জেএসসি পরীক্ষায় এবার পাসের হার ৮২ দশমিক ৬৭ শতাংশ, যা গতবারের (৭১ দশমিক ৩৪ শতাংশ) চেয়ে ১১ দশমিক ৩৩ শতাংশ বেশি। এবার সবচেয়ে ভালো ফল হিসেবে বিবেচিত জিপিএ-৫ পেয়েছে ২৯ হাজার ৮৩৮ জন শিক্ষার্থী। গতবার জিপিএ-৫ পেয়েছিল আট হাজার ৫২ জন। এবার প্রায় সাড়ে তিন গুণ মেধাবী মুখ বেড়েছে।
গতকাল দেশের আটটি সাধারণ শিক্ষা বোর্ডের অধীনে জেএসসি এবং মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের অধীন জুনিয়র দাখিল সার্টিফিকেট (জেডিসি) পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা হয়। জেডিসিতে পাসের হার ৮৮ দশমিক ৭১ শতাংশ। এ পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়েছে এক হাজার ১৪ জন। সাধারণ ও মাদ্রাসা বোর্ড মিলিয়ে উত্তীর্ণের হার ৮৩ দশমিক ৭১ শতাংশ।
আনুষ্ঠানিকভাবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে বিকেল সাড়ে চারটায় ফল প্রকাশের কথা থাকলেও ফলাফল পাওয়ার জন্য শিক্ষার্থী আর অভিভাবকদের অপেক্ষা ছিল দুপুর থেকেই। বিকেলে ফল পাওয়ার পরই স্কুলগুলোতে শুরু হয় কিশোর শিক্ষার্থী আর অভিভাবকদের বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাস। নেচে-গেয়ে পরস্পরকে জড়িয়ে ধরে অভিনন্দন জানাতে থাকে শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীদের এই উচ্ছ্বাস ছুঁয়ে যায় সবাইকে। সারা বছর বকাঝকা খাওয়া সন্তানেরা অভিভাবকদের কাছে ধরা দিল কিশোর তারকা হয়ে। মিষ্টি বিতরণ করে সন্তানের আনন্দকে আত্মীয়-প্রতিবেশীর সঙ্গে ভাগ করে নিয়েছেন তাঁরা। প্রত্যাশিত ফলাফলে শিক্ষকেরাও শিক্ষকসুলভ আচরণের বাইরে এসে আনন্দে মেতেছেন।
সেরা হওয়ায় রাজধানীর রাজউক উত্তরা মডেল কলেজ, মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজ, ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজ, রেসিডেনসিয়াল মডেল কলেজসহ নামীদামি সব প্রতিষ্ঠানেই ছিল উৎসবের আমেজ। ফলাফলের এই উচ্ছ্বাস ছিল দেশের সব প্রান্তে। ইন্টারনেট, মুঠোফোনে ফল জেনে আত্মীয়স্বজনসহ সবাইকে জানিয়েছে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকেরা।
জেএসসিতে এবার সারা দেশের এক হাজার ৮২৭টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সব শিক্ষার্থী উত্তীর্ণ হয়েছে। গত বছর এ সংখ্যা ছিল ৮৬৩টি। কোনো শিক্ষার্থী উত্তীর্ণ হয়নি—এমন বিদ্যালয় এবার ১০৭টি, গতবার এমন বিদ্যালয় ছিল ২৭২টি।
পাঁচ মানদণ্ডে বাছাই করা সেরা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ঢাকা বোর্ডে শীর্ষে অবস্থান করছে রাজধানীর রাজউক উত্তরা মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজ। দেশসেরাও হয়েছে এ প্রতিষ্ঠান। গতবার তিনটি মানদণ্ডে প্রতি বোর্ডে সেরা ২০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বাছাই করা হয়েছিল।
বেলা তিনটায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে আনুষ্ঠানিকভাবে ফলাফল ঘোষণা করেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। তিনি বলেন, ‘যারা পাস করেছে তাদের এবং যারা পাস করেনি তাদেরও অভিনন্দন। যারা এবার পাস করতে পারেনি, তারা ভবিষ্যতে ভালো করবে। আমরা শিক্ষাকে এমন জায়গায় নিয়ে যেতে চাই, যেন কেউ ফেল না করে।’
সংবাদ সম্মেলনের আগে দুপুরে শিক্ষামন্ত্রীর নেতৃত্বে মন্ত্রণালয় ও বোর্ডের শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তারা গণভবনে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে ফলাফলের কপি হস্তান্তর করেন। প্রধানমন্ত্রী যশোরের একটি বিদ্যালয় ও একটি মাদ্রাসায় ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ফল প্রকাশ করেন এবং তাদের সঙ্গে কথা বলেন।
বিকেল সাড়ে চারটায় শিক্ষা বোর্ডগুলোর ওয়েবসাইট, পরীক্ষা কেন্দ্র, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং মুঠোফোনে খুদেবার্তার (এসএমএস) মাধ্যমে একযোগে ফল প্রকাশ করা হয়। এবার বিদ্যালয়গুলোতে ই-মেইলের মাধ্যমে ফল পাঠানো হয়। তবে দুপুরের পর থেকেই বিদ্যালয়গুলোতে ভিড় করতে থাকে পরীক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকেরা। প্রযুক্তির বদৌলতে অনেকে ঘরে বসেই ওয়েবসাইট ও মুঠোফোনের মাধ্যমেও ফল জেনেছে।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, এ বছর ঢাকা, রাজশাহী, কুমিল্লা, যশোর, চট্টগ্রাম, বরিশাল, সিলেট ও দিনাজপুর—এ আটটি সাধারণ শিক্ষা বোর্ডে জেএসসি পরীক্ষায় মোট ১৪ লাখ ৯০ হাজার ৪৫ শিক্ষার্থী অংশ নিয়ে পাস করেছে ১২ লাখ ৩১ হাজার ৮৮০ জন।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, বৃত্তি ও এক থেকে দুই বিষয়ে অকৃতকার্য শিক্ষর্থীদের বিষয়ে পরে সিদ্ধান্ত জানানো হবে।
গত ১ থেকে ২১ নভেম্বর পর্যন্ত জেএসসি ও জেডিসি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়।
পাসের হার বেশি বরিশাল বোর্ডে: জেএসসি পরীক্ষায় পাসের হার এবারও বেশি বরিশাল বোর্ডে, ৯৩ দশমিক ১৩ শতাংশ। এ বোর্ডে ৮২ হাজার ৯০৫ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে পাস করেছে ৭৭ হাজার ২১৩ জন। জিপিএ-৫ পেয়েছে এক হাজার ৮৮৬ জন।
পাসের হার কম চট্টগ্রাম বোর্ডে, ৭২ দশমিক ৬৫ শতাংশ। এ বোর্ডে এক লাখ ২৪ হাজার ২৬০ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে পাস করেছে ৯০ হাজার ২৭৫ জন। জিপিএ-৫ পেয়েছে দুই হাজার ১৭৬ জন।
ঢাকা বোর্ডে পাসের হার ৮১ দশমিক ৪৫ শতাংশ। এ বোর্ডে চার লাখ ৫০ হাজার ১৪৭ জনের মধ্যে উত্তীর্ণ হয়েছে তিন লাখ ৬৬ হাজার ৬৫৯ জন। সর্বাধিক জিপিএ-৫ এ বোর্ডে, পেয়েছে ১২ হাজার ২১ জন।
রাজশাহী বোর্ডে পাসের হার ৭৯ দশমিক ৮৮ শতাংশ। এক লাখ ৮৭ হাজার ৭৪১ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে পাস করেছে এক লাখ ৪৯ হাজার ৯৫৯ জন। জিপিএ-৫ পেয়েছে চার হাজার ২১২ জন।
কুমিল্লা বোর্ডে পাসের হার ৯১ দশমিক ২৫ শতাংশ। এক লাখ ৯২ হাজার ৯১৪ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে উত্তীর্ণ হয়েছে এক লাখ ৭৬ হাজার ৩৬ জন। জিপিএ-৫ পেয়েছে দুই হাজার ৩৯৬ জন।
যশোর বোর্ডে এক লাখ ৯৩ হাজার ৫০৫ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে উত্তীর্ণ হয়েছে এক লাখ ৫৪ হাজার ৫৬০ জন। পাসের হার ৭৯ দশমিক ৮৭ শতাংশ। জিপিএ-৫ পেয়েছে দুই হাজার ৭৫৪ জন।
সিলেট বোর্ডে ৯২ হাজার ৬৭৫ জনের মধ্যে উত্তীর্ণ হয়েছে ৭৭ হাজার ২৩৫ জন। পাসের হার ৮৩ দশমিক ৩৪ শতাংশ। জিপিএ-৫ পেয়েছে ৭৪৮ জন।
দিনাজপুর বোর্ডে এক লাখ ৬৫ হাজার ৮৯৮ জনের মধ্যে উত্তীর্ণ হয়েছে এক লাখ ৩৯ হাজার ৯৪৩ জন। পাসের হার ৮৪ দশমিক ৩৫ শতাংশ। জিপিএ-৫ পেয়েছে তিন হাজার ৬৪৫ জন। প্রথম আলো
0 comments:
Post a Comment