২২ কোটি কিলোমিটার দূরের গ্রহ মঙ্গলে দ্রুততম সময়ে ঘুরে আসতে প্রয়োজন হবে দ্রুতগামী কোনো নভোযান। কিন্তু গবেষকেরা বলছেন, বর্তমানে রকেটের যে ইঞ্জিন ব্যবহার করা হয়, তাতে দ্রুততম সময়ে মঙ্গল গ্রহে ভ্রমণ করা সম্ভব নয়। যুক্তরাষ্ট্রের গবেষকেরা পারমাণবিক শক্তিনির্ভর মহাকাশযান তৈরির পরিকল্পনা করছেন। এক খবরে এ তথ্য জানিয়েছে পিসি ম্যাগ।
যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা প্রতিষ্ঠান নাসা ও ওয়াশিংটনভিত্তিক মহাকাশযান নির্মাতা প্রতিষ্ঠান এমএসএনডব্লিউ-এর গবেষকেরা ‘নিউক্লিয়ার ফিউশন’নির্ভর মহাকাশযান তৈরির প্রকল্প হাতে নিয়েছেন। গবেষকেরা আশা করছেন, তাঁদের তৈরি প্রযুক্তিটি সফল হলে দ্রুততম সময়ে মহাকাশ ভ্রমণ করা যাবে আর মহাকাশ ভ্রমণে খরচও হবে কম। এ প্রযুক্তি ব্যবহারে মহাকাশ ভ্রমণে মানুষের স্বাস্থ্যঝুঁকিও কমে যাবে।
গবেষকেরা ধারণা করছেন, বর্তমানে মঙ্গল ভ্রমণের জন্য যে রকেট ও জ্বালানি রয়েছে তাতে মঙ্গল ভ্রমণে চার বছরের বেশি সময় লাগবে আর খরচও হবে ১২০০ কোটি মার্কিন ডলার। কিন্তু নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবনে সফলতা এলে মাত্র ৩০ দিনেই মঙ্গলগ্রহ ঘুরে আসা যাবে।
বর্তমানে মঙ্গল গ্রহের বুকে আদি প্রাণের সন্ধানে ব্যস্ত রয়েছে নাসার পাঠানো রোবট যান ‘কিউরিওসিটি’। অবশ্য রহস্যময় লাল এ গ্রহটি এখনও নিজের গোপন রহস্য খুলে ধরে নি। তবে গবেষকেরা মঙ্গল পৃষ্ঠে প্রাচীন নদীর রেখা, নুড়ি পাথর ও পানি প্রবাহের প্রমাণ পেয়েছেন। তাঁরা আশা করছেন, এখানে কৃত্রিম পরিবেশ সৃষ্টি করে মানুষের বসতি গড়ে তোলা সম্ভব হবে।
মঙ্গল গ্রহে বসতি আর এ গ্রহটি জয় করা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই পরিকল্পনা করেছেন গবেষকেরা। গত শতকের ষাটের দশক থেকেই মঙ্গল গ্রহ অভিযানে যাওয়ার পরিকল্পনা করে আসছেন তাঁরা। কিন্তু পরিকল্পনার সঙ্গে বাস্তবের সে ব্যবধান থেকেই গেছে। বাস্তবে দেখতে গেলে গবেষকেরা এখনও পৃথিবীর কাছের কক্ষপথেই দাঁড়িয়ে রয়েছেন কারণ তাঁদের সফরের জন্য বাধা হয়ে আছে রাসায়নিক শক্তিতে চলা কম শক্তিধর রকেট ইঞ্জিন।
নাসার গবেষকেরা জানিয়েছেন, পারমাণবিক রকেট ইঞ্জিন তৈরি করা সম্ভব হলে দীর্ঘ মহাকাশ যাত্রার অনেক ধরনের বাধা দূর হয়ে যাবে। বিশেষ করে, মহাকাশের তেজস্ক্রিয়তা থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব হবে।
এদিকে, গবেষকেরা দ্রুততম সময়ে মঙ্গল ভ্রমণের প্রযুক্তি নিয়ে গবেষণায় ব্যস্ত থাকলেও থেমে নেই মঙ্গল যাত্রার প্রস্তুতি। যুক্তরাষ্ট্রের বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ইন্সপিরেশন মার্স ফাউন্ডেশন ২০১৮ সালে মঙ্গল গ্রহের কক্ষপথে মানুষ পাঠানোর পরিকল্পনা করেছে। এই অভিযাত্রায় ৫০০ দিনের। এ অভিযাত্রার যাওয়ার সুযোগ পাচ্ছেন এক মধ্যবয়সী দম্পতি।
নেদারল্যান্ডের মার্স ওয়ান নামের একটি প্রতিষ্ঠান ২০২৩ সাল নাগাদ মঙ্গল গ্রহে মানুষের বসবাস করার ‘আবাসন’ প্রকল্প নিয়ে কাজ করছে। প্রতিষ্ঠানটি ইতিমধ্যে মঙ্গল গ্রহে বসবাসে আগ্রহীদের একমুখী টিকেট সরবরাহ করার ঘোষণা দিয়ে স্বেচ্ছাসেবক সংগ্রহ করেছে।
গবেষকেরা আশা করছেন, দ্রুতগতির মহাকাশযান তৈরি করা সম্ভব হলে ৩০ দিনে মঙ্গলগ্রহে বেড়িয়ে আসার জন্য অনেকেই উৎসাহী হবেন।
0 comments:
Post a Comment