ধামইরহাট উপজেলা সদর থেকে আট কিলোমিটার উত্তর-পূর্বে বরেন্দ্র অঞ্চলের বিশাল এলাকাজুড়ে জগদ্দল বৌদ্ধবিহারের অবস্থান। ১ ডিসেম্বর থেকে ওই বিহারে প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের ছয়জন প্রশিক্ষিত শ্রমিক ও কর্মকর্তার তত্ত্বাবধানে স্থানীয় ৩০-৩৫ জন শ্রমিক খননকাজ শুরু করেন। ইতিমধ্যে পাওয়া গেছে ধ্যানী বুদ্ধমূর্তি, বিভিন্ন প্রাচীন মূর্তি ও বিশাল আকারের কালো প্রাচীন পাথর। গ্রানাইট পাথরের নির্মিত ১৬ ফিট স্তম্ভ। লিনটনে অলংকৃত (পাথরের বড় স্তম্ভে লাগানো বুদ্ধমূর্তি) বুদ্ধের মূর্তি। পাওয়া গেছে বিভিন্ন ধরনের মৃৎ পাত্রের ভগ্নাংশ। এসব সংরক্ষণ করে রাখছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
জগদ্দল বৌদ্ধবিহারে বৌদ্ধদের ছোট ২৮টি কক্ষ রয়েছে। ইতিমধ্যে ১২টি কক্ষ পূর্ণাঙ্গভাবে উন্মোচন করা হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, এই কক্ষগুলো ধর্মীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হিসেবে ব্যবহূত হতো। সেখানে পূজা-অর্চনা করার বেদিও আবিষ্কৃত হয়েছে। বৌদ্ধরা কীভাবে বসবাস করত বা পানীয় জলের কী ব্যবস্থা ছিল, সে বিষয়গুলো আবিষ্কৃত বা উদ্ঘাটিত হতে পারে বলে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহারের কাস্টডিয়ান মাহবুব-উল-আলম জানিয়েছেন।
মাহবুব-উল-আলম জানান, জগদ্দল বিহারের পশ্চিম বাহুর মধ্যস্থলে খননকাজ চলছে। এখানে খননকালে বেরিয়ে আসছে মূল মন্দির। সামনের দিকে বিশালকায় মিলনায়তনের অংশ, বৌদ্ধ ভিক্ষুদের কক্ষ। পূর্বমুখী মন্দিরটি প্রায় বর্গাকার। এর তিন দিকে প্রশস্ত প্রদক্ষিণ পথ রয়েছে। এই প্রদক্ষিণপথ হলঘরের সঙ্গে মিশেছে। মন্দিরের প্রবেশপথে রয়েছে তিনটি বিশাল আকারের গ্রানাইট পাথরখণ্ড। প্রবেশপথে বিশাল আকারের কালো পাথরের চৌকাঠ ব্যবহার করা হয়েছে।
তিনি আরও জানান, দেশে এখন পর্যন্ত এ ধরনের যত নিদর্শন পাওয়া গেছে, তার মধ্যে জগদ্দল বিহারেই সর্বাধিক কালো ও গ্রানাইট পাথর ব্যবহার করা হয়েছে। বৌদ্ধদের ধর্মীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হিসেবে এই জগদ্দল বৌদ্ধবিহারকে তারা ব্যবহার করেছে। তাদের সময়ে যে ভাষায় ধর্মীয় গ্রন্থগুলো রচিত হতো, জগদ্দল বিহার থেকে তা তিব্বতি ভাষায় অনুবাদ করে প্রচার করা হতো।
মাহবুব-উল-আলম জানান, যেখানে খননকাজ চলছে, এর চারপাশে এক বর্গকিলোমিটারজুড়ে ও জগদ্দল বিহারের আশপাশে বড় বড় অনেক মাটির ঢিবি রয়েছে। এই ঢিবিগুলোতে খননকাজ চালিয়ে যেতে পারলে বৌদ্ধদের আরও অনেক নিদর্শন আবিষ্কৃত হতে পারে বলে তিনি আশা করছেন।
জগদ্দল গ্রামের মানিক, বয়োবৃদ্ধ মোসলেম উদ্দিন জানান, তাঁরা বাপ-দাদার আমল থেকেই এই ঢিবিকে বটো রাজার বাড়ি হিসেবে জেনে আসছেন। খোঁড়াখুঁড়ি করার পর তাঁরা জানতে পারলেন এটা বৌদ্ধদের ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান।prothom-alo
0 comments:
Post a Comment