আমির হোসেন বিয়ে করেছিলেন ২০০৪ সালে। স্ত্রী আওফা আবদুল্লাহর গর্ভে ২০০৬ সালে তাঁদের প্রথম সন্তান জন্ম নেয় যুদ্ধের ক্ষতচিহ্ন নিয়ে। ক্ষতিগ্রস্ত মস্তিষ্ক নিয়ে জন্ম নেওয়া ওই ছেলেশিশুটি মারা গেছে গত বছর। ২০০৭ সালে জন্ম নেওয়া দ্বিতীয় শিশুটিও স্বাভাবিক নয়। এ মেয়েশিশুর সারা শরীরের চামড়া ফুসকুড়িতে ভরা। তার একটি পা অপরটির চেয়ে বড়। আমির হোসেনের মুখে হতাশার ছাপ, ‘এটা আমাদের জন্য দুর্ভাগ্য। হয়তো আমরা বিয়ে করেছি একটা প্রতিকূল সময়ে ও প্রতিকূল স্থানে।’
এ শুধু আমির-আওফা দম্পতির অবস্থা নয়। এ দম্পতির মতো ইরাকের অধিকাংশ দম্পতির একই দশা। যুদ্ধবিধ্বস্ত ইরাক ছাড়ছে মার্কিন সেনারা। চলতি মাসেই তাদের সর্বশেষ দলটি দেশটি ত্যাগ করবে। কিন্তু তারা পেছনে ফেলে যাচ্ছে এক ধ্বংসস্তূপ—বুলেটের আঘাতে ঝাঁঝরা বাড়িঘর, বোমার আঘাতে বিধ্বস্ত অবকাঠামো, আর অসংখ্য ইরাকি শিশু, যারা পৃথিবীর আলো-বাতাসের প্রথম পরশ নিচ্ছে কোনো না কোনোভাবে বিকলাঙ্গ দেহে জন্ম নিয়ে।
২০০৩ সালে মার্কিন নেতৃত্বাধীন বাহিনীর হাতে সাদ্দাম হোসেন উৎখাতের পর মরু অধ্যুষিত প্রদেশ আনবারের ফালুজা ইরাকি প্রতিরোধ যোদ্ধাদের ঘাঁটিতে পরিণত হয়। ২০০৪ সালে সেখানে অন্তত দুটি বড় ধরনের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এসব ঘটনায় ইরাকি যোদ্ধাদের দমনে মার্কিন সেনারা নির্বিচারে ট্যাংক, যুদ্ধবিমান, হেলিকপ্টার গানশিপসহ ভারী সব যুদ্ধাস্ত্রের ব্যবহার করে। আর সেসব যুদ্ধাস্ত্র থেকে ছড়ানো বিষাক্ত রাসায়নিকের বলি সেখানে জন্ম নেওয়া আজকের শিশুরা।
ফালুজা হাসপাতালের শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ সামিরা আল-আনির মতে, ইরাক যুদ্ধের সবচেয়ে ভয়াবহ ফল পাওয়া যাচ্ছে এখন প্রতিদিনই। ২০০৫ সালের পর থেকে সেখানে বিকলাঙ্গ শিশু জন্মের হার দিন দিন বাড়ছেই। তিনি জানান, যুদ্ধের আগে সেখানে প্রতিদিন দু-তিনটি এ ধরনের শিশু তাঁরা পেতেন। কিন্তু যুদ্ধের পর তা আশঙ্কাজনকভাবে বেড়েছে।
ফালুজার বাসিন্দারা বলছেন, মার্কিন সেনাদের সমরাস্ত্রের যথেচ্ছ ব্যবহারের কারণেই এটা হচ্ছে। ২০০৪ সালের আগে এসব রোগ দেখা যায়নি। মার্কিন সেনারা সাদা ফসফরাস ব্যবহারের কথা স্বীকারও করেছে। সাদা ফসফরাস রাসায়নিক অস্ত্র হিসেবে বিবেচিত না হলেও, এটা এমন এক ধরনের রাসায়নিক, যার রয়েছে প্রচণ্ড দাহ্য ক্ষমতা। রয়টার্স। প্রথম আলো
0 comments:
Post a Comment