ভগ্ন হৃদয়ের সমীক্ষা

যে দম্পতির প্রথম সন্তান এক বছর বয়সের মধ্যে মারা যায়_ স্বাভাবিক সময়ের আগে তাদের মৃত্যু হয়। নতুন এক গবেষণায় চিকিৎসকরা এমন তথ্যই প্রকাশ করেছেন। গবেষণায় দেখা গেছে, আবেগের জায়গাগুলোয় মানুষ বড় ধরনের আঘাত পেলে তাদের বেঁচে থাকার স্বাভাবিক আকাঙ্ক্ষার মৃত্যু হয়। ‘ভগ্ন হৃদয়’ মানুষকে জীবনসঞ্জীবনী সুধা থেকে বঞ্চিত করে। যারা দাম্পত্য জীবনের শুরুতে বা মাঝপথে আকস্মিক কোনো দুর্ঘটনায় জীবনসঙ্গী হারিয়ে ফেলেন, তাদের বেলায় এমন বিয়োগান্ত ঘটনা ঘটতে পারে। প্রেমের ক্ষেত্রেও তাই। কাঙ্ক্ষিতজনকে না পেয়ে অনেকে ভিন্নপন্থায় জীবনকে নাটকীয়ভাবে বিদায় জানাতে চান। সঙ্গী হারানোর ব্যথা মানুষ এবং প্রাণিজগতে সমানভাবে ক্রিয়াশীল। তখন অনেকে হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে এমন কিছু করে বসেন যা আরও মর্মন্তুদ ঘটনার জন্ম দেয়। প্রিয়জন হারানোর শোক বয়ে বেড়ানোর যাতনা অনেকে ধারণ করতে পারেন না। চিকিৎসকরা বলছেন, সবার ইন্দ্রিয়ানুভূতি বা আবেগের সঞ্চারণ এক নয়। তাই মনোজগতে এর নেতিবাচক বা বিরূপ অভিঘাতের গভীরতাও সমান নয়।

বিশেষ করে যে মা প্রথম সন্তান হারান, সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ার প্রথম বছরের মধ্যে তার মৃত্যু ত্বরান্বিত হয়। সন্তানের বাবা বা যেসব মা সন্তান হারান না, তাদের চেয়ে অন্তত ২৫ বছর আগে মৃত্যু হয় তাদের। অর্থাৎ তাদের মৃত্যুঝুঁকি অন্যদের তুলনায় দেড়গুণ বেশি হয়। গবেষণার নিবন্ধ রচয়িতারা ইয়র্ক এবং স্টারলিং বিশ্ববিদ্যালয়ের (স্কটল্যান্ড) অধ্যাপক। গবেষকরা এ ব্যাপারে তাদের আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেছেন, দাম্পত্য বা প্রেমঘটিত বিচ্ছেদ বেদনা সইতে না পেরে অধিকাংশ ক্ষেত্রে আত্মহননের পথ বেছে নেয় বিচ্ছেদকাতর মানুষ। গবেষকরা বলছেন, মানুষের মনোজগতের ঘাত-প্রতিঘাত এত জটিল যে, এ নিয়ে তারা বহুদিন ধরে কাজ করেও ইতিবাচক কোনো ফল খুঁজে পাননি_ যে চিকিৎসা এসব ঘটনায় আক্রান্ত মানুষকে নতুন আশায় উদ্বেলিত করবে। নিরাময় হবে তাদের মনের গভীর ক্ষতগুলো।

১৯৭১ সাল থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত এ গবেষণা চলে ব্রিটেনে। স্কটল্যান্ড, ইংল্যান্ড এবং ওয়েলসে মৃত্যুর কারণ উদঘাটন করতে গিয়ে চিকিৎসা বিজ্ঞানে গবেষণারত অধ্যাপক-চিকিৎসকরা সমন্বিত যৌথ গবেষণায় এসব কারণ উদ্ঘাটন করতে সমর্থ হন। নিবন্ধে উল্লেখ করা হয়, নবজাতকের মৃত্যু বা ভূমিষ্ঠ হওয়ার সময় মৃত্যু বা জন্মের এক বছরের মধ্যে মৃত্যু_ এ তিন মৃত্যুর কারণ বাবা-মার ওপর সবচেয়ে বেশি মনোবৈকল্য বা বিষাদের ছায়া ফেলতে সক্ষম হয়। এ ক্ষেত্রে শিশুর মার মৃত্যু ইংল্যান্ড বা ওয়েলসের চেয়ে স্কটল্যান্ডে তুলনামূলক কিছুটা কম। দ্য মেইল।

সমকাল