়া কামরুল হাসান আর্ট স্কুল আজ কেন্দ্রীয় পাবলিক লাইব্রেরির শওকত ওসমান স্মৃতি মিলনায়তনে বঙ্গবন্ধু শিশু চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতার আয়োজন করেছে।
0 comments:
Post a Comment