উপরিউক্ত এ ঘটনার বর্ণনা পাওয়া যায় অ্যাংলো-আইরিশ নারী লিলা উইংফিল্ডের হারানো একটি ডায়েরি থেকে। শতবর্ষ আগে দিল্লিতে আয়োজিত সেই অনুষ্ঠানে ব্রিটিশ-ভারতের গণ্যমান্য প্রায় সব ব্যক্তিই উপস্থিত ছিলেন। অতিথি, পর্যটক ও তাঁদের কর্মচারী, ভৃত্যসহ প্রায় আড়াই লাখ মানুষ শহরের আশপাশে তাঁবু খাটিয়ে অবস্থান করছিল। প্রথা অনুযায়ী এ ধরনের অনুষ্ঠানে দেশীয় রাজাদের (মহারাজা) প্রত্যেকের ব্রিটিশ রাজাকে সামনে থেকে তিনবার কুর্নিশ করে এবং পেছন না ফিরে প্রস্থানের মাধ্যমে আনুগত্য ও সম্মান প্রদর্শন করার কথা। কিন্তু রাজা জর্জের সামনে বরোদার গায়কোয়াড় (মহারাজা সয়াজি রাও) কেবল পৃষ্ঠপ্রদর্শন করেই ক্ষান্ত হননি, দরবার থেকে বেরিয়ে গিয়ে চরম ‘ঔদ্ধত্য’ প্রদর্শন করেন। ভারতবর্ষে তখন ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসন চরম অবস্থায়। সে সময় ব্রিটিশরাজের সামনে এ ধরনের আচরণ ইতিহাসে বিরল। এ ছিল এক স্বাধীনচেতা ভারতীয় মহারাজার সাহসী প্রতিবাদ।
লিলা উইংফিল্ড সেই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। তাঁর নাতনি জেসিকা ডগলাস-হোম সে কথা একটি বইয়ে লিখেছেন। এ ঘটনার বিবরণসংবলিত উইংফিল্ডের ডায়েরিটি হারিয়ে গিয়েছিল। বহু বছর পর ইংল্যান্ডের একটি পুরোনো বইয়ের দোকানে সেটি পাওয়া যায়। ভারত প্রসঙ্গে জেসিকা লিখেন, হায়দরাবাদের নিজামের পর বরোদার গায়কোয়াড়ই ছিলেন ব্রিটিশ আইন অমান্যকারী দ্বিতীয় মহারাজা। বরোদার ঐতিহাসিক মণিরত্নখচিত পোশাক পরে তিনি দিল্লির দরবারে গেলেও রাজাকে কুর্নিশ করার ঠিক পূর্বমুহূর্তে সেসব খুলে ফেলে অতি সাধারণ বেশে উপস্থিত হন। শামিয়ানায় গিয়ে তিনি কুর্নিশ সেরে রাজদম্পতিকে পৃষ্ঠপ্রদর্শন করে অবজ্ঞা ও উপেক্ষার ভঙ্গিতে হাতের ছড়ি ঘোরাতে ঘোরাতে বেরিয়ে চলে যান।
সেদিন মহারাজার এই স্বাধীনচেতা ‘ঔদ্ধত্যপূর্ণ’ আচরণে উপস্থিত সরকারি কর্মকর্তারা চরম ক্ষুণ্ন হয়েছিলেন। ওই ঘটনার পর থেকে ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষ গায়কোয়াড়কে একঘরে করে রাখে। অবশ্য পরে গায়কোয়াড় ওই ঘটনার জন্য নিজের ‘স্নায়বিক দুর্বলতা’কে দায়ী করে দুঃখ প্রকাশ করেছিলেন। বিবিসি অনলাইন। Prothom-alo
0 comments:
Post a Comment